রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধায় বাড়ছে তিস্তার পানি

প্রতিনিধি, রংপুর: উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টিতে রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধায় তিস্তার পানি বাড়ছে। চরাঞ্চলের মানুষকে সতর্ক থাকতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কুড়িগ্রামে মাইকিং করা হয়েছে। তবে নীলফামারীতে কমছে তিস্তার পানি।

গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে রংপুরের কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। পানি ৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সতর্কবার্তাও দেয়া হয়েছে। সন্ধা ছয়টার দিকে লালমনিরহাটের দোয়ানীতে অবস্থিত ডালিয়ায় তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তবে এখানে গত বুধবার রাত ১০টায় বিপৎসীমার ২৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রভাবিত হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার রংপুর, কুড়িগ্রাম ও নীলফামারী পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

আগামী ১২ ঘণ্টায় পাহাড়ি ঢলে পানি বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় রংপুরের তিস্তাতীরবর্তী তিনটি উপজেলার নদীপারের মানুষদের সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। কাছাকাছি উঁচু স্থান কিংবা বিদ্যালয়ে আশ্রয় নেয়ার জন্য প্রতিটি উপজেলার পক্ষ থেকে সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে।

গতকাল সকালে ১০টার দিকে রংপুরের আকাশে কালো মেঘ দেখা যায়। সেই সঙ্গে বইছিল হিমেল বাতাস। বুধবার রাতে রংপুরের কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি ২৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও আজ সকাল সেই পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার তিস্তাপারের মানুষের মধ্যে আবারও বন্যার আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। গত দুই মাসের ব্যবধানে পাঁচ দফায় বন্যার পানি ওঠানামা করেছে। এবার ষষ্ঠবারের মতো আবারও নদীর পানি বাড়তে শুরু করায় ভাঙনের শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

পাউবো রংপুর কার্যালয়ের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আহসান হাবিব বলেন, উজানে ভারতের কোচবিহার, শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, কালিমপংসহ আরও কিছু এলাকায় ভারী বৃষ্টি হয়েছে। সেই উজানের পানি নেমে আসায় তিস্তার পানি বাড়ছে।

রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান বলেন, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্কুলগুলো দিন-রাত খোলা রাখা হয়েছে। সেই সঙ্গে উপজেলা প্রশাসন ও ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে শুকনা খাবারের ব্যবস্থাও রয়েছে।

কুড়িগ্রাম সংবাদদাতা জানান, জেলায় তিস্তা নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রাজারহাট ও উলিপুর উপজেলার তিস্তা অববাহিকার নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হয়ে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

কুড়িগ্রাম পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ভারতের উত্তর সিকিমে তিস্তার বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় কুড়িগ্রামে হঠাৎ এই বন্যা

পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় তিস্তা নদীর কাউনিয়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৩০ সেন্টিমিটার ওপরে ছিল। তিস্তার পানি বাড়া অব্যাহত থাকলেও দুপুরের দিকে পানি কমে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে তিস্তার পানি এবার বিপৎসীমার সর্বোচ্চ ৫০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রভাবিত হতে পারে।

তিস্তা নদীর পানি বাড়তে থাকায় জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে রাজারহাট উপজেলার বিদ্যানন্দ ইউনিয়ন, ঘড়িয়ালডাঙ্গা ইউনিয়ন ও উলিপুর উপজেলার তিস্তা অববাহিকার চরাঞ্চলে মাইকিং করে লোকজনকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ বলেন, তিস্তাতীরবর্তী মানুষের জন্য চারটি রেসকিউ বোট, ৫৮টি নৌকা ও ৫৯টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলে দেয়া হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে ত্রাণসহায়তা দেয়ার জন্য পর্যাপ্ত ত্রাণ রয়েছে।

লালমনরিরহাট প্রতিনিধি জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুনীল কুমার জানান, ডালিয়া পয়েন্টে বৃহস্পতিবার সন্ধা ছয়টার দিকে বিপৎসীমার ৬৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিআর সারওয়ার বলেন, ‘নদীতীরবর্তী স্কুলগুলোকে আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষণা করা হয়েছে। পাশাপাশি আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত ছিল। রাতে লোকজন এসব আশ্রয়কেন্দ্রে ছিলেন।’

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ বলেন, ‘আমাদের আশ্রয়কেন্দ্র সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রেখেছি। পাশাপাশি চাল, ডাল বিতরণ-ত্রাণ কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।’

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০