বন্যা ও পাহাড়ধসে তিন জেলায় ছয়জনের মৃত্যু

শেয়ার বিজ ডেস্ক :বন্যা ও পাহাড়ধসে চট্টগ্রাম বিভাগের তিন জেলায় ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। বান্দরবানে পাহাড়ধসে মা-মেয়েসহ ৩ জনের মৃত্যু হয়। এছাড়া কক্সবাজারের রামুতে বন্যার পানিতে ডুবে এক শিশু এবং পেকুয়ায় সাপের কামড়ে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় বানের পানিতে ডুবে মারা গেছেন এক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র। গতকাল মঙ্গলবার এ ঘটনা ঘটে। এদিকে টানা সাত দিনের বৃষ্টিতে কয়েক লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

আমাদের বান্দরবান প্রতিনিধি জানান, বান্দরবানে সাতদিন ধরে অবিরাম বর্ষণে পাহাড়ধসে মা-মেয়ে দুজন এবং আলীকদমে পানিতে ডুবে একজনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া বন্যায় পানিতে ভেসে গিয়ে নাইক্ষ্যংছড়িতে ম্রো সম্প্রদায়ের একজন এবং টংকাবর্তীতে ১ জন নিখোঁজ রয়েছে। পাহাড়ধসে কালাঘাটা গুদারপাড় এলাকায় পাহাড়ধসে মা-মেয়ে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা হলেন নূর নাহার (৪২) ও সাবুকননেছা (১৪)। অপরদিকে আলীকদমে বন্যায় পানিতে ডুবে একজনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতের নাম পাওয়া যায়নি।

এদিকে পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ছাত্রাবাস থেকে ৩৪ জন শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করেছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। দুর্যোগ পরিস্থিত মোকাবিলায় সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। বিদ্যুতের সাবস্টেশনগুলো পানিতে ডুবে যাওয়ায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন রয়েছে ৩ দিন ধরে পুরো জেলা। নেটওয়ার্ক সেবা কার্যক্রমও বন্ধ রয়েছে। গতকাল মঙ্গলবারও অবিরাম বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে জেলার সাতটি উপজেলায়। তবে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে যাওয়ায় বন্যার পানি কিছুটা কমতে শুরু করেছে। তবে এখনও কয়েক লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে জেলা সাতটি উপজেলায়।

এদিকে পরিস্থিতি মোকাবিলায় বান্দরবান জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে সেনাবাহিনীর ও প্রশাসন জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় বান্দরবান ৬৯ সেনা রিজিয়নের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল গোলাম মো. মহিউদ্দিন, জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন, সদর জোন কমান্ডার লে. কর্নেল মাহমুদুল হাসান, সদর উপজেলা ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী কর্মকর্তা নারগিস সুলতানাসহ প্রশাসন ও সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে আমাদের রাঙামাটি প্রতিনিধি জানান, টানা সাতদিনের বৃষ্টিতে রাঙামাটিতে বড় কোনো পাহাড়ধসের ঘটনা না ঘটলেও প্রায় দুই শতাধিক স্থানে ছোট-বড় ধস ও ভাঙনের খবর পাওয়া গেছে। মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত জেলার ২৩৫টি স্থানে এসব ভাঙন বা ধসের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন।

রাঙামাটির অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম জানান, এসব ধসের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩৮১টি বসতঘর। যার মধ্যে রয়েছে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ১০টি ঘরও। এসব ঘটনায় কোনো প্রাণহানি না হলেও আহতের সংখ্যা ১০।

সকালেও শহরের রিজার্ভমুখসহ কয়েকটি স্থানে পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় পাহাড়ের মাটি বসতঘরের ভেতর ঢুকে পড়ে। খবর পেয়ে কোতোয়ালি থানার একটি দল দ্রুত সেখানে পৌঁছে ১৭টি পরিবারের ৬০ জনকে উদ্ধার করে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে যায়। জেলার ২৪২টি আশ্রয়কেন্দ্রে এ মুহূর্তে অবস্থান করছেন সাড়ে তিন হাজার মানুষ।

আমাদের কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, কক্সবাজারের রামুতে বন্যার পানিতে ডুবে এক শিশু এবং পেকুয়ায় সাপের কামড়ে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে রামুর রাজারকুল ইউনিয়নের মৌলভীপাড়ায় শিশুটি এবং পেকুয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের হরিণাফাঁড়ি এলাকায় ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট দুই ইউএনও।

নিহত শিশুটির নাম সামিয়া (২), সে সৌদি প্রবাসী মৌলভী ওবাইদুল হকের মেয়ে। সাপের কামড়ে নিহত ব্যক্তির নাম নাছির উদ্দিন (৫৫)। পেকুয়া আন্নর আলী মাতবরপাড়া এলাকার মৃত আলী আহমদের ছেলে নাছির উদ্দিন স্থানীয় বাজারে ক্রোকারিজের ব্যবসা করতেন।

শিশুটির মা উম্মে হাবিবার বরাত দিয়ে রামুর ইউএনও ফাহমিদা মুস্তফা জানান, বাড়ির উঠানে বন্যার পানির কারণে ঘরের ভেতরেই খেলা করছিল সামিয়া। খেলতে খেলতেই একপর্যায়ে সে উঠানের দিকে চলে যায় এবং ডুবে মারা যায়।

অন্যদিকে পেকুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম জানান, টানা বৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যায় ব্যবসায়ী নাছির উদ্দিনের বসতবাড়ি ডুবে গেছে। সকালে ঘর থেকে বের হয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়ার পথে একটি বিষাক্ত সাপ তাকে কামড় দেয়। দ্রুত তাকে পেকুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

আমাদের চট্টগ্রাম প্রতিনিধি জানান, চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায় বানের পানিতে ডুবে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র মারা গেছেন। মঙ্গলবার দুপুরে আমিরাবাদ ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের জনকল্যাণ এলাকায় বাড়ির কিছু দূরে ছাত্রটির লাশ উদ্ধার করে স্থানীয়রা। নিহত জুনায়েদ ইসলাম জারিফ (২২) বেসরকারি বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার প্রকৌশল বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

আমিরাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এসএম ইউনুস জানান, বসতঘরে পানি উঠে যাওয়ায় গভীর রাতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে জারিফ নিরাপদ স্থানে যাচ্ছিলেন। এ সময় পানির স্রোতে পড়ে তিনি তলিয়ে যান। দুপুরে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০