ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি থেকে সাবধান!

যতই দিন যাচ্ছে প্রযুক্তির কল্যাণে শিক্ষা, চিকিৎসা, গবেষণা, কর্মসংস্থান প্রভৃতি ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে। ইন্টারনেটের ব্যাপক ব্যবহার এবং হাতে থাকা স্মার্টফোনের মাধ্যমে ঘরে বসে সব ধরনের সেবা পাওয়া যাচ্ছে। প্রযুক্তির উন্নতির ফলে অনেক পেশার বিলুপ্তি ঘটেছে এবং অনেক নতুন নতুন পেশা সৃষ্টি হচ্ছে। চাইলেই হাতে থাকা স্মার্টফোনের মাধ্যমে ঘরে বসে টাকা ইনকাম এবং চাকরির আবেদন করা যাচ্ছে। বৈশ্বিক মহামারি কভিড শুরু হওয়ার পরে লাখ লাখ মানুষ বেকার হয়েছে এবং এরই সঙ্গে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে চাকরিহারা মানুষসহ সর্বস্তরের মানুষ দিশাহারা অবস্থায় পড়েছে। মানুষের জীবন-সংসার চালাতে দরকার একটা চাকরির। তাই প্রতিটি চাকরিপ্রত্যাশী ব্যক্তি ছুটছে চাকরির পেছনেÑকোথায় পাওয়া যায় ভালো বেতনের চাকরি? তাই এরই সুযোগ নিয়ে কিছু অসাধু অনলাইন চক্র মানুষকে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে প্রতারণার করে যাচ্ছে। ফলে একজন চাকরিপ্রত্যাশী ব্যক্তি এই প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়ে তাদের সর্বস্ব হারাচ্ছেন।

প্রথমে এই প্রতারক চক্রের দল বিভিন্ন নামিদামি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে ভুয়া সার্কুলার দিয়ে থাকে এবং নিজেদের ব্যক্তিগত নম্বর দিয়ে চাকরির আবেদন করার টাকা পে করতে বলে। পরবর্তী পোস্টিংয়ের নাম করে বিভিন্ন মেয়াদে ধাপে ধাপে ভিক্টিমের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়। প্রতারক চক্র নিজেদের অফিস হিসেবে ভুয়া ফ্ল্যাট বাসার ঠিকানা ব্যবহার করে। ঠিকানা অনুযায়ী গেলে দেখা যায় সেখানে কোনো অফিস নেই বা প্রথমে চাকরির আবেদন ফর্ম জমা দিতে গিয়ে অস্থায়ীভাবে সাজানো অফিস দেখতে পেলেও পরে পোস্টিং নাম করে টাকা হাতানোর পর ভিক্টিম অফিসে গিয়ে অভিযোগ করতে গেলে দেখে অফিস সেখানে নেই, প্রতারক চক্র সবকিছু গুটিয়ে এবং সব কন্টাক্ট নম্বর বন্ধ করে হাওয়া হয়ে গেছে। এ অবস্থায় প্রতারণায় শিকার ব্যক্তি নির্বাক হয়ে যান।

তাই এ ধরনের প্রতারণার শিকার যেন না হতে হয়, সেজন্য আমাদের সচেতন হতে হবে। মূলত এ ধরনের প্রতারণার বেশি শিকার হয় গ্রাম থেকে আসা সহজসরল নি¤œ-মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র ঘরের বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা। এসব শিক্ষার্থী অনেক স্বপ্ন নিয়ে শহরের বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজে ভর্তি হয়। দরিদ্র পরিবার তার পড়াশোনার খরচ চালাতে হিমশিম খাবে, এ কথা জেনেও শহরে এসে পড়াশোনা করার মতো চ্যালেঞ্জ হাতে নেয়। তারা মনে করে, পড়াশোনা করার পাশাপাশি পার্ট-টাইম জব বা টিউশনি করিয়ে নিজের খরচ নিজে চালিয়ে নেবে, কিন্তু শহরে এসে দেখে সবকিছু উল্টো। তারা বাস্তব ক্ষেত্রে দেখে পার্ট-টাইম জব বা টিউশন দুটার হাটই মহার্ঘ। তারা বুঝতে পারে শহরে পার্ট-টাইম জব বলতে কিছুই নেই, যা আছে যৎসামান্য, সব ফুলটাইম জব পার্ট-টাইম বলে চালিয়ে দেয়া হয়।

একদিকে পরিবার থেকে পড়াশোনা খরচ দিতে পারছে না, অপরদিকে নিজেও নিজের খরচের টাকা আয় করতে না পেরে একজন শিক্ষার্থী হতাশার চরম পর্যায়ে চলে যায়। এ অবস্থায় একজন শিক্ষার্থী এসব প্রলোভন দেখানো চাকরিতে পা দিয়ে প্রতারণার শিকার হয়ে থাকে। তাই মফস্বল থেকে আসা প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের এ বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে সাত কলেজসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ক্লাস। বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী ঢাকামুখী হচ্ছে। এসব নবীন শিক্ষার্থীকে সতর্ক হতে হবে এবং সতর্ক করতেও হবে। পরিবার থেকে এসব বিষয়ে অবগত করতে হবে। শ্রেণিশিক্ষকদেরও একজন শিক্ষার্থীকে এ বিষয়ে সচেতন করতে হবে। শুধু শিক্ষার্থী নয়, আগেই আলোচনা করা হয়েছে এ ধরনের প্রতারণার শিকার হচ্ছে সব চাকরিপ্রত্যাশী মানুষ। তাই প্রতিটি চাকরিপ্রত্যাশী মানুষকে নিজ নিজ জায়গা থেকে সচেতন হতে হবে। চাকরির সার্কুলার সত্যতা যাচাই করে আবেদন করতে হবে। যদি কোনো ব্যাক্তি প্রতারিত হন, তাহলে বিলম্ব না করে আইনের সহায়তা নিতে হবে। এরই মধ্যে ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্ট (সিআইডি) এসব প্রতারকের বিরুদ্ধে বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। তাই আমরা দুর্ভাগ্যবশত প্রতারণার শিকার হলে অবশ্যই আইনের শরণাপন্ন হব।

শেখ আবদুল্লাহ

শিক্ষার্থী, ইতিহাস বিভাগ

ঢাকা কলেজ

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০