স্মরণীয়-বরণীয়

বিংশ শতকের অন্যতম সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলীর ১১৯তম জন্মদিন আজ। তিনি উপন্যাসিক, ছোট গল্পকার, অনুবাদক ও রম্য রচয়িতা হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেন। বিবিধ ভাষার শ্লোক ও রূপক ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যকে তিনি এক স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য দান করেছেন। তার রচিত ভ্রমণকাহিনীর জন্য তিনি বিশেষভাবে জনপ্রিয়।

সৈয়দ মুজতবা আলী ১৯০৪ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর সিলেট জেলার করিমগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। তার পৈতৃক নিবাস ছিল হবিগঞ্জের উত্তরসুর গ্রামে। করিমগঞ্জ সরকারি স্কুলে তিনি নবম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। ১৯২১ সালে তিনি শান্তিনিকেতনে ভর্তি হন। তিনি বিশ্বভারতীর প্রথম দিকের ছাত্র ছিলেন। তিনি সেখানে বাংলা ভাষার পাশাপাশি উর্দু, সংস্কৃত, সাংখ্য, বেদান্ত, ইংরেজি, ফরাসি, জার্মান, ফারসি, আরবি, ইতালিয়ান, হিন্দি ও গুজরাটি ভাষাসহ পনেরোটি ভাষা শিক্ষা লাভ করেন। এরপর তিনি আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন।

শান্তিনিকেতনে অধ্যয়নকালে বিশ্বভারতী পত্রিকায় তার কয়েকটি লেখা প্রকাশিত হয়। ১৯২৬ সালে তিনি স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে দর্শনশাস্ত্র পড়ার জন্য বৃত্তি নিয়ে জার্মানির বন বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। তার ডি.ফিল অভিসন্দর্ভটি ১৯৩২ সালে বন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত হয়। ১৯৩৪-৩৫ সালে তিনি মিশরের আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন। সৈয়দ মুজতবা আলী তার কর্মজীবনের শুরুতে কাবুলের শিক্ষা দপ্তরে অধ্যাপনা করেন। প্রায় ২৩ বছর তিনি শিক্ষকতা পেশায় অতিবাহিত করেন। পরে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেশন্সের সচিব ও অল ইন্ডিয়া রেডিওর কর্মকর্তা হন। ১৯৬১ সালে তিনি বিশ্বভারতীর ইসলামের ইতিহাস বিভাগে রিডার হিসেবে যোগদান করে সেখান থেকেই ১৯৬৫ সালে অবসর গ্রহণ করেন। সৈয়দ মুজতবা আলী ‘দেশ বিদেশ’ গ্রন্থ রচনার মাধ্যমে সাহিত্য জগতে  প্রবেশ করেন। তিনি সত্যপীর, রায়পিথোরা, ওমর খৈয়াম, টেকচাঁদ, প্রিয়দর্শী ইত্যাদি ছদ্মনামে আনন্দবাজার, দেশ, সত্যযুগ,  শনিবারের চিঠি, বসুমতী, হিন্দুস্তান স্ট্যান্ডার্ড প্রভৃতি পত্র-পত্রিকায় কলাম লিখেছেন। এছাড়া মোহাম্মদী, চতুরঙ্গ, মাতৃভূমি, কালান্তর, আল-ইসলাহ্  প্রভৃতি সাময়িক পত্রেরও তিনি নিয়মিত লেখক ছিলেন। তার মোট ত্রিশটি উপন্যাস, গল্প, প্রবন্ধ, ভ্রমণকাহিনী, অনুবাদ ও রম্যরচনা প্রকাশিত হয়েছে। সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য : ভ্রমণকাহিনী-দেশে-বিদেশে, জলে-ডাঙায়; উপন্যাস;- অবিশ্বাস্য, শবনম, শহর-ইয়ার; রম্যরচনা;- পঞ্চতন্ত্র, ময়ূরকণ্ঠী এবং ছোটগল্প;- চাচা-কাহিনী , টুনি মেম। ‘পূর্ব-পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা’ তার একটি অনবদ্য গ্রন্থ। তিনি ১৯৭৪ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন।

কাজী সালমা সুলতানা

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০