বিশেষ প্রতিনিধি: গত বছরের শুরুর দিকে আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেল ও কয়লার দর ছিল ঊর্ধ্বমুখী। তবে গত ফেব্রুয়ারি থেকে দুটোই নেমে আসে। বিশেষ করে কয়লার দাম করোনাকালীন সময়ে চলে আসে। তবে প্রথম সাত মাস উচ্চ দামে জ্বালানি কেনায় এ খাতে ব্যয় ছিল বেশি। পাশাপাশি ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধি ও বিদ্যুৎকেন্দ্র বসিয়ে রেখে ক্যাপাসিটি চার্জ গোনার কারণে উৎপাদন ব্যয় কমছে না। বরং বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) লোকসান বাড়ছে।
যদিও ঘাটতি পূরণে ভর্তুকির পাশাপাশি বিদায়ী অর্থবছর দুই দফা বাড়ানো হয়েছে বাল্ক (পাইকারি) বিদ্যুতের দাম। তবে এর চেয়ে অধিক হারে বেড়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয়। সম্প্রতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের বিদ্যুৎ উৎপাদন ও ব্যয়ের সাময়িক হিসাব চূড়ান্ত করেছে পিডিবি। এতে দেখা যায়, প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রিতে বাল্ক ক্ষেত্রে চার টাকা ৮৬ পয়সা লোকসান গুনছে পিডিবি।
বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২০-২১ অর্থবছর বিদ্যুতের বাল্ক পর্যায়ে প্রতি ইউনিট উৎপাদন ব্যয় ও দামের মধ্যে পার্থক্য ছিল মাত্র এক টাকা ৫২ পয়সা। গত অর্থবছর তা বেড়ে দাঁড়ায় চার টাকা ৩৫ পয়সা। তবে দুই দফা বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পরও বিদায়ী অর্থবছর সাময়িক হিসাবে বাল্ক মূল্যহার ও গড় উৎপাদন ব্যয়ের পার্থক্য দাঁড়ায় চার টাকা ৮৬ পয়সা। অর্থাৎ দুই বছরের ব্যবধানে সংস্থাটির লোকসান বেড়েছে ২২০ শতাংশ।
পিডিবির তথ্যমতে, ২০২০-২১ অর্থবছর বিদ্যুতের গড় উৎপাদন ব্যয় ছিল ছয় টাকা ৩০ পয়সা। তিন শতাংশ ট্রান্সমিশন লস বিবেচনায় এ বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যয় পড়ে ইউনিটপ্রতি ছয় টাকা ৪৯ পয়সা। এর সঙ্গে প্রতি ইউনিটে যোগ হবে ১৫ পয়সা বিদ্যুৎ উন্নয়ন তহবিলের খরচ। এতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের গড় সরবরাহ ব্যয় ছিল ছয় টাকা ৬৪ পয়সা। যদিও ওই সময় বাল্ক মূল্যহার ছিল পাঁচ টাকা ১২ পয়সা। অর্থাৎ প্রতি ইউনিটে পিডিবির ঘাটতি তথা লোকসান ছিল এক টাকা ৫২ পয়সা।
২০২১-২২ অর্থবছর বিদ্যুতের গড় উৎপাদন ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় আট টাকা ৫৪ পয়সা। ট্রান্সমিশন লসসহ ওই সময় বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যয় পড়ে ইউনিটপ্রতি আট টাকা ৯৬ পয়সা। এর সঙ্গে প্রতি ইউনিটে যোগ হয় ১৫ পয়সা বিদ্যুৎ উন্নয়ন তহবিলের খরচ। এছাড়া গত অর্থবছর থেকে বিদ্যুতের বাল্ক মূল্যহারের ওপর ছয় শতাংশ উৎসে আয়কর আরোপ করা হয়। এটি কর্তনের পর প্রতি ইউনিট বাল্ক বিদ্যুতের সরবরাহ মূল্য দাঁড়ায় ৯ টাকা ৪৪ পয়সা। যদিও ওই সময় বাল্ক মূল্যহার কিছুটা কমে দাঁড়ায় পাঁচ টাকা ৯ পয়সা। অর্থাৎ প্রতি ইউনিটে পিডিবির ঘাটতি তথা লোকসান ছিল চার টাকা ৩৫ পয়সা।
এদিকে বিদায়ী অর্থবছর বিদ্যুৎ কেনা হয়েছে প্রায় আট হাজার ১০১ কোটি ১৯ লাখ কিলোওয়াট ঘণ্টা। এতে ব্যয় হয় প্রায় ৮৯ হাজার ৭৫৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ বিদ্যুতের গড় উৎপাদন ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১১ টাকা আট পয়সা। ট্রান্সমিশন লস প্রতি ইউনিটে ৩৩ পয়সা ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন তহবিলের খরচ ১৫ পয়সা যোগ হবে এর সঙ্গে। এতে বাল্ক মূল্যহার দাঁড়ায় ১১ টাকা ৫৬ পয়সা। যদিও দুই দফা বৃদ্ধির পর বর্তমানে বিদ্যুতের বাল্ক মূল্যহার দাঁড়িয়েছে ছয় টাকা ৭০ পয়সা। অর্থাৎ প্রতি ইউনিটে পিডিবির ঘাটতি দাঁড়িয়েছে চার টাকা ৮৬ পয়সা।
জানতে চাইলে পিডিবির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধি বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় বাড়ার অন্যতম কারণ। ডলারের বিনিময় হার এক টাকা বাড়লে পিডিবির লোকসান বাড়ে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা। বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয়কেও জানানো হয়েছে। এছাড়া বিদায়ী অর্থবছর জ্বালানি সংকটের কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার বড় একটি অংশ বসে ছিল। তবে চুক্তির কারণে এসব কেন্দ্রের পুরো ক্যাপাসিটি চার্জই দিতে হচ্ছে। এতে গড় উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেছে। সব মিলিয়ে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেছে।