রিজার্ভ ও রাজস্ব আদায়ের শর্ত পূরণ হয়নি

নিজস্ব প্রতিবেদক: আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বাংলাদেশকে দেয়া ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের অন্যতম শর্ত ছিল চলতি বছরের জুনে নিট আন্তর্জাতিক রিজার্ভ (এনআইআর) ২৪ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলার এবং সেপ্টেম্বরে তা ২৫ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে রাখা। তবে এই শর্ত পূরণ করতে পারেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এছাড়া রাজস্ব আহরণের শর্তও পুরণ হয়নি।

গতকাল বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আইএমএফ প্রতিনিধিদলের একাধিক বৈঠক হয়। বৈঠকে কী কারণে এ দুটি শর্ত পূরণ করা সম্ভব হয়নি তার কারণ ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এছাড়া দাতা সংস্থাটির দেয়া অন্যান্য শর্ত পূরণের অগ্রগতিও তুলে ধরা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক সাংবাদিকদের বলেন, আইএমএফ ঋণ অনুমোদনের সময় আমাদের কিছু শর্ত দিয়েছিল। এর মধ্যে বেশ কিছু শর্ত পূরণ করা হয়েছে। এগুলো হলোÑ বিপিএম-৬ অনুযায়ী রিজার্ভ হিসাবায়ন করা হচ্ছে। মুদ্রার বাজার-নির্ধারিত বিনিময় হার প্রবর্তন করা হয়েছে। সুদহারের নতুন নিয়ম চালু করা হয়েছে। তবে দুটি বিষয়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হয়নি। এগুলো হলো-নির্ধারিত রিজার্ভ সংরক্ষণ ও রাজস্ব আহরণের শর্ত। এসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকার কর্তৃক গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের বিষয়ে মিশনকে অবহিত করা হয়।

শর্ত পূরণ ও ব্যর্থতা নিয়ে আইএমএফের পক্ষ থেকে কী বলা হয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের এ মুখপাত্র বলেন, আজকে (গতকাল) বৈঠক শুরু হয়েছে। তারা (আইএমএফ) বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার সঙ্গে বসে আলোচনা করবে। প্রথম তথ্য নিচ্ছে তারপর আবার বৈঠক করবে। আগামী ১৯ অক্টোবর শেষ মিটিং; সেখানে তাদের মতামত জানাবে, আমরাও আমাদের বিষয়গুলো জানাব।

জানা যায়, আইএমএফের শর্ত মেনে গত জুলাই থেকে ব্যাল্যান্স অব পেমেন্ট অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ইনভেস্টমেন্ট পজিশন (বিপিএম-৬) অনুযায়ী, মোট রিজার্ভের হিসাবায়ন (জিআইআর) ও এর তথ্য প্রকাশ শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এক্ষেত্রে রিজার্ভের অর্থে গঠিত রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ), গ্রিন ট্রান্সফরমেশন ফান্ড (জিটিএফ) ও লং টার্ম ফাইন্যান্সিং ফ্যাসিলিটি (এলটিএফএফ), ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ট্রেড ফাইন্যান্স করপোরেশনে (আইটিএফসি) আমানত, রিজার্ভ থেকে সোনালী ব্যাংকের মাধ্যমে (এসবিএফএফ) পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ ও বাংলাদেশ বিমানকে করা অর্থায়ন এবং কারেন্সি সোয়াপের আওতায় শ্রীলংকাকে দেয়া ঋণ বাদ দিয়ে দেখাতে হচ্ছে। বিপিএম-৬ ম্যানুয়াল অনুযায়ী, এসব দায় রিজার্ভ হিসেবে বিবেচিত হবে না। সংস্থাটির ভাষায় এগুলো নন লিকুইড সম্পদ বা ইনভেস্টমেন্ট গ্রেড সিকিউরিটিজ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত তথ্য বলছে, আইএমএফের হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী জুনে মোট রিজার্ভ (জিআইআর) ছিল ২৪ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার। সেটা গত ২৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তা কমে দাঁড়িয়েছে ২১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলারে। অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে গত জুনে দেশের মোট রিজার্ভ ছিল ৩১ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলার। সেটা গত ২৪ সেপ্টেম্বরে কমে দাঁড়িয়েছে ২৭ দশমিক ০৫ বিলিয়ন  ডলারে। তবে আইএমএফের বাধ্যবাধকতা না থাকায় নিট রিজার্ভের (এনআইআর) তথ্য প্রকাশ করছে না বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে এনআইআরের তথ্য নিয়মিত আইএমএফকে জানাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংকে।

আইএমএফের নিয়ম অনুযায়ী, নিট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ (এনআইআর) হিসাবে আগামী ৬০ দিনে পরিশোধ করতে হবে এমন দায়ও রির্জাভ থেকে বাদ দিয়ে দেখাতে হয়। এসব দায়ের মধ্যে রয়েছেÑএশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) পাওনা, ফরেন কারেন্সি ক্লিয়ারিং অ্যাকাউন্ট, এসডিআর অ্যালোকেশন, আইএমফের ট্রাস্ট ফান্ড (ইসিএফ) ও জাপানের ডেট রিলিভ গ্যারান্টের অর্থ। এসব দায়বাবদ বর্তমানে প্রায় সাড়ে ৩ বিলিয়নের মতো ঋণ রয়েছে। ফলে নিট রিজার্ভ দাঁড়াবে ১৮ বিলিয়ন ডলারের কম। গত জুনেও নিট রিজার্ভ ছিল ২০ বিলিয়নের কিছু বেশি।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০