মীর কামরুজ্জামান মনি, যশোর: এলপিজি গ্যাস বিক্রিতে কোনো নিয়ম মানা হচ্ছে না যশোরে। ভোক্তা পর্যায়ে ১২ কেজি এলপিজি সিলিন্ডারের আগের দামের সঙ্গে ১৪১ টাকা বাড়িয়ে ১ হাজার ১৪০ টাকা নির্ধারণ করে দেয়ার পরও যশোরে বিক্রি হচ্ছে ১৩০০ থেকে ১৩৫০ টাকা। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডিলার পর্যায়ে সরকারি দাম উপেক্ষা করে প্রতি সিলিন্ডার ১২৫০ টাকা বিক্রি করছে। যে কারণে তারা বাড়তি দামে গ্যাস বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। আর এর খেসারত গুনতে হচ্ছে ভোক্তাদের।
জানা গেছে, তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) বিক্রি নিয়ে বেশ কয়েক মাস ধরে কোম্পানি ও ডিলার পর্যায়ে টানাপড়েন চলে আসছে। ডিলারদের দাবি ছিল গ্যাসের পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে দামের সমন্বয়ের। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত দুই সপ্তাহ আগে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) আগের দামের সঙ্গে ১৪১ টাকা বাড়িয়ে ১ হাজার ১৪০ টাকা নির্ধারণ করে দেয়। কিন্তু এরপরও যশোরের বাজারে এর কোনো প্রতিফলন নেই। গতকাল যশোরের গ্যাসের দোকানে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে ১২ কেজি এলপিজি সিলিন্ডার খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ১৩শ থেকে ১৩৫০ টাকা দরে।
যশোরের বকুলতলা মোড়ে কাদের এন্টারপ্রাইজের বিক্রয় প্রতিনিধি বোরহান উদ্দীন বলেন, সরকার নির্ধারিত দাম অনুযায়ী কোথাও থেকে গ্যাস কেনা যাচ্ছে না। ডিলার পর্যায় থেকেই আমাদের ১২৫০ টাকা সিলিন্ডার কিনে আনতে হচ্ছে। আর বেক্সিমকো গ্যাস বিক্রি হচ্ছে ডিলার পর্যায়ে ১৩৫০ টাকা করে। তিনি বলেন, গ্যাসের ব্যবসা নিয়ে আমরা চরম সমস্যায় আছি। এক সিলিন্ডার গ্যাস দোকান পর্যন্ত আনতে আবার তা বিক্রি করে ভোক্তা পর্যায়ে পৌঁছে দিতে আরও বাড়তি খরচ হয়। বর্তমান আমরা যে দামে গ্যাস বিক্রি করছি তাতে সিলিন্ডার প্রতি ২০ টাকাও লাভ করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
প্রায় একই কথা বলেন, পাশেই শিমু এন্টারপ্রাইজের বিক্রয় প্রতিনিধি। তিনি বলেন, কোম্পানি পর্যায়েও সরকার নির্ধারিত দামে গ্যাস বিক্রি হচ্ছে না। ডিলাররা তাদের সাফ জানিয়ে দিচ্ছে নির্ধারিত দামে গ্যাস বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। তিনি বলেন, পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে যদি ভোক্তাদের মুখে হাসি না থাকে তাহলে আমরাও খুশি থাকতে পারি না। প্রতিদিন তাদের কাছে নানা জবাবদিহিতা করতে হচ্ছে। পাশাপাশি প্রশাসনের সঙ্গেও আমাদের ভুল বোঝাবুঝি চলছে।
এ বিষয়ে এলপিজি গ্যাসের ডিলার সোনালী ট্রেডার্সের ম্যানেজার ফসিয়ার রহমান বলেন, কোম্পানি পর্যায় থেকে আমাদের সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে গ্যাস কিনে আনতে হচ্ছে। মংলার প্লান্ট থেকে প্রতি ১২ কেজির প্রতি সিলিন্ডার গ্যাস কিনতে দিতে হচ্ছে ১১৯২ টাকা। তারপর এ গ্যাস গাড়ি থেকে উঠানো-নামাতে খরচ হচ্ছে আরও ৪০ টাকা। সঙ্গে যোগ হচ্ছে পরিবহন ও শ্রমিক খরচ। তিনি বলেন, আমরা কোম্পানির প্রতিনিধিদের বারবার বলছি সরকারের সঙ্গে এ বিষয়ে বসে এ বিষয়ে সমাধান করতে। কিন্তু তারা এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। যে কারণে সংকট দিন দিন আরও বাড়ছে।
এদিকে সরকার দাম কমালেও বাজারে তার ন্যূনতম প্রতিফলন না হওয়ায় ভোক্তা পর্যায়ে চরম ক্ষোভ লক্ষ্য করা গেছে। তাদের দাবি ডিলার পর্যায়ে সিন্ডিকেটের কারণে দাম বাড়লেও তা প্রতিকারে কোনো পদক্ষেপ নেই প্রশাসনের।
এ বিষয়ে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর যশোরের সহকারী পরিচালক সৈয়দা তারানা তাসনীমের বক্তব্য নেয়ার জন্য যোগাযোগ করলে তার মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় সম্ভব হয়নি।
তবে জেলা সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা রবিউল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, এলপিজি গ্যাসের দাম নিয়ে সংকটের বিষয়টি আমাদের জানা আছে। বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন সভায় কথা হয় বলেও তিনি জানান। তবে খুব দ্রুত এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানান।