শেয়ার বিজ ডেস্ক: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) গত শুক্রবার জানিয়েছে, বিশ্বে চলতি বছর ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ রেকর্ড উচ্চতার কাছাকাছি পৌঁছে যেতে পারে। সেজন্য সংস্থাটি বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধিকে কিছুটা দায়ী করেছে, যা মশা বিস্তারের সহায়ক পরিবেশ তৈরি করছে। খবর: রয়টার্স।
ডব্লিউএইচওর তথ্য অনুযায়ী, পৃথিবীতে ডেঙ্গুর বিস্তার বাড়ছে। ২০০০ সালে যত মানুষ মশাবাহিত এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিল, সেই সংখ্যা আটগুণ বেড়ে ২০২২ সালে ৪ দশমিক ২ মিলিয়ন বা ৪২ লাখে উন্নীত হয়েছে।
চলতি বছরের মার্চে সুদানের রাজধানী খার্তুমে প্রথমবারের মত ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে বলে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এদিকে ইউরোপে রোগীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। পেরুর বেশিরভাগ অঞ্চলে ডেঙ্গুর কারণে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে।
গত জানুয়ারিতে ডব্লিউএইচও সতর্ক করে বলেছিল, গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রোগগুলোর মধ্যে বর্তমানে ডেঙ্গুই বিশ্বে সবচেয়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে, যা মহামারিতে পরিণত হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
ডব্লিউএইচওর গ্রীষ্মমণ্ডলীয় রোগ বিভাগের বিশেষজ্ঞ ড. রমন ভেলাউধন জেনিভায় সাংবাদিকদের বলেন, বিশ্বের প্রায় অর্ধেক মানুষ এখন ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে রয়েছে।
২০১৯ সালে ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়েছিল বিশ্বের ১২৯টি দেশে। সে বছর সব মিলিয়ে ৫ দশমিক ২ মিলিয়ন বা ৫২ লাখ মানুষের ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার খবর এসেছিল, যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ।
ড. রমন ভেলাউধন বলেন, এ বছর ডেঙ্গু যেভাবে ছড়াচ্ছে, তাতে বিশ্বে রোগীর সংখ্যা ৪০ লাখ ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে কি না তা নির্ভর করছে এশিয়ার দেশগুলোয় বর্ষা মৌসুম দীর্ঘায়িত হবে কি না তার ওপর।
চলতি বছরে দুই আমেরিকা মহাদেশ মিলিয়ে এরই মধ্যে ৩০ লাখের বেশি রোগী শনাক্ত হয়েছে। দক্ষিণ আমেরিকার বলিভিয়া, প্যারাগুয়ে ও পেরুর পরিস্থিতি উদ্বেগজনক।
সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে ডেঙ্গুর সবচেয়ে বাজে প্রাদুর্ভাবের মুখোমুখি হয়েছে আর্জেন্টিনা। সেখানে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার বিস্তার ঠেকাতে রেডিয়েশন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। রেডিয়েশন দিয়ে ডিএনএ’তে পরিবর্তন এনে মশার বংশবিস্তারের ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়া হচ্ছে, তারপর সেগুলো ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে প্রকৃতিতে।
ভেলাউধন বলেন, দক্ষিণ আমেরিকা ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক এবং আশা করি এশিয়ার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে। বর্তমানে বিশ্বে যে পরিমাণ ডেঙ্গু রোগী আছেন, এই রোগটির বিস্তার রোধ করা না গেলে চলতি বছরই রেকর্ড সংখ্যক মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হবেন। সামনের দিন গুলোয় হয়তো ডেঙ্গুকে মহামারিও ঘোষণা করতে পারি আমরা।
ডব্লিউএইচও বলছে, আক্রান্ত রোগীদের যে পরিসংখ্যান রয়েছে, তাতে অধিকাংশ রোগীই আক্রান্ত হওয়ার পর জ্বর, মাংসপেশিতে ব্যথা প্রভৃতি উপসর্গে ভুগছেন। অনেকের আবার দেহে কোনো উপসর্গ নেই, কিন্তু প্লাটিলেট আশঙ্কাজনক পর্যায়ে নেমে গেছে। এই আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে অন্তত এক শতাংশ মারা গেছেন। রোগীর যে সংখ্যা সরকারের খাতায় আসে, তা মোট সংক্রমণের একটি অংশমাত্র।
উষ্ণ আবহাওয়া এডিস মশার দ্রুত বংশবৃদ্ধি এবং তাদের দেহের ভেতরে ভাইরাসের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করে। পাশাপাশি নগরায়ণ, পণ্য পরিবহন ও মানুষের চলাচল, দুর্বল পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা মশার বিস্তারে সহায়ক।
উত্তর গোলার্ধের বিভিন্ন দেশে যে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, তা ডেঙ্গুর বিস্তার বাড়িয়ে দেবে কি না জানতে চাইলে ডব্লিউএইচওর ব্রিফিংয়ে ভেলাউধন বলেন, এখনই তা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, তাপমাত্রা ৪৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠলে বংশবৃদ্ধির চেয়ে এ মশার মৃত্যু বেশি হওয়ার কথা। কিন্তু মুশকিল হল এডিস মশা বংশবৃদ্ধি করে ছায়াচ্ছন্ন জায়গায় পরিষ্কার পানিতে, যেখানে তাপমাত্রা তত বেশি বাড়ে না।
ভেলাউধন বলেন, ঘুমানোর সময়ে মশারির ব্যবহার এবং বাসাবাড়ি ও অফিস-আদালতে পানি জমতে না দেওয়াÑএগুলো হয়তো খানিকটা সুরক্ষা দিতে পারে, কিন্তু এই রোগটি ঠেকানোর সবচেয়ে কার্যকর পন্থা হলো এডিস মশা ও সেটির প্রজনন ক্ষেত্র সম্পূর্ণ ধ্বংস করা।