স্মরণীয়-বরণীয়

বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমানের আজ ৫২তম মৃত্যুবার্ষিকী। বাংলার এই বীর সন্তান ১৯৭১ সালের ২০ আগস্ট মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় শহিদ হন। চরম সাহসী মতিউর তার অসামান্য বীরত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সামরিক সম্মান ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ উপাধিতে ভূষিত হন। মতিউর রহমান ১৯৪১ সালের ২৯ অক্টোবর পুরান ঢাকার ১০৯, আগা সাদেক রোডের ‘মোবারক লজ’-এ জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস নরসিংদী জেলার রায়পুরা থানার রামনগর গ্রামে, যা এখন মতিনগর নামে পরিচিত। মতিউর ১৯৬১ সালে পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে যোগদান করেন। ১৯৬৩ সালে তিনি পাইলট অফিসার হিসেবে কমিশন লাভ করেন ও ১৯৬৭ সালে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট পদে পদোন্নতি পান। রিসালপুরে দুই বছর ফ্লাইং প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করার পর ১৯৭০ সালে তাকে জেট ফ্লাইং প্রশিক্ষক হিসেবে বদলি করা হয়। ১৯৭১ সালের শুরুতে জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে পাকিস্তান বিমান বাহিনীর ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর সপরিবারে দুই মাসের ছুটিতে ঢাকায় আসেন। ২৫ মার্চের কালরাতে তিনি ছিলেন রামনগর গ্রামে। হানাদারদের পৈশাচিক গণহত্যা দেখে আর তিনি স্থির থাকতে পারলেন না। পাকিস্তান বিমান বাহিনীর একজন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট হওয়া সত্ত্বেও তিনি অসীম ঝুঁকি ও সাহসিকতার সঙ্গে ভৈরবে একটি ট্রেনিং ক্যাম্প খুললেন। যুদ্ধ করতে আসা বাঙালি যুবকদের তিনি প্রশিক্ষণ দিতে থাকলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করা অস্ত্র দিয়ে গড়ে তুললেন একটি প্রতিরোধ বাহিনী। ১৯৭১ সালের ৯ মে তিনি সপরিবারে করাচি ফিরে যান। যদিও দুই মাসের ছুটিতে এসে চার মাস পেরিয়ে গেছে ততদিনে। করাচি পৌঁছে তিনি লক্ষ্য করেন বাঙালি অফিসারদের সন্দেহের চোখে দেখা হচ্ছে। তাকেও তার নিজের দায়িত্ব না দিয়ে দেয়া হলো ফ্লাইট সেফটি অফিসারের দায়িত্ব। মতিউর পরিকল্পনা শুরু করেন। ২০ আগস্ট ১৯৭১, ২১ বছর বয়সী রাশেদ মিনহাজ নামে এক শিক্ষানবিস পাইলট বিমান নিয়ে রানওয়েতে উড্ডয়নের প্রস্তুতি নিলে, মতিউর রহমান সেফটি অফিসারের ক্ষমতাবলে বিমানের ককপিটে চড়ে বসেন এবং রাশেদ মিনহাজকে ক্লোরোফর্ম দিয়ে অচেতন করে ফেলেন। জ্ঞান হারানোর আগে মিনহাজ কন্ট্রোল রুমে জানাতে সক্ষম হন যে, তিনিসহ বিমানটি হাইজ্যাক হয়েছে। কন্ট্রোল টাওয়ার মিনহাজের বার্তা শুনতে পায়। রাডারে বিমানের অবস্থান বুঝে অপর চারটি জঙ্গিবিমান মতিউরের বিমানকে ধাওয়া করে। প্রায় ভারত সীমান্তের কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়া অবস্থায় রাশেদ মিনহাজ জ্ঞান ফিরে পান এবং বিমানটির নিয়ন্ত্রণ নিতে চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে রাশেদ ইজেক্ট সুইচ চাপলে মতিউর বিমান থেকে ছিটকে পড়ে নিহত হন। তার মৃত্যুর ৩৫ বছর পর ২০০৬ সালের ২৩ জুন তাকে শহিদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে পূর্ণ সামরিক মর্যাদায় পুনঃসমাহিত করা হয়।

কাজী সালমা সুলতানা

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০