ছয় প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগ করবে ৬৯ মিলিয়ন ডলার

নিজস্ব প্রতিবেদক: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে ছয়টি প্রতিষ্ঠান মোট ৬৯ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। এজন্য বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) সঙ্গে লিন্ডে বাংলাদেশ, মাস্টার র‌্যাক অ্যান্ড ফার্নিচার, সানজানা ফেব্রিকস, ওএমসি, এসএফএল হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট এবং কিনবো ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রিজের মধ্যে জমি বরাদ্দের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। গতকাল বুধবার বেজা কার্যালয়ে এই চুক্তিগুলো স্বাক্ষরিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন। সভায় বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং বেজার কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

লিন্ডে বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে পাঁচ একর জমিতে অক্সিজেন ম্যানুফ্যাকচারিং প্লান্ট স্থাপন করবে, যে খাতটি এই শিল্পনগরে এ মুহূর্তে নতুন। প্রতিষ্ঠানটি শিল্প স্থাপনে প্রায় ১৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে। প্রতিষ্ঠানটি ১৯৫৩ সাল থেকে গ্যাস ও ইঞ্জিনিয়ারিং খাতে অবদান রেখে চলেছে। এই বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানটির পূর্ববর্তী নাম বাংলাদেশ অক্সিজেন লিমিটেড। লিন্ডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিভাবসু সেনগুপ্ত বলেন, মেডিকেল গ্যাস ছাড়াও ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্যাস, যেমন নিয়ন, আর্গন, হাইড্রোজেন এবং ইলেক্ট্রোড উৎপাদন ও সরবরাহে প্রতিষ্ঠানটি শীর্ষস্থানে রয়েছে। জমি হস্তান্তরের পরই তারা দ্রুত শিল্প স্থাপন করতে আগ্রহী।

মাস্টার র‌্যাক অ্যান্ড ফার্নিচার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে তিন একর জমিতে শিল্প কারখানার জন্য উপযুক্ত র‌্যাক ও অন্যান্য আসবাব উৎপাদন শিল্প স্থাপন করতে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি শিল্প স্থাপনে প্রায় ৭০ লাখ মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে এবং প্রস্তাবিত কর্মসংস্থান প্রায় ৮০০ জন। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী আল মামুন বলেন, বিভিন্ন খ্যাতনামা স্থানীয় ও বহুজাতিক কোম্পানিতে তার প্রতিষ্ঠান সুনামের সঙ্গে বিভিন্ন পণ্য সরবরাহ করে আসছে। তিনি জানান, আগে এই র‌্যাক আমদানি করা হলেও এখন স্থানীয় বাজারের বিকাশ হয়েছে এবং উৎপাদিত হচ্ছে। তিনি আরও উল্লেখ করেন ইটালিয়ান প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে বিশ্বমানের পণ্য তৈরি করছে তার প্রতিষ্ঠান। 

সানজানা ফেব্রিকস সাবরাং ট্যুরিজম পার্কে তিন একর জমিতে ২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগে হোটেল ও রিসোর্ট গড়ে তুলবে। এশিয়াটিক গ্রুপের এই সহযোগী প্রতিষ্ঠান ২০০৪ সাল থেকে দেশে শিল্পের প্রসারে কাজ করছে। প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সোহরাব হোসেইন বলেন, পর্যটন বিকাশে তার প্রতিষ্ঠান ব্যাপক ভূমিকা ও অবদান রাখতে ইচ্ছুক।

ওএমসি লিমিটেড সাবরাং ট্যুরিজম পার্কে দুই একর জমিতে সাত মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগে হোটেল ও রিসোর্ট গড়ে তুলবে এবং প্রস্তাবিত কর্মসংস্থান প্রায় ৩৫০ জন। প্রতিষ্ঠানের পরিচালক রিজোয়ান মান্নান বলেন, আমার প্রতিষ্ঠান ৪৩ বছর ধরে বাংলাদেশে স্টেইনলেস স্টিল, কিচেন সামগ্রী, টেক্সটাইল টেস্টিং, রিয়েল এস্টেট শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। রিয়েল এস্টেট শিল্পে আগের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে কক্সবাজারে বিশ্বমানের সেবা বিকাশে তার প্রতিষ্ঠান বদ্ধপরিকর।

এছাড়া এসএফএল হোটেল অ্যান্ড রিসোর্ট সাবরাং ট্যুরিজম পার্কে ছয় একর জমিতে প্রায় ১৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগে হোটেল ও রিসোর্ট গড়ে তুলবে। এতে প্রায় এক হাজার জনের কর্মসংস্থান হবে। এই প্রতিষ্ঠানটি স্ট্র্যাটেজিক ফাইন্যান্স লিমিটেড নামীয় মার্চেন্ট ব্যাংকের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাত বলেন, অবকাঠামো, বিদ্যুৎ ও টেলিকম খাতে তার কোম্পানি ২০০৮ থেকে কাজ করছে। তিনি জানান, এরই মধ্যে তার প্রতিষ্ঠান এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট পাওয়ার প্লান্ট স্থাপন ছাড়াও বৃহৎ টেলিকম প্রতিষ্ঠানগুলোর টাওয়ার ব্যবস্থাপনা ও সাবমেরিনের কাজে যুক্ত রয়েছে। সাবরাং ট্যুরিজম পার্কে বিশ্বখ্যাত হোটেল চেইন ম্যারিওটের বিনিয়োগের বিষয়ে কাজ করছে তার প্রতিষ্ঠান।

অন্যদিকে জামালপুর অর্থনৈতিক অঞ্চলে কিনবো ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রিজ দুই একর জমিতে প্রায় ২০ লাখ ডলার বিনিয়োগে কিচেন সামগ্রী শিল্পকারখানা স্থাপন করবে। উল্লেখ্য, প্রতিষ্ঠানটি মিয়াকো অ্যাপ্লায়েন্সের একটি সহযোগী প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ নাভিদ আহমেদ বলেন, মিয়াকো একটি সুপরিচিত ব্র্যান্ড, যা দেশের আমদানীনির্ভর কিচেন অ্যাপ্লায়েন্স খাতকে উৎপাদনশীল খাতে পরিণত করছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে কিচেন অ্যাপ্লায়েন্সের চাহিদা পূরণে ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য তিনি অর্থনৈতিক অঞ্চলকে বেছে নিয়েছেন।

বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান শেখ ইউসুফ হারুন সব বিনিয়োগকারীকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, এসব প্রতিষ্ঠানই স্বনামধন্য এবং দেশে ও আন্তর্জাতিক বাজারে সুনামের সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনা করছে। কাজেই বেজার সঙ্গে এসব বিনিয়োগকারীর যোগসূত্র স্থাপনের ফলে অর্থনৈতিক অঞ্চলের বিনিয়োগ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে পণ্যের বৈচিত্র্য সাধন হবে।

তিনি আরও বলেন, অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় বিনিয়োগকারীদের পরিষেবা প্রদানে অনেক চ্যালেঞ্জ থাকলেও বেজা তা সাফল্যের সঙ্গে মোকাবিলা করে সব সরকারি সংস্থার সঙ্গে সুসমন্বয়ের মাধ্যমে পানি, গ্যাস ও বিদ্যুতের সংযোগ নিশ্চিত করছে। তিনি বলেন, সিইটিপি স্থাপন করে অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় আন্তর্জাতিক মান নিশ্চিতকরণে বেজা বিভিন্ন উন্নয়ন অংশীদারের সঙ্গে কাজ করছে।     

বেজার পক্ষে নির্বাহী সদস্য (বিনিয়োগ উন্নয়ন) মজিবর রহমান এবং লিন্ডে বাংলাদেশের পক্ষে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিভাবসু সেনগুপ্ত, মাস্টার র‌্যাক অ্যান্ড ফার্নিচারের পক্ষে প্রোপাইটর আল মামুন, সানজানা ফেব্রিকস লিমিটেডের পক্ষে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহরাব হোসেইন, ওএমসি লিমিটেডের পক্ষে প্রতিষ্ঠানের পরিচালক রিজোয়ান মান্নান, এসএফএল হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টের পক্ষে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক চৌধুরী নাফিজ সরাফাত এবং কিনবো ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রিজের পক্ষে প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ নাভিদ আহমেদ চুক্তি স্বাক্ষর করেন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০