প্রখ্যাত চিত্রশিল্পী এসএম সুলতানের ৯৯তম জন্ম বার্ষিকী আজ। তিনি ১৯২৩ সালের ১০ ডিসেম্বর নড়াইল জেলার মাছিমদিয়া গ্রামে জš§গ্রহণ করেন। তার পুরো নাম শেখ মোহাম্মদ সুলতান। বাবা-মা আদর করে নাম রেখেছিলেন লাল মিয়া। ১৯২৮ সালে তিনি নড়াইল ভিক্টোরিয়া কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হন। ১৯৩৩ সালে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় বিদ্যালয়ে তার আঁকা ছবি দেথে তৎকালীন জমিদার ধীরেন্দ্রনাথ রায়সহ সবাই মুগ্ধ হন। কৈশোরে বাবার সহযোগী হিসেবে তিনি রাজমিস্ত্রির কাজ শুরু করেন। কাজের ফাঁকে তিনি আঁকাআঁকি শুরু করেন। সে সময়েই পেন্সিল স্কেচের মাধ্যমে শিল্পী হিসেবে সুলতানের প্রথম আত্মপ্রকাশ। সে সময় থেকে সুলতানের ইচ্ছা তিনি কলকাতায় গিয়ে ছবি আঁকা শিখবেন। কলকাতার কাশিপুরে নড়াইলের জমিদার বাড়িতে থেকে জমিদারপুত্র অরুণ রায়ের সহযোগিতায় ১৯৪১ সালে তিনি কলকাতার আর্ট কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় অবতীর্ণ হন। পরীক্ষায় প্রথম স্থান লাভ করলেও প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি না থাকায় ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন। পরে শহীদ সোহরাওয়ার্দীর হস্তক্ষেপে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান তিনি। শিক্ষাজীবন অসমাপ্ত রেখেই ১৯৪৪ সালে তিনি ভারত ভ্রমণে বেরিয়ে পড়েন। ১৯৪৬ সালে কাশ্মীর থেকে চলে যান সিমলায়, সেখানে তার প্রথম চিত্র প্রদর্শনী হয়। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের লাহোরে ও পরে করাচিতে অবস্থান করেন। ১৯৫০ সালে চিত্রশিল্পীদের এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দেয়ার জন্য সুলতান যুক্তরাষ্ট্রে যান এবং নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন, শিকাগো, বোস্টন এবং এরপর লন্ডনে তার ছবির প্রদর্শনী করেন। দেশে-বিদেশে প্রায় ২০টি চিত্র প্রদর্শনী শেষে ১৯৫৩ সালে তিনি দেশে ফিরে আসেন। নড়াইলে ফিরে তিনি শিশুশিক্ষায় মনোনিবেশ করেন। শিশুদের জন্য তিনি ‘শিশুস্বর্গ’ ও ‘চারুপীঠ’ প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়া নন্দন কানন নামের একটি প্রাইমারি ও একটি হাইস্কুল এবং একটি আর্ট স্কুলও প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি বিভিন্ন গ্রামে ঘুরে ঘুরে যুদ্ধের ছবি আঁকেন। ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি তার প্রথম একক প্রদর্শনীর আয়োজন হয়। ১৯৮১ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় এসএম সুলতানকে ‘ম্যান অব অ্যাচিভমেন্ট’ সম্মাননা প্রদান করে। বাংলাদেশ সরকার চিত্রশিল্পী এসএম সুলতানকে স্বাধীনতা পুরস্কার ও একুশে পদকে ভূষিত করে। ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি তাকে ‘আর্টিস্ট অব রেসিডেন্ট’ ঘোষণা করে। ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা