সংকটে কয়লা বিদ্যুতেই ভরসা রাখছে বাংলাদেশ!

বিশেষ প্রতিনিধি:২০২০ সালে উৎপাদন শুরু করে পায়রা কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। গত বছর ডিসেম্বরে উৎপাদনে আসে রামপাল কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিট। এসএস পাওয়ার ও মাতারবাড়ীর একটি করে ইউনিট পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু করেছে সম্প্রতি। আর গত মাস থেকে আদানির কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ পুরোদমে আসছে। সব মিলিয়ে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের সক্ষমতা এখন চার হাজার ৮০০ মেগাওয়াটের বেশি।

যদিও দেশে বর্তমানে ১২ থেকে ১৪ হাজার মেগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। অর্থাৎ মোট সক্ষমতার এক-চতুর্থাংশ এখন কয়লানির্ভর হয়ে পড়েছে। চলতি অর্থবছরশেষে কয়লা থেকে সরবরাহকৃত কেন্দ্রগুলোর বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ছয় হাজার ২০০ মেগাওয়াট ছাড়াবে। অর্থাৎ সংকট কাটাতে কয়লা বিদ্যুতেই আস্থা রাখছে বাংলাদেশ। তবে এসব কেন্দ্রে নিয়মিত কয়লা সরবরাহের চ্যালেঞ্জও রয়েছে।

এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে কয়লার দাম নি¤œমুখী। জানুয়ারির শুরুতে প্রতি টন কয়লার দাম ছিল প্রায় ৩৯৬ ডলার। ওই মাসের শেষ দিকে তা কমতে শুরু করে। ফেব্রুয়ারির শুরুতে কয়লার দাম কমে প্রতি টনে দাঁড়ায় ২৩৮ ডলার। মার্চের শুরুতে আরও কমে হয় ১৭৮ ডলার। এপ্রিলে শুরুতে তা কিছুটা বেড়ে হয় ১৮৫ ডলার। মে মাসের শুরুতে আবার কমে ১৭৫ ডলার এবং জুনের শুরুতে তা ১৩৫ ডলারে নামে। জুলাইয়ের শুরুতে প্রতি টন কয়লার দাম আরও কমে দাঁড়ায় ১২৯ ডলার। আগস্টের শুরুতে কিছুটা বেড়ে ১৩৮ ও সেপ্টেম্বরের শুরুতে আরও বেড়ে দাঁড়ায় ১৫৬ ডলার। তবে জানুয়ারির তুলনায় বর্তমানে কয়লার দাম ৬০ শতাংশ কম রয়েছে।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) তথ্যমতে, বর্তমানে বেসরকারি খাতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে রয়েছে তিনটি। এর মধ্যে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে পুরোদমে উৎপাদন শুরু করে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। এর উৎপাদন সক্ষমতা এক হাজার ২৪৪ মেগাওয়াট। এছাড়া গত ডিসেম্বরে উৎপাদনে আসে রামপাল কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিট, যার সক্ষমতা ৬১৭ মেগাওয়াট। আর চলতি বছর জানুয়ারিতে উৎপাদন শুরু করেছে বরিশাল কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র, যার সক্ষমতা ৩০৭ মেগাওয়াট। যদিও কয়লা সংকটে এটি প্রায়ই বন্ধ থাকতে দেখা যায়।

ভারতের ঝাড়খণ্ডের এক হাজার ৪৬৬ মেগাওয়াটের কেন্দ্রটি দুই দফায় চলতি বছর মার্চে ও জুনে উৎপাদন শুরু করেছে। গত মাস থেকে কেন্দ্রটি পুরো সক্ষমতায় বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। এস আলম গ্রুপের এসএস পাওয়ারের একটি ইউনিট গত জুনে পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু করে, যার সক্ষমতা ৬১২ মেগাওয়াট। তবে কয়লা সংকটে মাত্র তিন দিন চলার পরই তা বন্ধ হয়ে যায়। যদিও সম্প্রতি ইউনিটটি পুনরায় চালু করা হয়েছে।

এদিকে মাতারবাড়ী এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট কেন্দ্রটির দুটি ইউনিটের একটি পরীক্ষামূলকভাবে গত মাসে চালু হয়েছে। বর্তমানে এ কেন্দ্র থেকে ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে। আগামী বছর জানুয়ারিতে এটির পুরোপুরি উৎপাদন শুরুর কথা রয়েছে। আর রামপালের দ্বিতীয় ইউনিট চলতি বছর ডিসেম্বরে চালুর কথা রয়েছে। এর বাইরেও পটুয়াখালী বিদ্যুৎকেন্দ্র আগামী জুনের আগেই চালু হওয়ার কথা রয়েছে, যার সক্ষমতা এক হাজার ২২৪ মেগাওয়াট।

সূত্র জানায়, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বেজ লোড পাওয়ার প্লান্ট। ফলে এগুলোর লোড ফ্যাক্টর ৭০-৮০ শতাংশ হয়। বিভিন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রের হিট রেট অনুযায়ী চার হাজার ৬০০ থেকে পাঁচ হাজার কিলোক্যালরির কয়লা দরকার হয়। প্রতি টন কয়লার গড়ে দাম ২০০ ডলার ধরলেও এক্ষেত্রে পিডিবির বছরে আর্থিক সংশ্লিষ্টতার পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ৪ দশমিক ৮ বিলিয়ন (৪৮০ কোটি) ডলার।

পিডিবি জানায়, বর্তমান আন্তর্জাতিক বাজারে কয়লার মূল্য ক্যালোরিফিক ভ্যালুর তারতম্যের কারণেও ব্যাপক পরিবর্তন হয়। এ বিষয়গুলো বিবেচনায় জাহাজ ভাড়াসহ অন্যান্য বিষয় পর্যালোচনাপূর্বক বিভিন্ন বিকল্প, উৎস ও পদ্ধতির মধ্যে সর্বোত্তম পদ্ধতিতে কয়লা কেনার বিষয়ে সার্বক্ষণিক বিষয়ে পিডিবিকে পরামর্শ প্রদানের জন্য একজন আন্তর্জাতিক মানের ‘কোল এক্সপার্ট’ নিয়োগ করা প্রয়োজন। ‘কোল এক্সপার্ট’ নিয়োগের জন্য ছয় সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে পিডিবি।

জানতে চাইলে পিডিবির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে শেয়ার বিজকে বলেন, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর চুক্তি সঠিকভাবে বিশ্লেষণ করে কয়লার দাম ও গুণগত মান নিশ্চিত করা গেলে এসব কেন্দ্র থেকে লাভ করা সম্ভব। এজন্যই পরামর্শক নিয়োগের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

যদিও চাহিদা না থাকায় এ ধরনের বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো উৎপাদনে এলে অন্য কেন্দ্র বসিয়ে রাখতে হবে বলে জানান ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক এম শামসুল আলম। তিনি বলেন, এমনিতেই চাহিদা না থাকায় বেশকিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র বসিয়ে রেখে ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হচ্ছে। এর মধ্যে এ ধরনের বিদ্যুৎকেন্দ্র বিলাসিতা ছাড়া আর কিছু নয়। এগুলোর ক্যাপাসিটি চার্জও অনেক বেশি। আর বছরে শুধু কয়লা আমদানিতেই পাঁচ বিলিয়ন ডলার খরচ করার মতো সক্ষমতা বাংলাদেশের বর্তমানে আছে কি না, সেটাও প্রশ্নসাপেক্ষ। এছাড়া কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চললে তেলচালিত কেন্দ্র বসিয়ে রাখতে হবে। এগুলো হলো অপরিকল্পিত উদ্যোগ ও বিনিয়োগের ফল।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০