নিজস্ব প্রতিবেদক: বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের হলে এক ছাত্রী র্যাগিং এবং সংবাদ সংগ্রহে যাওয়া সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা হাইকোর্টের নজরে আনা হয়েছে। রোববার (২৭ আগস্ট) বিচারপতি জে বি এম হাসান ও রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে আইনজীবী তামজিদ হাসান পাপুল বিষয়টি নজরে আনেন।
তখন হাইকোর্ট বলেন, পত্রিকা দেখে আমরা কোনো বিষয় শুনব না। আপনি প্রয়োজন মনে করলে এ বিষয়ে রিট করতে পারেন। পরে আইনজীবী তামজিদ হাসান বলেন, আমরা আগামীকাল সোমবার (২৮ আগস্ট) র্যাগিংয়ের ঘটনা রিট আবেদন দায়ের করব।
এর আগে গত বুধবার (২৩ আগস্ট) রাতে ছাত্রী হলের ৬০৬ নম্বর কক্ষে র্যাগিংয়ের শিকার হন এক ছাত্রী। ওই ছাত্রীকে গভীর রাতে দুই দফায় হলের একটি কক্ষে ডেকে নিয়ে দীর্ঘ সময় দাঁড় করিয়ে রেখে গালাগাল, হুমকি এবং মুঠোফোন তল্লাশি করা হয়েছে। একপর্যায়ে অচেতন হয়ে পড়লে তাঁকে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
হলে অবস্থান করা ডেন্টাল ৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ফাহমিদা রওশন ওরফে প্রভা, ৫০তম ব্যাচের নীলিমা হোসেন ওরফে জুঁইয়ের নেতৃত্বে এ ঘটনা ঘটে। তারা নিজেদের ছাত্রলীগের নেত্রী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে সেখানে সংগঠনটির কোনো কমিটি নেই।
এদিকে শনিবার দুপুরে র্যাগিংয়ের বিষয়টি নিয়ে মেডিকেল কলেজের একাডেমিক কাউন্সিল নির্যাতনের শিকার ছাত্রীদের বক্তব্য নেয়। এ সময় বেশ কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেলের সাংবাদিক সেখানে উপস্থিত হয়ে নির্যাতনের শিকার ছাত্রী ও ছাত্রীর মায়ের বক্তব্য নিতে যান। তখন কয়েকজন শিক্ষক সাংবাদিকদের লাঞ্ছিত করেন।
র্যাগিংয়ের শিকার ওই ছাত্রী আজ অভিযোগ করেন, বেশ কয়েক দিন ধরেই ছাত্রলীগের নেত্রী পরিচয় দেওয়া ওই ছাত্রীরা তাঁকে এবং তাঁর রুমমেটকে নানাভাবে গালাগাল দিয়ে মানসিক নির্যাতন করে আসছেন। এতে ভীতসন্ত্রস্ত ছিলেন তাঁরা। তাঁদের সঙ্গে যেন এ ধরনের আচরণ না করা হয়, সে জন্য নেতৃত্ব দেওয়া ওই ছাত্রীদের একজন সহপাঠীকে দিয়ে অনুরোধ করান তাঁরা। কিন্তু এতে অভিযুক্তরা ক্ষেপে যান। এর জেরে বুধবার রাত ১১টার দিকে নির্যাতনের শিকার ওই ছাত্রী ও তাঁর রুমমেটকে হলের ৬০৬ নম্বর কক্ষে ডেকে নেওয়া হয়। এরপর তাঁদের দুজনকে দাঁড় করিয়ে অভিযুক্তদের সহপাঠীর কাছে কেন ‘নালিশ করা হয়েছে’, এ জন্য কৈফিয়ত চান এবং অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করেন। একপর্যায়ে তাঁদের মুঠোফোন নিয়ে তা তল্লাশি করার জন্য কয়েকজনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। আধা ঘণ্টা নানাভাবে শাসিয়ে দুই ছাত্রীকে তাঁদের কক্ষে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। কক্ষে ফিরে ভীতসন্ত্রস্ত এক ছাত্রী বিষয়টি অভিযুক্তদের ওই সহপাঠীকে জানালে তিনি ফোন করে ছাত্রলীগ পরিচয় দেওয়া নেত্রীদের কাছে উষ্মা প্রকাশ করেন। এরপর ভুক্তভোগী ওই ছাত্রীকে আবার ডাকা হয়।
র্যাগিংয়ের শিকার ছাত্রী আরও বলেন, রাত ১২টার দিকে দ্বিতীয় দফায় ডেকে নিয়ে দুই ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রেখে আবারও গালাগাল করা হয় এবং ভয়ভীতি দেখানো হয় তাঁকে। এ সময় ওই ছাত্রী কান্নাকাটি করেন এবং তিনি অসুস্থতার কথা জানিয়ে তাঁকে বসতে দেওয়ার অনুরোধ করেন। তবে তাঁকে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। তাঁর মুঠোফোন কেড়ে নিয়ে পুনরায় তল্লাশি করা হয়। দুই ঘণ্টা ধরে এভাবে মানসিক নির্যাতনে ওই ছাত্রী অসুস্থ বোধ করলে তাঁকে কক্ষে পাঠানো হয়। এর পরপরই তিনি অচেতন হয়ে পড়েন। পরে গভীর রাতে তাঁকে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।