ব্যাংকে আমানতের দ্বিগুণ সুদ মিলছে ট্রেজারি বিলে

নিজস্ব প্রতিবেদক: সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে মধ্যবিত্ত সবাই তাদের ক্ষুদ্র সঞ্চয়কে নিরাপদে রাখার জন্য দ্বারস্থ হয় ব্যাংকের। কেউ অর্থ রাখেন সঞ্চয়ী হিসাবে। কেউবা তিন বা ছয় মাস মেয়াদি অথবা বছরের জন্য স্থায়ী আমানত রাখেন কিছুটা বেশি সুদের আশায়। তবে বর্তমানে ব্যাংক আমানতে সুদহার গড়ে সাড়ে চার শতাংশের কাছাকাছি। যদিও মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১০ শতাংশ ছুঁইছুঁই করছে।

এমন পরিস্থিতি সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে ব্যাংক-বিমা বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ তুলতে ৯ শতাংশের বেশি সুদ দিচ্ছে সরকার। গতকাল নিলামকৃত বিভিন্ন মেয়াদি ট্রেজারি বিলে (টি-বিল) সোয়া ৯ থেকে পৌনে ১০ শতাংশ সুদ অফার করা হয়েছে। এতে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে আমানত ক্রমশ সরকারের পকেটে চলে যেতে পারে আশঙ্কা করছেন ব্যাংকাররা।

সূত্রমতে, নীতি সুদহার ও ব্যাংক ঋণের সুদহার বৃদ্ধির পর এবার ট্রেজারি বিলের সুদহার বাড়ানো হয়েছে। গতকাল কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আয়োজনে অনুষ্ঠিত নিলামে ৯১ দিনের টি-বিলের সুদহার এক লাফে বেড়ে উঠেছে ৯ দশমিক ২৫ শতাংশ, যা সেপ্টেম্বরের শুরুতে ছিল ৭ দশমিক ৩০ শতাংশ। এছাড়া ১৮২ দিনের ট্রেজারি বিলে সুদহার সাড়ে ৯ শতাংশ ও ৩৬৪ দিনের ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশে উঠেছে। গত মাসের শুরুতে যা ছিল যথাক্রমে ৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ ও ৮ দশমিক ২৫ শতাংশ।

এখন কেউ সরকারি ট্রেজারি বিলে বিনিয়োগ করলে ব্যাংকের আমানতের দ্বিগুণ সুদ পাবে। কারণ বর্তমানে ব্যাংকে গড় সুদহার পাঁচ শতাংশের নিচে। তবে কোনো কোনো ব্যাংকে গ্রাহক আমানত রাখলে সর্বোচ্চ সাত শতাংশ হারে সুদ পাচ্ছে। যদিও এগুলোর বেশিরভাগই দুর্বল ব্যাংক। মূলধন ও আমানত ঘাটতির পূরণে তারা উচ্চ সুদে আমানত সংগ্রহের চেষ্টা করছে।

তথ্যমতে, গত আগস্টে ব্যাংক আমনতে গড় সুদহার ছিল ৪ দশমিক ৫২ শতাংশ। ওই মাসে সমস্যাগ্রস্ত পদ্মা ব্যাংক গ্রাহকে সর্বোচ্চ সাত দশমিক ৯৬ শতাংশ সুদ দিয়েছে। যদিও তা মানুষের জন্য পর্যাপ্ত নয়। কারণ আগস্টে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ শতাংশের ওপরে। এ সময় খাদ্যে মূল্যস্ফীতি প্রায় সাড়ে ১২ শতাংশে পৌঁছায়। এছাড়া জুলাইয়ে ব্যাংক আমানতের গড় সুদহার ছিল চার দশমিক ৪৬ শতাংশ ও জুনে চার দশমিক ৩৮ শতাংশ।

অন্যদিকে এখন তিন মাস থেকে এক বছরের ট্রেজারি বিলে বিনিয়োগ করলে সর্বনি¤œ ৯.২৫ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ সুদ পাওয়া যাবে, যা ব্যাংক আমানতের সুদহারের চেয়ে অনেক বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেন, ট্রেজারি বিলে বিনিয়োগ এখন লাভজনক খাত। কারণ এখানে এখন বেশি সুদ পাওয়া যায়, যা ব্যাংকের চেয়ে অনেক বেশি। এছাড়া ট্রেজারি বিলে উৎসে কর ৫ শতাংশ, ব্যাংকের আমানতে যা ১০ শতাংশ। আর এখানে বিনিয়োগের কোনো সীমা নেই।

তারা আরও বলেন, ব্যাংকে চেয়ে ট্রেজারি বিল বন্ডে বিনিয়োগ শতভাগ নিরাপদ। কারণ এটি সরকারি পণ্য। অধিকাংশ ব্যাংক দেউলিয়া হয়ে গেলে অর্থ পাওয়া যায় না। সেক্ষেত্রে এখানে বিনিয়োগে ওইরকম কোনো ঝুঁকি নেই। তাই ট্রেজারি বিল হতে পারে নিরাপদ বিনিয়োগের জায়গা।

সূত্রমতে, সরকারের ইস্যু করা বিল এবং বন্ডকে ট্রেজারি বিল ও ট্রেজারি বন্ড বলা হয়। কোনো বিনিয়োগকারী যেকোনো ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংকে ‘সিকিউরিটিজ হিসাব’ খুলে ১ লাখ টাকা বা তার গুণিতক যেকোনো অঙ্ক বিল ও বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারেন। নির্দিষ্ট সময় অন্তর বাংলাদেশ ব্যাংকে এগুলোর নিলাম হয়। এটি প্রাথমিক বাজার। ব্যক্তি বিনিয়োগকারীরা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় প্রাথমিক বা সেকেন্ডারি বাজার থেকে বিল বা বন্ড কিনতে পারেন। তবে বিল ও বন্ডে সাধারণ বিনিয়োগকারী নেই বললেই চলে। মূলত ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো এসব বিল-বন্ডে বিনিয়োগ করেছে।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ মাহবুবুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, সরকার মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য মার্কেট থেকে টাকা তোলার পরিকল্পনা করছে। তাই নীতি সুদহার বাড়িয়েছে, যার প্রভাব পড়েছে ট্রেজারি বিল-বন্ডের সুদে। সরকার চাচ্ছে মানুষ যাতে এখানে বিনিয়োগ করে। আবার বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকারের টাকারও দরকার আছে। এই দুই কারণে মূলত ট্রেজারি বিলের সুদহার বাড়ানো হয়েছে। 

বর্তমানে তিন মেয়াদের ট্রেজারি বিল ও পাঁচ মেয়াদের ট্রেজারি বন্ড প্রচলিত আছে। ট্রেজারি বিলের মেয়াদ ৯১ দিন, ১৮২ দিন ও ৩৬৪ দিন। আর ট্রেজারি বন্ড ২, ৫, ১০, ১৫ ও ২০ বছর মেয়াদি। এগুলোর নিলাম করে সরকার নিয়মিত ঋণ গ্রহণ করে। এগুলোর মাধ্যমে সাধারণ মানুষ ও করপোরেট প্রতিষ্ঠান থেকেও ঋণ নেয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু এসব গ্রাহক সরকারি বিল ও বন্ড কেনার প্রতি আগ্রহ দেখায় না। যে কারণে বন্ড মার্কেটের উন্নয়ন হচ্ছে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ব্যক্তি বিনিয়োগকারীরাও এখন ট্রেজারি বন্ড কিনছেন। সাধারণ মানুষ যাতে সহজে ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারেন, এজন্য নিয়মকানুনও সহজ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মেজাবউল হক শেয়ার বিজকে বলেন, পলিসি রেট বাড়ালে আমানত ও ঋণের সুদহার বাড়ে। আবার ট্রেজারি বিল-বন্ডেরও সুদহার বাড়ে। এটা জনগণের জন্য সুযোগ। কারণ ট্রেজারি বিল বন্ড এখন ব্যাংকের চেয়ে সুদহার বেশি। এখানে বিনিয়োগের কোনো লিমিট নেই। ব্যাংকের চেয়ে উৎসে করও কম। এখানে বিনিয়োগ করলে ব্যাংকের চেয়ে জনগণ লাভজনক হতে পারবে। এছাড়া এ বিনিয়োগে কোনো ঝুঁকি নেই।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০