প্রখ্যাত সংগীতজ্ঞ শচীন দেববর্মণের ১১৮তম জন্মদিন আজ। তিনি এসডি বর্মণ নামে বিশেষভাবে পরিচিত। সংগীতশিল্পী ছাড়াও তিনি সুরকার, গীতিকার ও সংগীত পরিচালক হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন।
শচীন দেব বর্মণ কুমিল্লায় কুমার বাহাদুর নবদ্বীপচন্দ্রের প্রাসাদে ১৯০৬ সালের ১ অক্টোবর জš§গ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন ত্রিপুরার চন্দ্রবংশীয় মানিক্য রাজপরিবারের সন্তান। ১৯২০ সালে তিনি কুমিল্লা জিলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক, ১৯২২ সালে ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে আইএ ও একই প্রতিষ্ঠান থেকে বি.এ পাস করেন। ১৯২৪ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএ ভর্তি হন। কুমিল্লায় থাকাকালীন বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের সঙ্গে তার পারিবারিক সখ্য গড়ে ওঠে।
শচীন দেব বর্মণ ছেলেবেলা থেকেই লোকসংগীতের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন। তিনি প্রচুর লোকসংগীত সংগ্রহ করেছেন এবং রাগসংগীতের সংমিশ্রণে সুরারোপ করে নতুন নতুন সুর সৃষ্টি করেছেন।
লেখাপড়া শেষ করে তিনি কিছুদিন ত্রিপুরার রাজদরবারে চাকরি করেন। পরে চাকরি ছেড়ে দিয়ে কলকাতা চলে যান। সেখানে ওস্তাদ বাদল খাঁ, আলাউদ্দিন খাঁ, ফৈয়াজ খাঁ, আব্দুল করিম খাঁ, ভীষ্মদেব, কানা কৃষ্ণ প্রমুখ সংগীত বিশারদের কাছে রাগসংগীতে আনুষ্ঠানিক তালিম গ্রহণ করেন।
১৯২৩ সালে আকাশবাণী কলকাতা কেন্দ্রে তিনি প্রথম গান পরিবেশন করেন। ১৯৩২ সালে ভারতের বিখ্যাত রেকর্ড প্রস্তুতকারী শীর্ষ প্রতিষ্ঠান এইচএমভিতে তিনি অডিশনে প্রথমে অকৃতকার্য হলেও, সে বছরই তিনি তার প্রথম গ্রামোফোন রেকর্ড বের করতে সফল হন। তিনি নজরুল সংগীত ও পল্লীগীতি গেয়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। ১৯৩৪ সালে নিখিল ভারত সংগীত সম্মিলনে গান গেয়ে তিনি স্বর্ণপদক লাভ করেন। ১৯৩৭ সালে রাজগী নামক চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তিনি সংগীত পরিচালনা শুরু করেন।
লোকসংগীতের বাইরে শচীন দেব বর্মণ নজরুলের কথা ও সুরে ৪টি গান রেকর্ড করেন। ১৯৩৭ সাল থেকে বাংলা ছায়াছবিতে তিনি সংগীত পরিচালনা করেন। তিনি ৮০টির মতো হিন্দি চলচ্চিত্রে সংগীত পরিচালনা করে চিত্রজগতে খ্যাতি অর্জন করেন। তার বহুসংখ্যক বাংলা ও হিন্দি গানের রেকর্ড প্রকাশিত হয়েছে।
সংগীতে অবদানের জন্য শচীন দেব বর্মণ প্রচুর পুরস্কার ও স্বীকৃতি লাভ করেন। তিনি ১৯৬৯ সালে ভারত সরকারের ‘পদ্মশ্রী’ উপাধি এবং চলচ্চিত্রে হিন্দি গানের নেপথ্য গায়ক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ভূষিত হন। বাংলা গানের এই কিংবদন্তি শিল্পী ১৯৭৫ সালের ৩১ অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন।
কাজী সালমা সুলতানা
