ঢাকা কাস্টমসে বসছে অত্যাধুনিক ২০৮ সিসি ক্যামেরা

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকা কাস্টম হাউসের মূল্যবান গুদামসহ আশেপাশে বসানো হচ্ছে ২০৮টি অত্যাধুনিক ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা (সিসি ক্যামেরা)। মূল্যবান এই গুদাম সর্বোচ্চ নজরদারিতে আনতে এই ক্যামেরা বসানো হচ্ছে। ক্যামেরা কিনতে ইতোমধ্যে এনবিআর থেকে বরাদ্দ পেয়েছে কাস্টম হাউস। সম্প্রতি মূল্যবান এই গুদাম থেকে ৫৫ কেজি ৫১০ গ্রাম সোনার বার ও অলংকার চুরি হয়ে যায়। এই নিয়ে কাস্টম হাউস মামলা করেছে। চুরির পর গুদামের সামনে ও পাশে ১২টি সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। কাস্টম হাউসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চুরির পর কাস্টম হাউস এই গুদামে নজরদারি বৃদ্ধি করেছে। গুদামের দায়িত্ব হাউসের বিচার শাখার পরিবর্তে বিমানবন্দর কাস্টম হাউসকে দেয়া হয়েছে। অত্যাধুনিসক এসব ক্যামেরা বসানো হলে নিরবচ্ছিন্ন নজরদারি সম্ভব হবে বলে মনে কর্মকর্তারা।

কাস্টম হাউস সূ্ত্রে জানা গেছে, ২০০৫ সালে প্রথম শাহজালাল বিমানবন্দরের কাস্টম জোনে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়। এরপর ২০১৩ সালের ৩০ এপ্রিল দরপত্রের মাধ্যমে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কাস্টম গ্রিন চ্যানেল ঘিরে ৭৩টি সিসি ক্যামেরা যুক্ত করা হয়। সেই সময়ে দেড় কোটি টাকা খরচ করে তখনকার সবচেয়ে অত্যাধুনিক ক্যামেরাই বসানো হয়েছিল এই স্থাপনার জন্য। তবে এরপর আর শাহজালাল বিমানবন্দরের ভেতরে কাস্টমস গ্রিন চ্যানেলে নতুন কোনো সিসি ক্যামেরা বসানো হয়নি। সিসি ক্যামেরা কোনোটি নষ্ট হলে কেবল মেরামত করা হয়েছে। বর্তমানে এই কাস্টম জোনে রয়েছে ৩০টির মতো সিসি ক্যামেরা। তবে এর একটির ছবিও স্পষ্ট নয়। ফলে এই সিসি ক্যামেরাগুলোও কোনো কাজে আসে না। বলা যায়, এই সিসি ক্যামেরাগুলো থাকা আর না থাকা সমান কথা।

সূত্র আরও জানা গেছে, ২০২২ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিমানবন্দরের কাস্টমসের গ্রিন চ্যানেলে পরিদর্শন করেন। তখন বিমানবন্দরে কাস্টমসের সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও কাস্টমস হল অবকাঠামো উন্নয়নে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়। বলা হয় ভিডিও রেকর্ডিং সুবিধা নিশ্চিত করতে। এরপর তখন কাস্টমস হল ও গ্রিন চ্যানেলের কোথায় কোথায় সিসি ক্যামেরা বসানো হবে, তা নির্ধারণ করা হয়। এর জন্য খরচও প্রাক্কলন করা হয়। ওই সময় হিসাব করে ঢাকা কাস্টম হাউজ কর্তৃপক্ষ জানায়, বিমানবন্দরে কাস্টমের পুরো গ্রিন চ্যানেল ঘিরে অত্যাধুনিক ৯৬টি সিসি ক্যামেরা প্রয়োজন। এ ছাড়া কাস্টম হাউজের কুরিয়ার ইউনিটে ৮০টি এবং রফতানি কার্গো এলাকায় আরও ৩২টি সিসি ক্যামেরা প্রয়োজন। সব মিলিয়ে এনবিআরের কাছে ২০৮টি সিসি ক্যামেরা বসানোর চাহিদার কথা জানায় কাস্টম কর্তৃপক্ষ। অর্থ বরাদ্দ চেয়ে চিঠিও দেওয়া হয়। এনবিআর থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে ঢাকা কাস্টম হাউজের জন্য বরাদ্দ মঞ্জুর করা হয়।

জানা গেছে, বরাদ্দ মঞ্জুর হলেও সিসি ক্যামেরা তখন বসানো যায়নি। কারণ ২০২২ সালের ১৩ ডিসেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয় এক আদেশে বৈশ্বিক ও দেশীয় অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে সরকারের কৃচ্ছ্রসাধন নীতির কথা জানায়। ওই নীতির কারণেই বরাদ্দ মঞ্জুর হলেও অর্থ ছাড় না হওয়ায় বিমানবন্দরে কাস্টমসের ওই গুদামে সিসি ক্যামেরা বসানো সম্ভব হয়নি। অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওই আদেশ সত্ত্বেও গত ২২ জানুয়ারি সিসি ক্যামেরার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করে ফের এনবিআর চেয়াম্যান ও সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে চিঠি দেয় কাস্টম হাউস কর্তৃপক্ষ। চিঠিতে সিসি ক্যামেরার জন্য আগে বরাদ্দ অর্থের পাশাপাশি আরও প্রয়োজনীয় অর্থ চেয়ে পুনঃবরাদ্দের আবেদন জানানো হয়। বলা হয়, শাহজালাল বিমানবন্দরের কাস্টম জোনে সিসি ক্যামেরার মান খুবই খারাপ হয়ে যাওয়ায় ভিডিও রেকর্ডিংয়ের পাশাপাশি অডিও রেকর্ডিং সুবিধা নিশ্চিতের জন্য বরাদ্দ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে কাস্টমসের সিসি ক্যামেরার জন্য চাওয়া বরাদ্দ চলতি বাজেটে অর্ন্তভুক্ত করে এনবিআর। এরপর ঢাকা কাস্টম হাউজ কর্তৃপক্ষ কাস্টমসের সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও ক্রয় সংক্রান্ত কমিটি গঠন করে। সেই কমিটিকে আরএফপি (রিকোয়েস্ট ফর প্রপোজাল) প্রণয়ন করতে বলা হয়। এসব প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগেই ৫৫ কোটি টাকার সোনা খোয়া গেল ওই গুদাম থেকে। এর পরপরই অবশ্য গুদামের সামনে ও চারপাশে নতুন করে ১২টি সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। আর ২০৮টি সিসি ক্যামেরা বসানোর সেই উদ্যোগও গতি পেয়েছে।

বিষয় ➧

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০