কুষ্টিয়ার হাসপাতালে নেই সাপে কাটার প্রতিষেধক

কুদরতে খোদা সবুজ, কুষ্টিয়া: কুষ্টিয়ায় বিষধর সাপের উপদ্রব বেড়েছে। প্রায়ই সাপের কামড়ে আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ। কখনও বাসাবাড়ি

আবার কখনও জেলেদের জালে ধরা পড়ছে বিষধর সাপ। তবে জেলার সরকারি হাসপাতালগুলোয় সাপে কাটা রোগীদের জন্য প্রতিষেধকের (অ্যান্টিভেনম) সংকট দেখা দিয়েছে। কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে এক মাসের বেশি সময় ধরে প্রতিষেধক (অ্যান্টিভেনম) নেই।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২৩ আগস্ট কুষ্টিয়া সদরের কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামের ইব্রাহিম ফারাজির স্ত্রী আয়েশা খাতুন (২৫) ও তার সাত মাস বয়সী কন্যাসন্তান নুসরাত জাহানকে বিষাক্ত কালাচ সাপে কামড় দেয়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই শিশুটির মৃত্যু হয়, আয়েশাকে ভর্তি করা হয় কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে। হাসপাতালে প্রতিষেধক টিকা (অ্যান্টিভেনম) না থাকায় আয়েশার মৃত্যু হয়। এ ঘটনার পর থেকে আতঙ্কিত স্থানীয়রা।

মা-মেয়ে ছাড়াও চলতি মাসে সাপের কামড়ে মারা যান জেলার কুমারখালী শিলাইদহের মাঝগ্রামের নববধূ

মিতু ও দৌলতপুর রামকৃষ্ণপুরের মোহাম্মদপুরের বুলবুল বিশ্বাস। গত ১৮ আগস্ট খোকসা উপজেলা স্বাস্থ্য

কমপ্লেক্সে পাঁচ নারী-পুরুষ সাপের কামড়ে অসুস্থ হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন।

এদিকে গত ১২ আগস্ট কুষ্টিয়ার কুমারখালীর গড়াই নদীতে জেলের জালে ধরা পড়ে বিষধর রাসেল ভাইপার সাপ।

উপজেলার কয়া ইউনিয়নের বানিয়াপাড়া এলাকার আতিয়ার মোড়সংলগ্ন গড়াই নদীতে এক জেলের মাছ

ধরার সময় জালে বিষধর সাপটি ধরা পড়ে। পরে এলাকাবাসী বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ফেডারেশনের (বিবিসিএফ) কুষ্টিয়া টিম ও বন বিভাগে খবর দিলে জেলের মাছ ধরার ফাঁদ (দোয়ার) থেকে বিবিসিএফ কুষ্টিয়া টিম সাপটিকে উদ্ধার করে বন বিভাগের কর্মকর্তাদের হাতে তুলে দেয়। এছাড়া চলতি বছরের বিভিন্ন সময় গড়াই নদী থেকে কয়েক দফায় প্রায় সাতটি রাসেল ভাইপার সাপ উদ্ধার করা হয়েছে। গত জুন মাস থেকে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে অ্যান্টিভেনমের সরবরাহ নেই। বিষাক্ত রাসেল ভাইপারসহ

গোখরা সাপের কামড়ে আক্রান্ত রোগী হাসপাতালে বেশি আসছে। জেলার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোয় অ্যান্টিভেনম না থাকায় সাপে কাটা রোগীদের কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানেও জুন মাসের পর থেকে রয়েছে প্রতিষেধক সংকট।

মিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার পীযূষ কুমার সাহা বলেন, মিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গত জুন মাসে সাপের প্রতিষেধক (অ্যান্টিভেনম) মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। বর্তমানে হাসপাতালে অ্যান্টিভেনমের সংকট রয়েছে।

জেলায় সাপের উপদ্রব বৃদ্ধি পেয়েছে বলে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, সাপে কাটা রোগীদের

চিকিৎসায় অ্যান্টিভেনমের বিকল্প নেই। কিন্তু এটি শুধু দেশে একটি ওষুধ কোম্পানিতে পাওয়া যায়।

সেটিও এখন জেলার ওষুধের দোকানগুলোয় পাওয়া যাচ্ছে না।

কুষ্টিয়ার ওষুধ বিক্রেতা নাহিদ হাসান পিয়াস বলেন, সাপে কাটা রোগীদের প্রতিষেধক অ্যান্টিভেনম

শুধু ইনসেপ্টা ফার্মাসিটিক্যাল তৈরি করে থাকে। তবে এটিও সব ওষুধের দোকানে পাওয়া যায় না।

বাংলাদেশ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এসআই সোহেল বলেন, এ অঞ্চলে চার ধরনের বিষধর সাপের বিস্তার রয়েছে। বর্ষা মৌসুমে সকাল ও সন্ধ্যায় সাপে বেশি ছোবল দেয়। সাপের কামড়ে যত

দ্রুত সম্ভব অ্যান্টিভেনম প্রয়োগ করা প্রয়োজন, তাহলেই মৃত্যু ঠেকানো সম্ভব। এ কারণেই উপজেলা ও জেলা সদর হাসপাতালে পর্যাপ্ত অ্যান্টিভেনম মজুত রাখা প্রয়োজন।

কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাক্তার তাপস কুমার সরকার বলেন, হাসপাতালে থাকা অ্যান্টিভেনম বেশ কিছুদিন আগেই ফুরিয়ে গেছে। চাহিদাপত্র

পাঠানো হয়েছে, এখনও সরবরাহ পায়নি। মূলত ভারত থেকে আমাদের দেশে অ্যান্টিভেনম আসে। সম্প্রতি সে দেশেও অ্যান্টিভেনমের চাহিদা বেড়ে গেছে। তাই বিলম্ব হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, সাপের কামড়ে যত মানুষ মারা যায়, তার চেয়ে বেশি মানুষ মারা যায় কামড় খেয়ে

আতঙ্কিত হওয়ার ফলে। সাপে কামড়ানো জায়গা তৎক্ষণাৎ পরিষ্কার ব্যান্ডেজ বা সুতি কাপড় দিয়ে ঢেকে

দিতে হবে, যাতে ধুলোবালি না লাগে। সাপে কাটলে এক সেকেন্ড সময় নষ্ট না করে উচিত রোগীকে সোজা সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া।

কুষ্টিয়া সিভিল সার্জন ডাক্তার এইচ এম আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, বিষধর সাপের কামড়ের প্রতিষেধক

টিকার চাহিদা কুষ্টিয়ায় ২০০ ডোজ। চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। আগামী সপ্তাহে প্রতিষেধক টিকা আসতে পারে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০