নিজস্ব প্রতিবেদক: এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা নির্ধারিত সূচিতে শুরু হবে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেছেন, কিছু শিক্ষার্থী বিক্ষোভ করলেও পরীক্ষা পেছানোর কোনো ‘সুযোগ নেই’।
আগামী ১৭ আগস্ট এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হবে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) প্রণীত ২০২৩ সালের পুনর্বিন্যস্ত সিলেবাসে সব বিষয়ে পূর্ণ নম্বরে পরীক্ষা হলেও তথ্যপ্রযুক্তি (আইসিটি) পরীক্ষা ১০০ নম্বরের পরিবর্তে ৭৫ নম্বরে হবে।
আসন্ন এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা ‘সুষ্ঠু, নকলমুক্ত ও ইতিবাচক’ পরিবেশে সম্পন্ন করতে গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে জাতীয় মনিটরিং ও আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা শেষে এক ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান শিক্ষামন্ত্রী।
তিনি বলেন, পরীক্ষা পেছানোর কোনো সুযোগ নেই। কিছু শিক্ষার্থী এটি পেছানোর দাবি করেছে। তাদের দাবিগুলো যৌক্তিক নয়। এখনও সময় আছে। তারা এখনও পড়াশোনা করলে ভালো করবে। আমি আশা করব, তারা বিক্ষোভ না করে পরীক্ষা দেবে।
ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করার কারণ দেখিয়ে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা পেছানোর দাবি নিয়ে গত দু’দিন ধরে ঢাকায় বিক্ষোভ করছে একদল শিক্ষার্থী। পেছানোর পাশাপাশি ১০০ নম্বরের পরিবর্তে পরীক্ষা ৫০ নম্বরে নেয়ার দাবিও তুলছে তারা।
শিক্ষামন্ত্রী জানান, তথ্যপ্রযুক্তি (আইসিটি) ছাড়া সব বিষয়ের পরীক্ষা ১০০ নম্বরে হবে। আইসিটি পরীক্ষা হবে ৭৫ নম্বরে। এর মধ্যে ২৫ নম্বর থাকবে ব্যবহারিকে, বাকি ৫০ নম্বরের তত্ত্বীয় পরীক্ষা নেয়া হবে। ৫০ নম্বরের মধ্যে ২০ নম্বর থাকবে এমসিকিউ আর ৩০ নম্বরের রচনামূলক পরীক্ষা হবে।
তবে এবার শিক্ষার্থীদের উত্তর দেয়ার ‘অপশন’ বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে বলে জানান দীপু মনি। তিনি বলেন, ২০ নম্বরের এমসিকিউয়ে ২৫টি প্রশ্ন থাকবে। ২০টির উত্তর দিতে হবে। আর রচনামূলক অংশে আগে ৮টি প্রশ্ন থেকে ৫টির উত্তর দিতে হতো। এবার ৮টি থেকে ৩টির উত্তর দিতে হবে। অর্থাৎ অপশন অনেক বেড়ে গেল। এতে শিক্ষার্থীদের সুবিধা হবে এবং তাদের পরীক্ষা দেয়া সহজ হবে।
এমসিকিউ অংশের উত্তর দিতে হবে ২৫ মিনিটের মধ্যে। আর রচনামূলক অংশে জন্য ২ ঘণ্টা সময় পাবেন শিক্ষার্থীরা। আগে রচনামূলকের জন্য ২ ঘণ্টা ৩৫ মিনিট এবং এমসিকিউ অংশের জন্য ২৫ মিনিট সময় দেয়া হতো।
১৪ আগস্ট থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর সব কোচিং বন্ধ
আসন্ন এইচএসসি পরীক্ষা ‘গুজবমুক্ত ও নকলমুক্ত পরিবেশে সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে’ অনুষ্ঠানের জন্য আগামী ১৪ আগস্ট থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সব কোচিং বন্ধ থাকবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কোচিং মানে সব ধরনের কোচিং। কোনো কোচিং সেন্টারই খোলা রাখা যাবে না। খোলা রাখলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
প্রাকৃতিক দুর্যোগে নির্দিষ্ট অঞ্চলের পরীক্ষা বন্ধ থাকবে
এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা চলাকালে দেশের কোনো অঞ্চলে ভারী বর্ষণ বা বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে সেই অঞ্চলের পরীক্ষা বন্ধ রাখা হবে বলে জানিয়েছেন দীপু মনি। তিনি বলেন, ‘যদি পরিস্থিতি খারাপ হয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দেয়, তবে আমরা সবার পরীক্ষা বন্ধ রাখব না। যে অঞ্চলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দেবে, সেখানে পরীক্ষা বন্ধ রাখব।’
চলতি বছরে ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ১৩ লাখ ৫৯ হাজার ৩৪২ জন শিক্ষার্থী এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় বসবে। পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্র ৬ লাখ ৮৮ হাজার ৮৮৭ জন এবং ছাত্রী ৬ লাখ ৭০ হাজার ৪৫৫ জন। ২ হাজার ৬৫৮টি কেন্দ্রে তাদের পরীক্ষা নেয়া হবে।
২০২২ সালে ২ হাজার ৬৪৯টি কেন্দ্রে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১২ লাখ ৩ হাজার ৪০৭ জন। সেই হিসাবে এবার পরীক্ষার্থী বেড়েছে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৯৩৫ জন এবং কেন্দ্র বেড়েছে ৯টি।
নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে এবার মোট পরীক্ষার্থী ১১ লাখ ৮ হাজার ৫৯৪ জন। তাদের মধ্যে বিজ্ঞানে ২ লাখ ৫৫ হাজার ৫১২ জন, মানবিকে ৬ লাখ ৪০ হাজার ৮৭৬ জন, ব্যবসায় শিক্ষার ২ লাখ ১২ হাজার ২০৬ জন। এছাড়া মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ৯৮ হাজার ৩১ জন এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ১ লাখ ৫২ হাজার ৭১৭ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেবেন।
বাংলাদেশে ২০১০ সাল থেকে ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে এসএসসি এবং এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হয়ে আসছিল। কিন্তু মহামারির মধ্যে সেই রেওয়াজে ছেদ পড়ে। ২০২০ সালে পরীক্ষা না নিয়েই শিক্ষার্থীদের সনদ দেয়া হয়। এরপর ২০২১ ও ২০২২ সালে পরীক্ষা নেয়া হয় সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে। ২০২২ সালে বন্যার কারণে পরীক্ষা আরও পিছিয়ে যায়। নভেম্বরে হয়েছিল সেই পরীক্ষা।
এবার পূর্ণাঙ্গ সিলেবাসে জুলাইয়ে পরীক্ষা শুরুর সিদ্ধান্ত হলেও তা পিছিয়ে যায় সিলেবাস শেষ না হওয়ার কারণে।
মানতে হবে যেসব নির্দেশনা
এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা সুচারুভাবে সম্পন্নের লক্ষ্যে কিছু নির্দেশনার কথা জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
পরীক্ষা শুরুর কমপক্ষে ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষার হলে প্রবেশ করতে হবে। অনিবার্য কারণে কোনো পরীক্ষার্থীকে এর পরে প্রবেশ করতে দিলে তার নাম, রোল নম্বর, প্রবেশের সময়, বিলম্ব হওয়ার কারণ রেজিস্ট্রারে লিপিবদ্ধ করে ওই দিনই সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ডে প্রতিবেদন দিতে হবে।
পরীক্ষা শুরুর ২৫ মিনিট আগে এসএমএসের মাধ্যমে প্রশ্নপত্রের সেট কোড সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে দেয়া হবে; কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছাড়া অন্য কেউ মোবাইল ফোন/ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবেন না। শুধু ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবেন, তবে সেটা হতে হবে এমন ফোন, যাতে ছবি তোলা যায় না।
পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি (যেমন পরীক্ষার্থী, কক্ষ পর্যবেক্ষক, মন্ত্রণালয়ের কেন্দ্র পরিদর্শন টিম, বোর্ডের কেন্দ্র পরিদর্শন টিম, জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের পরিদর্শন টিম, নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য ছাড়া) অন্য কেউ কেন্দ্রে প্রবেশ করতে পারবে না।
এছাড়া ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
বিশেষভাবে সক্ষম পরীক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা
দৃষ্টি প্রতিবন্ধী, সেরিব্রালপালসিজনিত প্রতিবন্ধী এবং যাদের হাত নেই, এমন প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থী স্ক্রাইব (শ্রুতি লেখক) সঙ্গে নিয়ে পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে। এ ধরনের এবং শ্রবণ প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থীরা অতিরিক্ত ২০ মিনিট সময় পাবেন পরীক্ষায়।
প্রতিবন্ধী (অটিস্টিক, ডাউনসিনড্রোম, সেরিব্রালপালসিতে আক্রান্ত) পরীক্ষার্থীদের অতিরিক্ত ২০ মিনিট সময় দেয়া হবে। শিক্ষক/অভিভাবক/সাহায্যকারীর বিশেষ সহায়তায় পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ পাবেন তারা।