বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের আজ চতুর্থ মৃত্যুবাষিকী। তিনি ন্যাপ বা কুঁড়েঘরের মোজাফফর হিসেবে অধিক পরিচিত ছিলেন। মোজাফফর আহমদ ১৯৭১ সালে যুদ্ধকালীন বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের উপদেষ্টা ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (মস্কোপন্থি) সভাপতিও ছিলেন।
মোজাফফর আহমদ ১৯২২ সালের ১৪ এপ্রিল কুমিল্লা জেলার দেবীদ্বার উপজেলার এলাহাবাদ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেয়ার পর কিছুদিন বিভিন্ন কলেজে শিক্ষকতা করে এখানেই শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন।
১৯৫২ সালের মহান ভাষা আন্দোলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ১৯৫৪ সালে অধ্যাপনা ছেড়ে সম্পূর্ণভাবে রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে যান। পরে মুসলিম লীগের এক মন্ত্রীকে পরাজিত করে প্রাদেশিক ব্যবস্থাপক সভার সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৫৭ সালের ৩ এপ্রিল ন্যাপের প্রতিনিধি নেতা হিসেবে তিনি আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের প্রস্তাব উত্থাপন করেন।
১৯৫৮ সালে সামরিক শাসক আইয়ুব সরকার তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ও হুলিয়া জারি করে। তাকে ধরিয়ে দিলে পুরস্কার প্রাপ্তির ঘোষণা পর্যন্ত দেয়। সে সময় আত্মগোপন থেকে তিনি আইয়ুব সরকার শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন সুসংগঠিত করেন। দীর্ঘ আট বছর আত্মগোপনে থাকার পর ১৯৬৬ সালে তিনি প্রকাশ্য রাজনীতিতে আসেন। ১৯৬৭ সালে ন্যাপ বিভক্ত হলে মোজাফফর পূর্ব পাকিস্তান ন্যাপের সভাপতি হন। ১৯৬৯ সালে আইয়ুব সরকারবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে তিনি কারাবরণও করেন।
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালে অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগে গঠিত সর্বদলীয় উপদেষ্টা কমিটির অন্যতম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি ও ছাত্র ইউনিয়নের নেতৃত্বে পৃথক গেরিলা বাহিনী গঠনে তিনি অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় ‘নতুন বাংলা’ নামে একটি পত্রিকা বের হয়, যা পরে ন্যাপের মুখপত্র হয়।
জাতিসংঘের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের অন্যতম সদস্য ছিলেন মোজাফফর আহমদ। স্বৈরাচারী শাসক এরশাদবিরোধী আন্দোলনের শুরুতে তিনি কারারুদ্ধ হন। রাজনীতি জীবনে তিনি যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, সোভিয়েত ইউনিয়ন, ভারত, মধ্যপ্রাচ্যসহ পূর্ব ও পশ্চিম ইউরোপের নানান দেশ সফর করেন। বাংলাদেশ সরকার ২০১৫ সালে অধ্যাপক মোজাফফর আহমদকে স্বাধীনতা পদক দেয়ার ঘোষণা দিলে তিনি তা নিতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি মদনপুরে ‘সামাজিক বিজ্ঞান পরিষদ’ নামে একটি শিক্ষায়তন প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ২০১৯ সালের ২৩ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা
