জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস বন্ধে আলেমদের সহায়তা চান প্রধানমন্ত্রী

শেয়ার বিজ ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ থেকে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস নির্মূলে সরকারকে সাহায্য করার জন্য সবাইকে বিশেষ করে আলেম-ওলামাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা কুসংস্কার, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস নির্মূলে আপনাদের (আলেম-ওলামাদের) সহযোগিতা চাই।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল রোববার সকালে ‘জাতীয় হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতা, ২০২৩’-এর জাতীয় পর্যায়ের বিজয়ী হাফেজদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণকালে আরও বলেন, ‘আমি আপনাদের সবাইকে বিশেষ মনোযোগ দেয়ার জন্য অনুরোধ করছি, যাতে আমাদের সন্তানরা বিপথে যেতে না পারে।’ সূত্র: বাসস।

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ দ্বীনি সেবা ফাউন্ডেশন এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

প্রধানমন্ত্রী আলেম-ওলামাদের সবার মাঝে ইসলামের প্রকৃত মর্মবাণী ছড়িয়ে দিতে বলেন, কেউ যেন কাউকে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদের পথে বিচ্যুত করে নিতে না পারে এবং ইসলামের বদনাম করতে না পারে। কেননা ইসলাম পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম এবং সর্বদা শান্তির কথা বলে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা জঙ্গিবাদী সন্ত্রাসী, তারা সন্ত্রাসী। তারা কোনো ধর্ম, দেশ বা জাতি-গোষ্ঠীর নয়। তাই সবার কাছে আমার অনুরোধ থাকবে, আমাদের ধর্মের মান-ইজ্জতটা রক্ষা করবেন। কেউ যেন এই বিপথে না যায়। সন্তানের নিয়মিত স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিতির বিষয়টা এবং কার সঙ্গে মিশছে, সে বিষয়টা আপনাদের লক্ষ রাখতে হবে।

তিনি বলেন, পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম ইসলাম, সেই ধর্মের সঙ্গে সামান্য মুষ্টিমেয় কয়েকজনের জন্য কেন সন্ত্রাসী নামটা যুক্ত হবে? সত্যিকারের যারা ধর্মে বিশ্বাসী তাদের জন্য এটা খুব কষ্টদায়ক। কাজেই আপনাদের কাছে আমার অনুরোধ, এসব কুসংস্কার, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস নির্মূলের ক্ষেত্রে আমি আপনাদের সহযোগিতা চাই। আপনাদের দোয়া চাই এবং আমাদের ছেলেমেয়েরা যেন বিপথে না যায়, সেজন্য আপনাদের সহযোগিতা চাই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নানা ধর্মের লোক এই বাংলাদেশে আছে এবং যার যার ধর্ম সে সে পালন করবে, এটা আমাদের নবী করীম (সা.)-এর শিক্ষা, আমরা সেভাবেই চলব। চূড়ান্ত বিচার বা শেষ বিচার করবেন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। কাজেই কে কোন ধর্মের, কে হিন্দু না মুসলমান না বৌদ্ধ না খ্রিস্টান না কাদিয়ানি, তা দেখার দায়িত্ব আমাদের নয়। যার যার কর্মফল সে সে ভোগ করবে।’

বিচারের ভার নিজেদের হাতে তুলে না নিয়ে বরং আরও বেশিসংখ্যক মানুষ যেন ইসলামের ছায়াতলে আসে, সেজন্য সবার প্রচেষ্টা থাকা উচিত বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘আলেম ও ওলামায়ে কেরাম যারা আছেন, আপনাদের কাছে আমার এই অনুরোধÑইসলাম ধর্মের মর্মবাণী প্রচার করে আরও অধিকসংখ্যক মানুষ যেন ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে পারে, সেদিকে সবার দৃষ্টি দিতে হবে। সন্ত্রাস করে ইসলাম সম্পর্কে বদনাম যেন কেউ না করতে পারে।’

তিনি বলেন, এই যে কোমলমতি ছেলেদের মাথাগুলো খারাপ করে দিয়ে তাদের বিপথে চালানো, তাদের জীবনটাকে ধ্বংস করা, সুইসাইড অ্যাটাক করে মানুষ মারাÑএটা তো ইসলাম ধর্মে মহাপাপ, গোনাহর কাজ। সুইসাইড করলে তো কেউ বেহেশতে যাবে না, এটাই তো বলা রয়েছে।

কোমলমতি শিশু-কিশোরদের সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ থেকে দূরে রাখতে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সুইসাইড (আত্মহত্যা) করে, মানুষ হত্যা করে কোন বেহেশতে যাচ্ছে তারা? এই বিপথ থেকে তাদের সরাতে হবে। এটা একটা ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে ইসলাম ধর্মের নামে বদনাম দেয়া হয়। এই বদনামের হাত থেকে ইসলামকে রক্ষা করতে হবে।

‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই আজ এদেশের মানুষ দুবেলা পেট ভরে ভাত খেতে পারছে’ বলে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আজকে সবাইকে আমরা ঘর তৈরি করে দিচ্ছি, কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে বিনা পয়সায় ৩০ প্রকার ওষুধ দিচ্ছি। মানুষকে শিক্ষা ও কম্পিউটার শিক্ষার ব্যবস্থা করে দেয়ায় তারা দেশে-বিদেশে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে। কারিগরি শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি, যাতে ধর্মীয় শিক্ষার সঙ্গে পার্থিব শিক্ষা নিয়ে সবাই নিজেরা নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে পারে এবং আর্থিকভাবে সমৃদ্ধ হতে পারে। সেসব ব্যবস্থাটাই আমরা করে দিচ্ছি।’

অনুষ্ঠানে বিজয়ী পাঁচ হাফেজের হাতে প্রধানমন্ত্রী পুরস্কার হিসেবে ক্রেস্ট, নগদ অর্থের চেক ও সনদ তুলে দেন। তারা হচ্ছেনÑপ্রথম হাফেজ আফফান বিন সিরাজ, দ্বিতীয় হাফেজ মো. ওসমান গণি, তৃতীয়  হাফেজ মো. আবু জাফর শাকিল (দৃষ্টি প্রতিবন্ধি), চতুর্থ হাফেজ মো. খালিদ সাইফুল্লাহ ও পঞ্চম হাফেজ মো. মোতাসিম বিল্লাহ।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব মু.আ. হামিদ জমাদ্দার, বাংলাদেশ কওমী মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের মহাপরিচালক মাওলানা মুফতি উবায়দুর রহমান খান নদভীসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন, যাদের মধ্যে রয়েছেন আলহাজ সুফী মো. মিজানুর রহমান এবং হযরত মাওলানা সালাউদ্দিন নানোপুরী।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব ও বাংলাদেশের দ্বীনি সেবা ফাউন্ডেশনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক আবুল কালাম আজাদ।

পুরস্কারবিজয়ীদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আশা করি, তোমরা পবিত্র কোরআনের মর্মবাণী ধারণ করে নিজেকে ও সমাজকে আলোকিত করবে। সমাজ থেকে কুসংস্কার, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করতে অবদান রাখবে এবং আদর্শ সমাজ ও শান্তিপূর্ণ দেশ গঠনে এগিয়ে আসবে।

জাতীয়ভাবে হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতার আয়োজন করার জন্য উদ্যোক্তা বাংলাদেশ দ্বীনি সেবা ফাউন্ডেশনকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক হিফজুল কোরআন প্রতিযোগিতায় আমাদের ছেলে-মেয়েরা প্রতি বছরই বিশ্বের অনেক দেশের চেয়ে অনেক ভালো ফল অর্জন করছে। তারা একাধিক গ্রুপে চ্যাম্পিয়নও হয়েছে। এটি বাংলাদেশের জন্য অনেক বড় মর্যাদা ও গৌরবের বিষয়।

এই ধরনের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন খাঁটি মুসলমান। তিনি যেমন স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের স্থপতি, তেমনি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় ইসলামের প্রচার-প্রসারের স্থপতিও তিনি। বঙ্গবন্ধু ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও মাদ্রাসা বোর্ড প্রতিষ্ঠা করেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা তাবলীগ জামাতের জন্য কাকরাইল মসজিদে জমি দান করেন। টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে বিশ্ব ইজতেমার জন্য জায়গা বরাদ্দ দেন। জামিয়া মাদানিয়া দারুল উলুম যাত্রাবাড়ী কওমী মাদ্রাসার জন্যও জমি দেন বঙ্গবন্ধু। তিনি বেতার ও টেলিভিশনের অনুষ্ঠান শুরু ও সমাপ্তিতে কোরআন তেলাওয়াতের প্রচলন করেন এবং আইন করে মদ নিষিদ্ধ করেন এবং ঘোড়দৌড় ও জুয়া বন্ধ করেন।

মাত্র সাড়ে তিন বছরের সরকারে বঙ্গবন্ধু ইসলামের উন্নয়নে ব্যাপক পদক্ষেপ নেন বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তার নেতৃত্বে মুসলিম বিশ্বসহ আরব দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপিত হয়। তার কূটনৈতিক দূরদর্শিতায় বাংলাদেশ ১৯৭৪ সালে ওআইসি’র সদস্যপদ লাভ করে।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সবসময়ই ইসলামের খেদমত ও উন্নয়নে কাজ করেছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘২০০৯ সালে সরকারে আসার পর আমরা বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও সম্প্রসারণ করি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের জন্য তার সরকার ইসলামী আরবি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে। আরবি, বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় পবিত্র কোরআনের ডিজিটাল ভার্সন তৈরি করেছে। সরকারের মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্প চলমান রয়েছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০