প্রায় ৯ বছর ধরে কার্ডিওলজি বিভাগ বন্ধ

তৈয়ব আলী সরকার, নীলফামারী: নীলফামারীর ছয় উপজেলা ছাড়াও পার্শ্ববর্তী প্রায় ২০ লাখ মানুষের চিকিৎসার জন্য নীলফামারীর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ২০১৫ সালে স্থাপন করা হয় কার্ডিওলজি (হƒদরোগ) বিভাগ। তবে আজও চিকিৎসক সংকটের কারণে কার্যক্রম শুরু হয়নি। ফলে জেলার হƒদরোগীরা রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হয়। যার দূরত্ব ৫৬-৫৭ কিলোমিটার। এ কারণে রাস্তায় মারা যায় অনেক রোগী। ফলে সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে স্থানীয়রা।

সূত্র জানায়, ওই সময় সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম নীলফামারী সফরে এসে এলাকাবাসীর দাবির মুখে উন্নত চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে হƒদরোগের আলাদা দুটি ওয়ার্ড স্থাপনের নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশ মোতাবেক ১০ শয্যার ওয়ার্ডের জন্য ডি-ফেসিলেটর মেশিন দুটি, কার্ডিয়াক মনিটর ২০টি স্থাপন করা হয়। যার মূল্য প্রায় কোটি টাকার ওপর। প্রায় ৯ বছর বিভাগটি তালাবদ্ধ থাকায় মহামূল্যবান যন্ত্রপাতি জরাজীর্ণ হচ্ছে।

সরেজমিন জানা যায়, জনবল কাঠামো অনুযায়ী, হাসপাতালে চিকিৎসকের পদ ৫৮টি। এর মধ্যে ২৩ জন চিকিৎসকের পদই শূন্য। মাত্র ৩৫ জন চিকিৎসক দিয়ে চলছে সেবা কার্যক্রম। নার্স ও দ্বিতীয় শ্রেণি স্টাফের পদ আছে ১৫১টি। এর মধ্যে ছয়জনের পদ খালি রয়েছে। তৃতীয় শ্রেণি স্টাফের পদ আছে ৪০টি। এর মধ্যে ২২ জনের পদ খালি থাকায় ১৮ জন দিয়ে পুরো হাসপাতাল চালাতে হচ্ছে। এ ছাড়াও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর মঞ্জুরিকৃত পদ রয়েছে ২৪ জন, সেখানে কর্মরত রয়েছে ১৮ জন। বাকি ছয়জন না থাকায় বিপাকে পড়েছে কর্তৃপক্ষ।

অপরদিকে, নবনির্মিত সাততলা ভবনে দীর্ঘদিনেও চিকিৎসা কার্যক্রম চালু না হওয়ায় পুরোনো বিল্ডিংয়ে গাদাগাদি করে মাটিতে শুয়ে সেবা নিচ্ছেন রোগীরা। ফলে ছারপোকার কামড়ে অতিষ্ঠ রোগী। ওই ভবনে তিনতলা পর্যন্ত কার্যক্রম শুরু হলেও বাকি চারতলায় রয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগসহ নানা সমস্যা। পুরো হাসপাতালজুড়ে নেই বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। নিরাপত্তার জন্য আনসার, আউট সোর্সিং কর্মচারী নিয়োগ প্রয়োজন।

অপরদিকে, কার্ডিওলজি, অর্থপেডিক, চর্ম ও যৌন রোগের চিকিৎসক না থাকায় আন্তঃবিভাগ ও বহির্বিভাগে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ রোগী। পাশাপাশি কার্ডিওলজি বিভাগটি প্রায় ৯ বছর ধরে বন্ধ থাকায় জরাজীর্ণ হয়েছে মহামূল্যবান যন্ত্রপাতি। এ ছাড়া এক্স-রে, আলট্রাসনোগ্রাম, ইসিজি, অ্যানেসথেসিয়া, সি-আরম, ডেন্টাল ইউনিট, ডায়াথার্মি, অটোক্লেবসহ ৩৯ মেশিন জোড়াতালি দিয়ে চলছে এসব যন্ত্রপাতি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক কর্মকর্তা জানান, আলট্রাসনোগ্রাম, ইসিজি, অ্যানেসথেসিয়া, সি-আরম, ডেন্টাল ইউনিট, মাইক্রোসকোপ, অটোএনালাইজার, ডায়াথার্মি ও অটোক্লেব মেশিনসহ ৩৯টির মধ্যে ২১টি যন্ত্রপাতি বিকল হয়ে পড়ে আছে। বাইরে এসব পরীক্ষায় অতিরিক্ত টাকা গুনতে হয় রোগীদের।

জেলা সদরের খোকশাবাড়ী ইউনিয়নের বেলতলী গ্রামের আমিনুর রহমান (৫৫) বলেন, বুকের ব্যথায় আক্রান্ত হয়ে গত রবিবার দুপুরে নীলফামারী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হই। জরুরি বিভাগের চিকিৎসক বলেন, পুরো হাসপাতালে হƒদরোগের একজন চিকিৎসক। আপনি রংপুরে নিয়ে যান। তিনি বলেন, টাকার অভাবে এখানেই চিকিৎসা নিচ্ছি।

হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) মো. গোলাম রসুল রাখি বলেন, ‘১০ শয্যার ইউনিট চালাতে একজন বিশেষজ্ঞ মেডিকেল কর্মকর্তাসহ ১০ চিকিৎসক ও ২০ জন নার্স প্রয়োজন। এ ছাড়াও আইসিইউ এবং সিসিইউ প্রয়োজন। কিন্তু কিছুই নেই এখানে। প্রতিদিন দু’একজন রোগীকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠাতে হয়। তাদের চিকিৎসা দেয়ার সাধ্য নেই আমাদের।’

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবু-আল-হাজ্জাজ বলেন, ‘এই ইউনিটটি চালাতে একজন হƒদরোগ বিশেষজ্ঞ লাগবে এবং অন্যান্য সাপোর্টও লাগবে। তবে একজন কার্ডিয়াক চিকিৎসক মাসখানেক আগে যোগদান করেছে। এই ইউনিটটি চালুর জন্য আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর চিঠি করেছি।  আশা করছি, শিগগিরই এটার ব্যবস্থা হবে। চিকিৎসক সংকটের বিষয়টিও ওপরে জানানো হয়েছে।’

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০