নিজস্ব প্রতিবেদক: গত এক দিনে, অর্থাৎ মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত সারাদেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে তিন হাজার ১৫ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮৫৭ জন আর ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন তিন হাজার ২৫ জন।
এ সময়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরও ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর আগে গত ২ সেপ্টেম্বরও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারান ২১ জন।
গতকাল বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে মোট ১০ হাজার ২৬৩ ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন আছেন। ঢাকার সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে তিন হাজার ৮১৯ জন এবং অন্যান্য বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ছয় হাজার ৪৪৪ জন ভর্তি রয়েছেন।
চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সারাদেশে এখন পর্যন্ত এক লাখ ৭৬ হাজার ৮১০ রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকায় ৭৫ হাজার ৮৩৩ জন এবং ঢাকার বাইরে চিকিৎসা নিয়েছেন এক লাখ ৯৭৭ জন।
আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন এক লাখ ৬৫ হাজার ৬৮০ জন। ঢাকায় ৭১ হাজার ৪২৬ এবং ঢাকার বাইরে ৯৪ হাজার ২৫৪ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।
চলতি বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত ৮৬৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।
দেশের ৬৪ জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গু। পরিস্থিতি যেন মহামারির দিকে যাচ্ছে। প্রতিদিন আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। রাজধানীতে ডেঙ্গু পরিস্থিতি কিছুটা স্থিতিশীল থাকলেও ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোয় প্রতিনিয়ত বাড়ছে রোগীর চাপ। এ অবস্থা নিয়ন্ত্রণে দেশের স্বাস্থ্য বিভাগের পাশাপাশি সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় কাজ করলেও কিছুতেই যেন লাগাম টানা যাচ্ছে না। চিকিৎসা-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, হাসপাতালগুলোয় ডেঙ্গু রোগী বাড়তে থাকায় দেশের বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে শয্যাসংকট। সেই সঙ্গে রোগীর অতিরিক্ত চাপে নাকাল হচ্ছেন চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা।
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য সাধারণত ডেঙ্গু এনএস-১ অ্যান্টিজেন, অ্যান্টিবডি পরীক্ষা, সিবিসি (প্লাটিলেট কাউন্টসহ) পরীক্ষা করাই যথেষ্ট। তবে রোগীর অবস্থা জটিল হলে বা রক্তক্ষরণের মতো সমস্যা দেখা দিলে আরও কিছু টেস্ট করানো দরকার হয়। কেউ ডেঙ্গু পজিটিভ কি না, সেটি এনএস-১ টেস্টের মাধ্যমে জানা যায়। তবে ডেঙ্গু ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার শুরুর দিকেই এ পরীক্ষা করতে হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসি বলছে, জ্বরের প্রথম দিন থেকেই ডেঙ্গু এনএস-১ টেস্টের ফল পজিটিভ আসে। তবে চতুর্থ বা পঞ্চম দিনে হলে এটি নেগেটিভ হয়ে যায়। তাই চিকিৎসকরা সাধারণত টেস্টের ফলের সঙ্গে অন্য উপসর্গ ও লক্ষণ মিলিয়ে সিদ্ধান্ত নেন।
আইজিএম বা আইজিজি পরীক্ষার মাধ্যমে ডেঙ্গু আরও ভালোভাবে শনাক্ত করা যায়। এ বিষয়ে সিডিসি বলছে, সাধারণত জ্বর হয়ে যাওয়ার চার থেকে পাঁচ দিন অতিবাহিত হলে এবং এর মধ্যে কোনো পরীক্ষা না করা হলে আইজিজি পরীক্ষার নির্দেশনা দেয়া হয়। এ পরীক্ষার মাধ্যমে পজিটিভ কি না, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়।
তবে একদিক দিয়ে এনএস-১-এর সঙ্গে আইজিজির মিল রয়েছে। নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হলে এ পরীক্ষার ফলও নেগেটিভ আসতে পারে। সাধারণত, জ্বর ৯ থেকে ১০ দিন পার হলে এ পরীক্ষার ফল নেগেটিভ আসে।