কালজয়ী চলচ্চিত্রকার ও শক্তিমান কথাশিল্পী জহির রায়হানের আজ ৮৮তম জন্মদিন। তিনি ১৯৩৫ সালের ১৯ আগস্ট বর্তমান ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের মজুপুর গ্রামে জš§গ্রহণ করেন। তার আসল নাম জহিরুল্লাহ। পরবর্তী সময়ে তিনি জহির রায়হান নামে পরিচিত হন। শৈশবে তিনি কলকাতায় মিত্র ইনস্টিউটে এবং পরে আলিয়া মাদ্রাসায় অধ্যয়ন করেন। ভারত বিভাগের পর তিনি তার পরিবারের সঙ্গে পূর্ববাংলায় চলে আসেন। ১৯৫৮ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৫০ সালে তিনি যুগের আলো পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে পেশা জীবন শুরু করেন। তিনি যুগের আলো, খাপছাড়া, যান্ত্রিক, সিনেমা প্রবাহ ইত্যাদি পত্রিকাতে দায়িত্ব পালন করেন। জহির রায়হান ছাত্রজীবনেই লেখালেখিতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। ১৯৫৫ সালে তার প্রথম গল্পগ্রন্থ সূর্যগ্রহণ প্রকাশিত হয়। তার লিখিত গ্রন্থগুলো হচ্ছে শেষ বিকেলের মেয়ে, হাজার বছর ধরে, আরেক ফাল্গুন, বরফ গলা নদী এবং আর কত দিন। হাজার বছর ধরে উপন্যাসের জন্য তিনি আদমজী পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৫২ সালে তিনি ফটোগ্রাফি শিখতে কলকাতা যান । জহির রায়হান ১৯৫৭ সালে চলচ্চিত্রে আসেন। ১৯৬৪ সালে তিনি পাকিস্তানের প্রথম রঙিন চলচ্চিত্র সঙ্গম নির্মাণ করেন (উর্দু ভাষার ছবি) এবং পরের বছর নির্মাণ করেন তার প্রথম সিনেমাস্কোপ চলচ্চিত্র বাহানা।
তার নির্মিত উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র কাজল, কাঁচের দেয়াল, বেহুলা, জীবন থেকে নেয়া, আনোয়ারা, সঙ্গম এবং বাহানা। তিনি লেট দেয়ার বি লাইট নামে একটি ইংরেজি ছবি নির্মাণ শুরু করেন। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ায় তিনি ছবিটা শেষ করতে পারেননি। ১৯৭১-এর ২৫ মার্চের পর তিনি কলকাতায় যান। সেখান থেকে পাকিস্তানিদের গণহত্যার চিত্রসংবলিত স্টপ জেনোসাইড নির্মাণ করেন। জহির রায়হান তার ‘ওদের জানিয়ে দাও’ কবিতায় পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে ঘৃণা প্রকাশ করেন।
জহির রায়হান ১৯৭২ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, ১৯৭৭ সালে একুশে পদক এবং ১৯৯২ সালে স্বাধীনতা পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হন। ১৯৭১ সালে তার জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা প্রখ্যাত লেখক শহীদুল্লাহ কায়সারকে আলবদর বাহিনী তার বাসভবন থেকে তুলে নিয়ে যায়। ১৯৭১ সালের ৩০ ডিসেম্বর তিনি খবর পান যে, শহীদুল্লাহ কায়সারকে ঢাকার মিরপুরে রাখা হয়েছে। তিনি তাকে উদ্ধারের জন্য সেখানে যান। এরপর আর তার কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
কাজী সালমা সুলতানা
