শহিদ মুক্তিযোদ্ধা বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ শেখের ৫২তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে চরম সাহসিকতা আর অসামান্য বীরত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ‘বীর শ্রেষ্ঠ’ উপাধিতে ভূষিত হন। ১৯৭১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর তিনি যশোর জেলার গোয়ালহাটি গ্রামে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে প্রতিরোধযুদ্ধে সঙ্গীদের জীবন ও অস্ত্র রক্ষা করতে গিয়ে শহিদ হন। ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ ১৯৩৬ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি নড়াইল জেলার মহিষখালী গ্রামে জš§গ্রহণ করেন। সপ্তম শ্রেণির পর তিনি আর পড়াশোনা করেননি। ১৯৫৯ সালের ১৪ মার্চ তিনি পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলসে যোগ দেন। প্রশিক্ষণ শেষে নূর মোহাম্মদ দিনাজপুর সেক্টরে পদায়ন হন। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধে তিনি দিনাজপুরে আহত হন। সেই যুদ্ধে বীরত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ তৎকালীন সরকার তাকে ‘তমগা-এ-জং’ ও ‘সিতারা-এ-হরব’ পদকে ভূষিত করে। দীর্ঘদিন দিনাজপুর সীমান্তে চাকরি করে ১৯৭০ সালের ১০ জুলাই তিনি পূর্ব পাকিস্তান রাইফেলসের ল্যান্স নায়েক হিসেবে যশোর সেক্টরে বদলি হয়ে আসেন। ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে এসে নূর মোহাম্মদ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে যোগদানের জন্য মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেন। তিনি ৮নং সেক্টরের অধীনে যশোরে যুদ্ধ করেন। ১৯৭১ সালের ৫ সেপ্টেম্বর সুতিপুরে নিজস্ব প্রতিরক্ষা ব্যুহের সামনে যশোর জেলার গোয়ালহাটি গ্রামে নূর মোহাম্মদকে অধিনায়ক করে পাঁচজনের সমন্বয়ে গঠিত একটি স্ট্যান্ডিং পেট্রোল পাঠানো হয়। সেদিন সকাল সাড়ে ৯টায় হঠাৎ পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পেট্রোলটি তিন দিক থেকে ঘিরে ফেলে গুলিবর্ষণ শুরু করে। মুক্তিযোদ্ধারাও পাল্টা গুলিবর্ষণ শুরু করে। যুদ্ধের একপর্যায়ে সিপাহি নান্নু মিয়া গুলিবিদ্ধ হলে নূর মোহাম্মদ তাকে কাঁধে তুলে নেন এবং গুলি চালাতে শুরু করেন, এতে শত্রুপক্ষ পশ্চাদপসরণ করতে বাধ্য হয়। হঠাৎ করেই শত্রুর মর্টারের একটি গোলার আঘাতে তিনি মারাত্মকভাবে আহত হন। নিজে আহত হয়েও আহত সহযোদ্ধা নান্নু মিয়াকে নিয়ে অন্য সহযোদ্ধাদের জীবন রক্ষার্থে তাদের যুদ্ধক্ষেত্র ত্যাগ করতে আদেশ দেন। তার আদেশ অনুসরণ করে তাকে রেখেই নিরাপদে সরে যেতে পারলেন সহযোদ্ধারা। এদিকে সমানে গুলিতে রক্তাক্ত হলেন নূর মোহাম্মদ। তিনি পাকিস্তান শত্রুপক্ষের সঙ্গে যুদ্ধরত অবস্থায় শহিদ হন। পরে তার সহযোদ্ধারা তার মৃতদেহ উদ্ধার করে সীমান্তবর্তী কাশীপুরে সমাহিত করে।
Ñকাজী সালমা সুলতানা
