খোরাসানের এক আমির তার পার্শ্ববর্তী রাজ্যের সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করেন এবং যুদ্ধের প্রস্তুতি সম্পন্ন করে রওনা দেন।
আমিরের ব্যক্তিগত ভোজনের জন্য প্রায় ৩০০ উট পরিবহনের জন্য লাগত। বিশাল বহর নিয়ে আমির যুদ্ধে যায় এবং পরাজিত হয়ে বন্দি হয়। বন্দি অবস্থায় খোরাসানের আমিরের সঙ্গে ছিলেন তার ব্যক্তিগত রাঁধুনি। তিনি রাজবন্দি হিসেবে ভালো আচরণ পাচ্ছিলেন বিপরীত রাজ্যের রাজার কাছ থেকে। আমির তার সঙ্গে থাকা রাঁধুনিকে বললেন তার খিদে পেয়েছে খাবারের ব্যবস্থা করতে। রাঁধুনি চারপাশ খুঁজে তেমন কিছুই পেল না, শুধু একটুকরো গোশত ছাড়া, রাঁধুনি সেই টুকরোটা একটি পাতিলের মধ্যে সিদ্ধ করতে দিলেন। খোরাসানের আমির যে তাঁবুর মধ্যে বন্দি ছিলেন তার চারপাশে একটি কুকুর ঘোরাঘুরি করছিল। হঠাৎ কুকুরটি পাতিলের ভেতর মুখ ঢুকিয়ে দেয় এবং তার মাথা আটকে যায়। এর ফলে কুকুরটি পাতিলসহ দিগি¦দিকশূন্য হয়ে দৌড় দেয়। এ ঘটনা দেখে আমির অট্টহাসিতে ফেটে পড়েন। এমন বিপদসংকুল অবস্থায় আমিরের এমন বালখিল্যতা দেখে একজন প্রহরী প্রশ্ন করলেন আমির সাহেব আপনার এত হাসির কারণ কী? তখন আমির বললেনÑ ‘ঞযরং াবৎু সড়ৎহরহম, রঃ ঃড়ড়শ ঃযৎবব যঁহফৎবফ পধসবষং ঃড় ঃৎধহংঢ়ড়ৎঃ সু শরঃপযবহ; হড়,ি ড়হব ফড়ম রং বহড়ঁময ঃড় পধৎৎু রঃ ধষষ ধধিু’.
খোরাসানের আমিরের যুদ্ধে যাওয়া এবং তার পরিণতি নিয়ে তার দার্শনিক মনোভাব, বর্তমান সময়ের সঙ্গে কতটা প্রাসঙ্গিক বলেই ধারণা। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় বাংলাদেশের গ্রামগঞ্জের, শহরের মেধাবী শিক্ষার্থীরা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয় দেশবরেণ্য গবেষক এবং শুদ্ধচিত্তের একজন মানুষ হতে; যাদের হাত ধরে শিক্ষা, সংস্কৃতি, সমাজ ও রাষ্ট্রের উন্নয়ন ও অগ্রগতি বহমান থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে তার ভেতরে যে প্রতিভা ও মেধার ফল্গুধারা বহমান তা উত্তাল ঢেউ হয়ে জ্ঞানের সমুদ্রে মিশে যাবে। এ যে হাজারো স্বপ্ন নিয়ে মেধাবী তরুণরা ভর্তি হয় বিশ্ববিদ্যালয়ে। তারা যখন স্বপ্নের বিদ্যাপীঠে পা দেয় তখন তারা বাস্তবতা উপলব্ধি করে। এ দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে ভুল রাজনীতি, অনিয়ম এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কারিকুলাম তাদের স্বপ্ন পূরণে ব্যর্থ। বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই গবেষণার জন্য যথেষ্ট বাজেট ও সুযোগ নেই স্বাভাবিক নাগরিক সুবিধা। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসে যখন তারা দেখে একটি থাকার ব্যবস্থা করতে গিয়ে তার কত ত্যাগ ও সংগ্রাম করতে হচ্ছে। খাবারের কথা নাই-বা বললাম।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার আগে মেধাবীরা যে চোখ ভর্তি স্বপ্ন নিয়ে এসেছিল সেটির অকাল মৃত্যু হয়। তখন প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর অন্তর থেকে খোরাসানের সেই আমিরের মতো উচ্চারিত হয়-ঞযরং রং যড়ি সধহু ফৎবধসং ও যধফ নবভড়ৎব ধফসরংংরড়হ, নঁঃ হড়ি ড়হষু ড়হব রং ঃড় ভরহরংয মৎধফঁধঃরড়হ ংড়সবযড়ি ্ ও ধিহঃ ঃড় মড় ড়ঁঃ.
গণতন্ত্র নিয়েও সাধারণ মানুষের এ ধারণা। সবাই গণপ্রজাতন্ত্রী স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিল, যেখানে জনগণের আশা-আকাক্সক্ষা প্রতিফলিত হবে। দুর্নীতি, শোষণ, অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি, জুলুম অন্যায় অত্যাচার থাকবে না। মানুষের থাকবে বাকস্বাধীনতা সে নিজের কথা বলতে পারবে রাষ্ট্রের কাছে সমাজের কাছে। আমাদের স্বপ্ন পূরণ হয়েছিল আমরা একটি স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছিলাম কিন্তু একটা প্রবাদ আছে ‘স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা আর কঠিন’।
সেই প্রবাদ সত্য হয়েছে আমরা যে স্বপ্নের বাংলাদেশ চেয়েছিলাম সেটি দুর্নীতিবাজ ও স্বার্থান্বেষী মহল আমাদের স্বপ্নকে ছিনতাই করেছে। সরকারি অফিসে নাগরিক সেবা সহজে পাওয়া যায় না। ঘুষ এবং লাল ফিতার দৌরাত্ম্যে সেবাগ্রহীতারা প্রতিটি মানুষ যেন অসহায়, নির্বাক, নিষ্পেষিত। আমরা অনিয়ম আর দুর্নীতির বেড়াজালে এমনভাবে আটকে গেছে, এখন মনে হয় নাগরিক সুবিধার কোনো কিছুর দরকার নেই নিজের মতো করে দুমুঠো ভাত খেয়ে বেঁচে থাকতে পারাটাই সৌভাগ্যের।
আকাশ সমান প্রত্যাশা নিয়ে একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিল আপামর জনতা; কিন্তু স্বার্থান্বেষী মহল, মুনাফাখোর এবং দুর্নীতিবাজদের দৌরাত্ম্যের কারণে বলতে হয়-ঙহপব ঁঢ়ড়হ ধ ঃরসব, বি যধফ ষড়ঃং ড়ভ ফৎবধসং, নঁঃ ঃড়ফধু বি ফড়হ’ঃ হববফ সধহু ভধপরষরঃরবং. ডব লঁংঃ ধিহঃ ভৎববফড়স ড়ভ ংঢ়ববপয ধহফ ংড়সব ৎরপব.
খোরাসানের আমিরের মতোই বলতে হচ্ছে, আমাদের একসময় অনেক স্বপ্ন ছিল কিন্তু এখন সেটি কথা বলতে পারা এবং ভাতের মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয় এবং গণতন্ত্র নিয়ে আমাদের যে প্রত্যাশাÑতা ফিনিক্স পাখির মতো ফিরে আসুক। বিশ্ববিদ্যালয় এবং গণতন্ত্র হোক মানুষের জন্য। আমাদের স্বপ্নের বাংলাদেশ হোক সমতার, গবেষণার এবং উন্নয়নের।
আসাদুজ্জামান বুলবুল
শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়