রিজার্ভ ১০ বিলিয়নে নামলে বড় সংকটে পড়বে দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে এলে বড় ধরনের সংকট তৈরি হবে। তখন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের সহায়তাও তেমন কাজে আসবে না। তাছাড়া অনানুষ্ঠানিক উপায়ে রেমিট্যান্সের অর্থ লেনদেন হওয়ায় দেশের রিজার্ভ জমা হচ্ছে অন্য কোনো স্থানে। আর দেশের ব্যাংক খাতে অনিয়মে ভরে গেছে। এখন অনিয়মই যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে ব্যাংক খাতে। দেদার চলে ঋণ পুনঃতফসিলকরণ। আর এক শ্রেণির ব্যবসায়ী ঋণ নিয়ে ফেরত দেন না। ফেরত না দেয়ার জন্য তারা রাজনৈতিক প্রভাব কাজে লাগান।

রাজধানীর পল্টন টাওয়ারে গতকাল সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপচারিতায় এসব কথা বলেন অর্থনীতিবিদ ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান। অর্থনীতি বিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম তাদের নিজস্ব কার্যালয়ে এ আলাপচারিতার আয়োজন করে।

রেহমান সোবহান বলেন, রিজার্ভ এক সময় ৪৫ বিলিয়ন ডলার ছিল। এখন তা ১৮ বিলিয়নে নেমে এসেছে। ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকলে যদি তা ১০ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে, তাহলে বড় ধরনের সংকট দেখা দেবে। তখন আইএমএফের সহায়তা দিয়েও পার পাওয়া যাবে না। বাংলাদেশের রিজার্ভ যেভাবে ধারাবাহিকভাবে কমছে, তার সঙ্গে শ্রীলঙ্কার মিল খুঁজে পান রেহমান সোবহান। তবে তিনি মনে করেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি শ্রীলঙ্কার ভাগ্য বরণ করবে না। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের বড় একটি রপ্তানি খাত আছে। সেই সঙ্গে আছে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয়, যা শ্রীলঙ্কার চেয়ে অনেক বেশি।’ সে কারণে তিনি বিশ্বাস করেন বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি কখনও শ্রীলঙ্কার মতো হবে না।

রেহমান সোবহান বলেন, দেশে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় কমে যাচ্ছে। তবে তার মানে এই নয় যে, দেশে প্রবাসী আয় আসা বাস্তবে কমে গেছে; আনুষ্ঠানিক পথে না এসে অনানুষ্ঠানিক পথে আসছে প্রবাসী আয়, যার মূল মাধ্যম হুন্ডি। অর্থাৎ রিজার্ভ বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা না হয়ে হুন্ডিতে জমা হচ্ছে, যা বাংলাদেশের বাইরে জমা হচ্ছে। যারা বিদেশে অর্থ পাচার করেন, তাদের জন্য এটা সুবিধাজনক হয়েছে বলে মন্তব্য করেন রেহমান সোবহান।

এ অর্থনীতিবিদ বলেন, দেশের আর্থিক খাতের সংস্কৃতিতে বড় পরিবর্তন এসেছে। ঋণ নেয়ার পর ফেরত না দেয়াটা নিয়মে পরিণত হয়েছে। এটা করার জন্য বড় ব্যবসায়ী নয়; বরং যারা এসব করছেন, তারা নিজেদের বড় রাজনীতিক হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন।

তিনি আরও বলেন, বিকল্প উপায়ে হলেও রেমিট্যান্স বাংলাদেশে আসছে। যাদের অর্থ পাওয়ার কথা তারা পাচ্ছে। যে কারণে সামষ্টিক অর্থনীতিতে কোনো প্রভাব পড়ছে না। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পাশাপাশি এখন হুন্ডিতেও ডলারের একটি বড় রিজার্ভ তৈরি হয়েছে। এর ফলে অর্থ পাচারের সুযোগ বাড়বে।

তিনি বলেন, কাঁচামাল আমদানির ঋণপত্র (এলসি) খুলতে গেলে ব্যাংক বলছে তাদের কাছে যথেষ্ট ডলার নেই। শিল্পে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না। কিন্তু বিএমডব্লিউ গাড়ি আমদানির ক্ষেত্রে ব্যাংকের একই ধরনের মানসিকতা দেখা যাচ্ছে না। তিনি উল্লেখ করেন, নীতিনির্ধারকদের এই মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, আগে বিএমডব্লিউ গাড়ি আমদানি করবে না-কি ওষুধের কাঁচামাল কিংবা সার আমদানি করবে।

তিনি আরও বলেন, শিল্পের দ্রুত বিকাশে বাংলাদেশ শিল্প ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা হয় ১৯৭২ সালের ৩১ অক্টোবর। একই উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ শিল্প ঋণ সংস্থাও প্রতিষ্ঠা করা হয় তখন। কিন্তু উভয় প্রতিষ্ঠানের প্রায় ৯০ শতাংশ ঋণ খেলাপি হয়ে যায়। পরে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড দুটি সংস্থাকে অধিগ্রহণ করে। সরকারি সিদ্ধান্তের আওতায় বাংলাদেশে শিল্প ব্যাংক (বিএসবি) এবং বাংলাদেশ শিল্প ঋণ সংস্থা (বিএসআরএস)-কে একীভূত করে বিডিবিএল গঠিত হয়। তারপর আর্থিক খাতে কিছুটা উন্নতি হলেও বর্তমান পরিস্থিতি ভয়াবহ। এখন বিনা ফেরতে টাকা পাচ্ছেন। রয়েছে কর-সুবিধাও। নির্বাচন এলে কিছু টাকা জমা দিয়ে দীর্ঘদিনের খেলাপি ঋণ নবায়ন করা যায়। পরে সে ঋণ আবার খেলাপি হয়। আবার বিপুল অঙ্কের ঋণ অবলোপন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, মূলত ঘুরেফিরে বড় লোককে ঋণ দিচ্ছে ব্যাংক। সে ঋণ ফেরত আসছে না। অথচ কৃষক সময়মতো ঋণ পায় না। ব্যাংক খাতের একটি বড় সমস্যা হলোÑস্বল্পমেয়াদে আমানত নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দিচ্ছে। এটা এক ধরনের ‘মিসম্যাচ’। বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হার সঠিকভাবে কাজ করছে না। এরও একটা প্রভাব পড়ছে ডলার সংকটে। প্রবৃদ্ধি নিয়ে তিনি বলেন, যেভাবে দেশের প্রবৃদ্ধি দেখানো হচ্ছে এটা সঠিক না। প্রবৃদ্ধি হঠাৎ করে হয় না। এটা ধীরে ধীরে হয়। তিনি আরও বলেন, রপ্তানি এবং প্রবাসী আয়ের সমন্বয়ে দেশের রিজার্ভ ভালো ছিল। কিন্তু বর্তমানে দু’টি সূচক যৌক্তিক কারণে কমছে না। এ জায়গায় নজর দিতে হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০