দেশে প্রতিবছর ছয় বছরের কম বয়সী অনেক শিশু ভিটামিন এ-এর অভাবে দৃষ্টিশক্তি হারায়। এই ভিটামিন শিশুর দৈহিক ও মানসিক বিকাশ এবং রোগ প্রতিরোধক শক্তি হিসেবে বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
ভিটামিন এ-এর অভাব প্রকট হয় যেসব কারণে: জন্মের পরপর শিশুকে বুকের শালদুধ এবং ছয় মাস বুকের দুধ না দেয়া। দীর্ঘ সময় ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ খাবার খেতে না দেয়া। চর্বি বা ফ্যাট-জাতীয় খাবার, যেমন তেল একেবারে কম খাওয়ানো। হাম, ঘনঘন ডায়রিয়া ও শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণ হলে। যদি কৃমি হয়। প্রোটিন-ক্যালরি ঘাটতিজনিত অপুষ্টিতে ভুগলে।
ভিটামিন এ-এর অভাবে যা হতে পারে: ক. শিশু রাতে ভালো না দেখলে, কিংবা কাছের কোনো জিনিস হাত দিয়ে খুঁজতে থাকলে বুঝতে হবে তার শরীরে ভিটামিন এ-এর অভাব শুরু হয়েছে। চোখের ভেতরটা শুকিয়ে যায়। এমনকি কাঁদলে অনেক সময় চোখের পানি বের হয় না। চোখের পর্দা ঘোলাটে হয়ে যায় এবং কালো মণির ওপর একধরনের সাদা সাদা দাগ পড়ে। শিশুর চোখের মণি ধীরে ধীরে পুরোটা সাদা হয়ে যায় এবং শিশু সম্পূর্ণ অন্ধ হয়ে যায়। একে বলে জেরপথ্যালমিয়া; খ. ত্বক শুষ্ক ও খসখসে হয়ে অনেক সময় ব্যাঙের চামড়ার মতো হয়ে উঠতে পারে; গ. ঘনঘন সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। বিশেষ করে শ্বাসনালি ও মূত্রনালির সংক্রমণ; ঘ. শিশু ঠিকমতো বাড়ে না, মৃত্যুঝুঁকি বাড়ে। ভিটামিনের অভাবে অন্ধ হওয়া প্রতি দুটি শিশুর একটি এক মাসের মধ্যে মারা যায়।
প্রতিরোধের উপায়: ১. সন্তান জন্ম নেয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যে প্রসূতি মাকে দুই লাখ ইউনিটের এক ডোজ ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানো; ২. শিশুকে বুকের শালদুধসহ কমপক্ষে পূর্ণ দুই বছর বুকের দুধ পান করানো; ৩. ভিটামিন এ-সমৃদ্ধ খাবার, যেমন সবুজ ও রঙিন শাকসবজি, লালশাক, কচুশাক, গাজর, পেঁপে, মিষ্টিকুমড়া, আম, মলা মাছ, ডিমের কুসুম ইত্যাদি; ৪. গর্ভবতী ও প্রসূতি মাকে পুষ্টি ও শিশুর সুস্বাস্থ্যের জন্য ভিটামিন এ-সমৃদ্ধ সবুজ শাকসবজি এবং হলুদ ফলমূল খেতে হবে; ৫. এক থেকে ছয় বছরের শিশুকে বছরে দুবার ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানো।
প্রয়োজনে ভিটামিন এ ক্যাপসুলের চিকিৎসা: এই অসুখে চার সপ্তাহের মধ্যে রোগী ভিটামিন এ ক্যাপসুল না খেয়ে থাকলে বয়স অনুযায়ী নির্দিষ্ট ডোজ বা মাত্রার ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানো। যেমনÑ ছয় মাসের নিচে পাঁচ হাজার আইইউ, ছয় থেকে ১১ মাসের এক লাখ আইইউ (নীল রঙের ক্যাপসুল) ও এক বছরের ওপরে দুই লাখ আইইউ (লাল রঙের ক্যাপসুল)। দুই লাখ আইইউ একটি ক্যাপসুলে আট ফোঁটা ভিটামিন এ থাকে। রাতকানা, বিটটস স্কট, জেরফথ্যালমিয়াÑতিন ডোজ, যথাক্রমে প্রথম, দ্বিতীয় ও ১৪ তম দিন। হামÑদুই ডোজ প্রথম ও দ্বিতীয় দিন। ডায়রিয়া, শ্বাসতন্ত্রের প্রদাহÑএক ডোজ প্রতিবার অসুখের পর। মারাত্মক অপুষ্টি এক ডোজ।
অধ্যাপক ডা. প্রণব কুমার চৌধুরী
সাবেক বিভাগীয় প্রধান, শিশুস্বাস্থ্য বিভাগ
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল