ধর্মঘটের ১০০ দিন সমঝোতায় আসেনি হলিউডের কোনো পক্ষ

শেয়ার বিজ ডেস্ক: হলিউডে লেখক ও অভিনেতাদের ধর্মঘট ১০০তম দিন পূর্ণ করেছে গত বুধবার। দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও এখনও কোনো সুরাহা খুঁজে পায়নি দুই বিবদমান পক্ষ। খবর: রয়টার্স।

রাইটার্স গিল্ড অব অ্যামেরিকা (ডব্লিউজিএ) ও হলিউডের বড় স্টুডিগুলোর মধ্যে লেখকদের ক্ষতিপূরণ, লেখকদের জনবল বৃদ্ধি ও স্ট্রিমিং থেকে প্রাপ্ত অর্থের অংশ পাওয়া নিয়ে আলোচনার অচলাবস্থা থেকে গত ২ মে ধর্মঘট শুরু হয়।

লেখকরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ব্যবহার সীমিত করার দাবিও করেন, কেননা তাদের সৃজনশীলতার স্থান দখল করতে পারে এই ধরনের প্রযুক্তি।

সিনেমার বক্স অফিস কভিড-১৯ মহামারির আগের অবস্থায় ফিরে না যাওয়া, লাভের মুখ দেখতে হিমশিম খাওয়া স্ট্রিমিং সার্ভিস ও টিভি থেকে ক্রমশ কমতে থাকা আয়ের মাঝে স্টুডিও কর্তারাও পথ খোঁজার চেষ্টা করছেন।

‘আমাদের জন্য এটি একেবারে নতুন পরিস্থিতি’, ওয়ার্নার ব্রাদার্স ডিসকভারির (ডব্লিউবিডিও) প্রধান নির্বাহী ডেভিড জ্যাসল্যাভ গত সপ্তাহে বিনিয়োগকারীদের এ কথা বলেছিলেন। লেখক ধর্মঘট নির্মাণাধীন সিনেমা ও ডিজিটাল কন্টেন্ট সময়মতো মুক্তির ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে বলে সতর্কবার্তা দিয়েছে কোম্পানিটি।

লেখকদের সঙ্গে একাত্ম পোষণ করে অভিনেতাদের সংগঠন স্ক্রিন অ্যাকটরস গিল্ড (এসএজি) ১৪ জুলাই থেকে ধর্মঘট শুরু করে। ফলে টিভি সিরিজ ও সিনেমার নির্মানকাজ স্থবির হয়ে পড়ে। এর আগে ১৯৬০ সালে সবশেষ লেখক ও অভিনেতাদের যৌথ ধর্মঘট দেখেছিল হলিউড।

সংকট কবে কাটবে সেটাও নির্দিষ্ট করে বলতে পারছে না কোনো পক্ষ। গত সপ্তাহে স্টুডিওগুলোর সংগঠন এএমপিটিপি ও ডব্লিউজিএ-এর মধ্যে আলোচনায়ও কোনো অগ্রগতি হয়নি। ওই দিনই দুই পক্ষের ওই আলোচনা থেকে তথ্য ফাঁস হওয়ার কথা জানিয়ে ১১ হাজার ৫০০ সদস্যকে বার্তা পাঠায় ডব্লিউজিএ।

এএমপিটিপি ও ডব্লিউজিএ উভয় সংগঠনই এ বিষয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে কোনো মন্তব্য জানায়নি। সংকট সমাধানে এএমপিটিপির পদক্ষেপের সমালোচনাও করেছেন ডব্লিউজিএর সদস্যরা।

জনপ্রিয় টিভি সিরিজ ‘শিকাগো হোপ’-এর অন্যতম লেখক ডন প্রেস্টউইচ বলেন, ‘আমাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ও নতুন চুক্তি না হওয়া পর্যন্ত আমরা পথেই আছি। তবে এএমপিটিপি যেমন আচরণ করছে তাতে আমরা হতাশ। তাদের উদাসীনতা একরকম চরম নিষ্ঠুরতার পর্যায়ে চলে গেছে।’

অনেকে এ তিন মাস দীর্ঘ ধর্মঘটকে শ্রেণি বৈষম্যের সঙ্গেও তুলনা করেছেন। অনেক লেখক স্টুডিও কর্মকর্তাদের অত্যাধিক সুযোগ-সুবিধার দিকেও ইঙ্গিত করেন।

ওয়াল্ট ডিজনির প্রধান নির্বাহী বব আইগার কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করেছেন। নতুন চুক্তি অনুসারে তিনি যে বার্ষিক প্রণোদনা পাবেন সেটি তার বেতনের পাঁচ গুণ। আইগার লেখকদের দাবিকে ‘বাস্তবসম্মত নয়’ বলে মন্তব্য করেছিলেন।

ডব্লিউজিএ সদস্য ও লেখক জেমি পেরি বলেন, ‘আমরা জিততে পারব না এটা ভেবে আমি হতাশ নই। স্টুডিওগুলোর লোভ ও নিষ্ঠুরভাবে তারা যা করছে ও তারা ভুলভাবে যা করছে সেটা জানতে পেরে আমি হতাশ।’

লেখক সেলিয়া ফিনকেস্টেইন বলেন, তারা আমাদের অভুক্ত রাখতে চান এবং তারা চান, আমরা যেন বিভক্ত হয়ে পড়ি।

অতীতের ধর্মঘটের মতো, এবারের ধর্মঘটেও হলিউডের সিনেমা বিতরণের নতুন পদ্ধতির আয় থেকে লেখকরা তাদের প্রাপ্য অংশ বুঝে নিতে চান।

১৯৬০ সালের প্রথম ধর্মঘট হয়েছিল টেলিভিশনে পুরোনো সিনেমা প্রদর্শন থেকে লেখক-অভিনেতাদের লভ্যাংশের দাবি নিয়ে। এর দুই দশক পর, ১৯৮৫ সালে, ক্রমবর্ধমান হোম ভিডিও বাজার থেকে রাজস্বের অংশের দাবিতে চাকরি ছাড়েন অনেক লেখক।

সবশেষ ২০০৭-০৮ সালে যে ১০০ দিনের ধর্মঘট হয়েছিল, তার অন্যতম ইস্যু ছিল নিউ মিডিয়া থেকে গিল্ডের সুরক্ষা। যার মধ্যে ছিল চলচ্চিত্র এবং টিভি ডাউনলোডের পাশাপাশি বিজ্ঞাপন-সমর্থিত ইন্টারনেট পরিষেবার থেকে পাওয়া লভ্যাংশ।

চলমান ধর্মঘটের মূল ইস্যুগুলোর একটি হলো স্ট্রিমিং সার্ভিসগুলো থেকে লভ্যাংশ পাওয়া। একই সঙ্গে এআই প্রযুক্তির ব্যপক ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞার দাবিটিও গুরুত্ব পেয়েছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০