যান্ত্রিক ত্রুটিতে ফের বন্ধ হলো রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র

নিজস্ব প্রতিবেদক: চালুর পর থেকেই বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের। যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে আবারও বন্ধ হয়ে গেছে বাগেরহাটের রামপালে নির্মিত কয়লাভিত্তিক এ তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন। এ নিয়ে আট মাসের মধ্যে সপ্তমবার বন্ধ হলো কেন্দ্রটি। গতকাল রাত ১১টা ২৬ মিনিট থেকে এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। মূলত বিদ্যুৎকেন্দ্রটির ছাই নির্গমন প্রক্রিয়ায় ত্রুটির কারণে এটি বন্ধ রাখা হয়েছে।

এর আগে কয়লা সংকটের কারণে চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি, ২৩ এপ্রিল ও ৩০ জুলাই রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। প্রথমবার কয়লা সরবরাহ স্বাভাবিক না হওয়ায় প্রায় এক মাস বন্ধ ছিল কেন্দ্রটি। দ্বিতীয় দফা কয়লা সংকটে কেন্দ্রটি প্রায় দুই সপ্তাহ বন্ধ ছিল। আর তৃতীয় দফা বন্ধ ছিল প্রায় ১৬ দিন। এর বাইরে কয়লা সংকটে বিভিন্ন সময়ে আংশিক উৎপাদন চলে কেন্দ্রটিতে। পাশাপাশি ১৫ এপ্রিল রাত থেকে তিন দিন যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বন্ধ থাকে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন।

এরপর ৩০ জুন কেন্দ্রটি দ্বিতীয় দফা বন্ধ হয় কারিগরি ত্রুটির কারণে। সেবার চালু হতে ১০ দিনের বেশি সময় লাগে। যদিও চালু হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে ১৬ জুলাই আবার কারিগরি ত্রুটির কারণে বন্ধ হয় রামপাল। প্রায় এক সপ্তাহ সেবারও বন্ধ ছিল কেন্দ্রটি। এছাড়া গত প্রায় এক মাস ধরে কয়লা সংকটে পূর্ণ ক্ষমতায় উৎপাদন হচ্ছে না কেন্দ্রটিতে। এর মধ্যে গতকাল রাতে আবারও কারিগরি ত্রুটিতে বন্ধ হয়ে গেছে কেন্দ্রটি।

কবে নাগাদ রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু হতে পারে জানতে বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (বিআইএফপিসিএল) উপ-মহাব্যবস্থাপক আনোয়ারুল আজিমকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে তাকে হোয়াটসঅ্যাপে ম্যাসেজ দেয়া হলে তিনি তা দেখলেও (সিন করলেও) কোনো উত্তর দেননি।

যদিও বারবার কারিগরি ত্রুটিতে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রটির প্রথম ইউনিটের উৎপাদন বন্ধ হওয়াকে মোটেও স্বাভাবিক মনে করছেন না বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কর্মকর্তারা। তাদের মধ্যে একাধিক কর্মকর্তা বলেন, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটটির যন্ত্রপাতিতে কিছু সমস্যা রয়েছে। এগুলো ঠিকমতো কাজ করছে না। তবে দ্বিতীয় ইউনিটটি নির্মাণের সময় এ বিষয়টিতে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

তারা আরও বলেন, দ্বিতীয় ইউনিটটি চালুর পর প্রথম ইউনিটটি পুরোপুরি বন্ধ (শাটডাউন) করে এগুলো সমাধান করা হবে। এরপর প্রথম ইউনিট থেকে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়া যাবে বলে আশা করা যায়।

সূত্রমতে, গত বছর ৬ সেপ্টেম্বর রামপাল এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্রজেক্টের আওতায় ৬৬০ মেগাওয়াটের প্রথম ইউনিটটি উদ্বোধন করা হয়। তবে এটি চূড়ান্ত উৎপাদন শুরু করে অক্টোবরে। প্রাথমিক পর্যায়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি চালু রাখতে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির আওতায় ৮০ লাখ মেট্রিক টন কয়লা কেনার সিদ্ধান্ত হয়। যদিও ডলার সংকটের কারণে চাহিদামতো কয়লা আমদানি করতে পারেনি বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। এছাড়া দ্বিতীয় ইউনিটটির কাজ ৮০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী মাস থেকে এটির পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু করার কথা রয়েছে।

প্রসঙ্গত, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে পিডিবি ও ভারতের জাতীয় তাপবিদ্যুৎ করপোরেশনের (এনটিপিসি) ৫০ শতাংশ করে শেয়ার রয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণের ঠিকাদার কোম্পানি হিসেবে কাজ করেছে ভারত হেভি ইলেক্ট্রিক্যালস লিমিটেড (ভেল)। এটি নির্মাণে এক শতাংশ সুদে ১২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে ভারতের এক্সিম ব্যাংক। বাকি এক হাজার ৬০০ কোটি টাকা করে ইক্যুইটি বিনিয়োগ করেছে পিডিবি ও এনটিপিসি।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০