এননটেক্সকে ঋণ শোধে আরও ৬ মাস সময় দিল জনতা ব্যাংক

রোহান রাজিব:‘ওয়ান টাইম এক্সিট’ নীতির আলোকে ছয় মাসে ৪ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা পরিশোধের শর্তে বিশাল অঙ্কের সুদ মওকুফ সুবিধা নেয় এননটেক্স। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি ছয় মাসে তা পরিশোধে ব্যর্থ হয়। তাই দুই প্রতিষ্ঠানের সম্পদ বিক্রির অর্থ জমার শর্তে ঋণ পরিশোধে গ্রুপটিকে আরও ছয় মাস সময় দিয়েছে জনতা ব্যাংক। ব্যাংকটির গত ২৫ জুলাইয়ের ৭৭৮তম পরিচালনা পর্ষদ সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়। ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।

সূত্র জানায়, এননটেক্সকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ৬ মাস মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য জনতা ব্যাংকের ৭৭৮ বোর্ড সভায় প্রস্তাবনাটি উঠানো হয়। ওই বোর্ড সভায় চলতি মাসের ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে দুটি প্রতিষ্ঠানের অর্থ বিক্রি করে সংশ্লিষ্ট শাখায় অর্থ জমা শর্তে গত ১৫ জুন থেকে আগামী ৩১ ডিসেম্বর সময় দেয়া হয়। এ সময় পর্যন্ত ঋণটি ‘বি’ মানে শ্রেণিকরণ রাখারও অনুমোন দেয়া হয়।

গত ৩০ জুন পর্যন্ত এননটেক্সের ৭টি প্রতিষ্ঠানের কাছে জনতা ব্যাংকের মোট ঋণ স্থিতি দাঁড়ায় ৫ হাজার ২২৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে গ্যালাক্সি সুয়েটার অ্যান্ড ইয়ান ডাইং লিমেটেডের কাছে ১ হাজার ১৪৬ কোটি, সুপ্রভ কম্পোজিট নিট লিমিটেডে ৭৪৪ কোটি, সিমরান কম্পোজিট লিমিটিডে ৭৮০ কোটি, জ্যাকার্ড নিট টেক্স লিমিটেড ৭৭৯ কোটি, সুপ্রভ স্পিনিং লিমিটেড ৮৩১ কোটি, সুপ্রভ রোটার স্পিনিং লিমিটেড ৬৫২ কোটি এবং এমএইচ গোল্ডেন জুট মিলস লিমিটেডে ২৯৭ কোটি টাকা।

জানা যায়, প্রথম ছয় মাসে ব্যাংকটিকে এননটেক্স নামমাত্র টাকা পরিশোধ করেছে। তবে এ পরিমাণ সুদ মওকুফের পরও যেহেতু ছয় মাসে এননটেক্স ঋণ পরিশোধ করতে পারেনি। বাকি ছয় মাসে পরিশোধে সক্ষম হবে কি না, তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ব্যাংক-খাত সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান এসএম মাহফুজুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, সাধারণত ওয়ান টাইম এক্সিট পলিসিতে এক বছর সময় দেয়া যায়। তবে গ্রুপটিকে চাপে রাখার জন্য প্রথমে ছয় মাস সময় দেয়া হয়েছিল। এ সময়ে ঋণ পরিশোধ করতে না পারার কারণে আরও ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে।

এর আগে জনতা ব্যাংকের গত ২০২২ সালের ২৮ নভেম্বরের ৭৪৬তম পর্ষদ সভায় ৪ হাজার ৮১৯ কোটি পরিশোধের শর্তে ঋণ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করা এননটেক্স গ্রুপকে ৩ হাজার ৩৫৯ কোটি টাকা সুদ মওকুফ করে জনতা ব্যাংক। ‘ওয়ান টাইম এক্সিট’ নীতির আলোকে আলোচিত এ গ্রুপকে বিশাল অঙ্কের এ সুদ মওকুফ করা হয়। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক সুদ মওকুফ ও ঋণ পুনঃতফসিল সুবিধা ব্যাংকগুলোর হাতে ছেড়ে দেয়। এরপর নিজেদের ক্ষমতা বলে বিশাল অঙ্কের সুদ মওকুফ করে জনতা ব্যাংক।

জনতা ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, এননটেক্স গ্রুপের ১৮টি প্রতিষ্ঠানের কাছে প্রকল্প ঋণ, সিসি (হাইপো: টার্ম লোন) ও সৃষ্ট পিএডিসহ (টার্ম লোন) বর্তমানে ৮ হাজার ১৭৮ কোটি ৯২ লাখ টাকা পাওনা জনতা ব্যাংকের। এর মধ্যে গত জুনের মধ্যে ৪ হাজার ৮১৯ কোটি ৭৩ লাখ টাকা আদায় সাপেক্ষে ৩ হাজার ৩৫৯ কোটি ১৯ লাখ টাকার সুদ মওকুফ করার সিদ্ধান্ত হয় ওই সময়ের বোর্ড সভায়। যার মধ্যে আরোপিত সুদের দুই হাজার ৮৩ কোটি ৭৬ লাখ টাকা (সাসপেন্স খাতে রক্ষিত সুদ)। আর অনারোপিত সাধারণ সুদের ১০০ শতাংশ বাবদ ৯৭২ কোটি ৪৪ লাখ টাকা এবং অনারোপিত দণ্ড সুদের ১০০ শতাংশ বাবদ ৩০২ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। সর্বমোট অনারোপিত সুদ এক হাজার ২৭৫ কোটি ৪৩ লাখ টাকা মওকুফ করা হয়। নির্ধারিত সময়ে এননটেক্স ৪ হাজার ১৭৮ কোটি ৯২ লাখ টাকা পরিশোধ করতে না পারলে ঋণটি আগের অবস্থায় ফিরে যাবে এবং তা পুনরায় ‘বিএল’ মানে শ্রেণিকরণ করা হবে ওই বোর্ড সভায় জানানো হয়। তবে ঋণটি খেলাপি না করে পুনারায় আরও ছয় মাসে মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়।

উল্লেখ্য, জনতা ব্যাংক ২০১০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে এননটেক্স গ্রুপের ১৮টি কোম্পানির মধ্যে ৩ হাজার ৪১৭ কোটি ৯ লাখ টাকার ঋণ বিতরণ করেছে, যা ঋণদাতার মূলধনের ২৫ শতাংশের বেশি এবং ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১-এর অধীনে নির্ধারিত একক ঋণগ্রহীতার এক্সপোজার সীমা লঙ্ঘন করে।

গত ৭৪৬তম বোর্ড সভার তথ্য অনুযায়ী, আসল ও সুদসহ বর্তমানে গ্রুপটির কাছে ৮ হাজার ১৭৮ কোটি ৯২ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে জনতা ব্যাংকের। এর মধ্যে পুনর্গঠিত ঋণ রয়েছে এক হাজার ১৯৯ কোটি ৬৬ লাখ টাকার। গ্রাহক থেকে ওই বোর্ডসভার আগ পর্যন্ত ১ হাজার ৫৫২ কোটি ৯০ লাখ টাকা আদায় করেছে ব্যাংকটি। বিপুল পরিমাণ ঋণের টাকা কয়েক বছর আটকে থাকার পর এ সিদ্ধান্ত নেয় ব্যাংকটি।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০