নারীর শরীরে অবাঞ্ছিত লোম

অবাঞ্ছিত লোমের কারণে অনেক নারী বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হন। চিকিৎসার পরিভাষায় এ সমস্যাকে বলা হয় হারসুটিজম। বলা হয়, ১৫-৪৫ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে পাঁচ থেকে ১০ শতাংশ এতে আক্রান্ত হন। এ সমস্যার কারণে ছেলেদের মতো ঠোঁটের ওপর ও থুতনিতে, গালের দুই পাশে, বুকে, ওপর পিঠে, পেটে ও ঊরুতে লোম গজাতে পারে।

কারণ পুরুষের শরীরে অল্প পরিমাণে ইস্ট্রোজেন ও নারীর রক্তে অল্প পরিমাণে টেস্টোস্টেরন হরমোন থাকে। যদি কোনো কারণে এ দুটি হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয় অর্থাৎ নারীর শরীরে পুরুষালি হরমোন টেস্টোস্টেরন বেড়ে যায় তাহলে কিছু সমস্যা দেখা দেয়। এমনই এক সমস্যা শরীরের বিভিন্ন স্থানে অবাঞ্ছিত লোম গজানো।

পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম বা পিসিওএস হলে এ রকম হারসুটিজম দেখা দিতে পারে। কখনও কখনও এটা বংশগত হয়। আবার জাতিগতভাবে যারা ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে বসবাস করেন, তাদের অনেক বেশি হারসুটিজম হয়। এ ছাড়া কিছু জš§বিরতিকরণ পিল, মৃগী রোগের ওষুধ ও স্টেরয়েড-জাতীয় ওষুধের কারণে হারসুটিজম হতে পারে।

থাইরয়েড, প্রোল্যাকটিন বা স্টেরয়েড হরমোনের ভারসাম্যহীনতার জন্য শরীরে অবাঞ্ছিত লোম দেখা যায়। আবার ডিম্বাশয় বা অন্য কোনো হরমোন গ্রন্থির টিউমার হলেও তা থেকে প্রচুর পরিমাণে টেস্টোস্টেরন নিঃসৃত হয়। ফলে অনেক বেশি পরিমাণ লোম শরীরে দেখা দেয়।

জটিলতা: হারসুটিজম থেকে নানা জটিলতার উদ্ভব হতে পারে। যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ মাত্রার কোলেস্টেরল, ফ্যাটি লিভার। ঋতুচক্র অনিয়মিত বা বন্ধ হতে পারে। দীর্ঘদিন মাসিক বন্ধ থাকলে জরায়ু ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। গর্ভপাত বা বন্ধ্যত্বের শিকার হতে পারেন। অনেক সময় অতিরিক্ত ব্রণ, পুরুষের মতো টাক পড়া বা মাথার দুই পাশ থেকে চুল পড়ে যেতে থাকে।

চিকিৎসা: চিকিৎসার একটি অপরিহার্য অঙ্গ হচ্ছে খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপন পদ্ধতির পরিবর্তন। এ লক্ষ্যে ওজন নিয়ন্ত্রণে আনতে হবে। উচ্চ ক্যালরিযুক্ত, উচ্চ শর্করাযুক্ত তৈলাক্ত খাবার বন্ধ করতে হবে। প্রাকৃতিক ও অপ্রক্রিয়াজাত খাবার, যেমন শাকসবজি, ফলমূল, মাছ-মাংস, দুধ, ডিম পর্যাপ্ত পরিমাণে খেতে হবে। রোজ আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা হাঁটতে হবে। অনেক সময় পিসিওএস হলে মেটফরমিন ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। এটি মূলত ডায়াবেটিসের ওষুধ, তাই অনেকে বিভ্রান্ত হন। কিন্তু এ রোগে ইনসুলিন অকার্যকারিতা বা রেজিস্ট্যান্স থাকে, সে জন্য মেটফরমিন ব্যবহƒত হয়। এ ছাড়া অ্যান্টি এন্ড্রোজেন বা জš§নিয়ন্ত্রণ বড়ি ব্যবহার করা হয়। কিছু ক্রিম বা লেজার পদ্ধতিও ব্যবহƒত হয়।

ডা. রেজওয়ানা সোবহান

সহকারী অধ্যাপক, এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ

এনাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০