আগামী মার্চ-জুনে বিদ্যুতের দাম বাড়াতে চায় সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক: লোকসান কমাতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে ভর্তুকি শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার পরামর্শ দিয়েছিল আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। তবে নির্বাচনের আগে এ ধরনের অজনপ্রিয় সিদ্ধান্ত নিতে চায় না সরকার। যদিও এ দুই খাতে ভর্তুকি কমাতে আবারও মূল্য সমন্বয়ের তাগিদ দিয়েছে সংস্থাটি। ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের আগে ভর্তুকি কমানোর কথা স্মরণ করে দেয় আইএমএফ।

সূত্রমতে, আইএমএফের পরামর্শ অনুযায়ী সরকার ভর্তুকি কমাতে ব্যাপক সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছে; এরই মধ্যে গত অর্থবছর কয়েক দফায় বাড়ানো হয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দাম। এর পরও এসব খাতে এখনও বিপুল অঙ্কের আর্থিক ভর্তুকি দিতে হচ্ছে সরকারকে। এছাড়া আইএমএফের শর্তে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয়ের নীতিমালাও চূড়ান্ত করা হয়েছে। তবে নির্বাচনের আগে এটিও কার্যকর করা হচ্ছে না।

ঋণের দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ ছাড়ের ক্ষেত্রে আইএমএফ বাংলাদেশকে একগুচ্ছ শর্ত দিয়েছিল। সেসব শর্ত সরকার কতটা বাস্তবায়ন করতে পেরেছে, তা দেখতে আইএমএফের একটি প্রতিনিধিদল এখন বাংলাদেশে অবস্থান করছে। দলটি গত বৃহস্পতিবার বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব এবং বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক করেছে। এর আগের দিন তারা বৈঠক করেছে পেট্রোবাংলার সঙ্গে। এছাড়া জ্বালানি বিভাগের সঙ্গে বৈঠক করেছে গত রোববার।

বিদ্যুৎ বিভাগ ও পিডিবির সঙ্গে আইএমএফের প্রতিনিধিদলের বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, পিডিবির আর্থিক অবস্থা নিয়ে সন্তুষ্ট নয় আইএমএফ। এ ছাড়া বিদ্যুৎ খাতে যে ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে, তা কী করে সমন্বয় করা হবে, সেটিও জানতে চেয়েছেন প্রতিনিধিদলের সদস্যরা। দীর্ঘ সময় চলা এ বৈঠকে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে ভর্তুকি তুলে নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎকেন্দ্রের ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ সরকারের কী পরিমাণ ব্যয় হচ্ছেÑএ নিয়ে সরকারের অবস্থান এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, অন্যান্য সংস্কারমূলক কর্মসূচির অগ্রগতি কতটুকু প্রভৃতি বিষয়ে জানতে চেয়েছে আইএমএফের প্রতিনিধিদল।

বিদ্যুৎ বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেন, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো সম্ভব নয়। তবে মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত ধাপে ধাপে বিদ্যুতের দাম প্রায় দ্বিগুণ করা হতে পারে বলে জানানো হয়। ওইদিন বিকালে পিডিবির সঙ্গে বৈঠক করেন আইএমএফ প্রতিনিধিরা। বৈঠক সূত্রে জানা যায়, আইএমএফ প্রতিনিধিদল পিডিবির আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে সংস্থাটির কর্মকর্তারা সামগ্রিক চিত্র তুলে ধরেন। তবে সার্বিক চিত্র দেখে সন্তুষ্ট নয় আইএমএফ প্রতিনিধিদল। এতে আর্থিক রুগ্ণ দশা থেকে পিডিবির উত্তরণের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন তারা।

পিডিবির এক কর্মকর্তা বলেন, আইএমএফের প্রতিনিধি দলকে জানানো হয়েছে, ট্যারিফ বৃদ্ধি করে আর্থিক সংকট থেকে, বিশেষ করে ভর্তুকি থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করা হচ্ছে। মার্চ থেকে আবারও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হতে পারে। জুন নাগাদ তা বর্তমান হারের দ্বিগুণ হয়ে যেতে পারে। এটি করা হলে ভর্তুকি প্রায় শূন্য হয়ে যাবে। তবে বিদ্যুতের দাম বর্তমান হারের দ্বিগুণ না হলে ভর্তুকি শূন্য করা সম্ভব হবে না।

প্রসঙ্গত, পিডিবির লোকসান তথা ভর্তুকি কমাতে গত বছর ডিসেম্বরে ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ বাল্ক মূল্যহার বাড়ানো হয়। এতে বাল্ক দাম পাঁচ টাকা ১৭ পয়সা থেকে বেড়ে হয় ছয় টাকা ২০ পয়সা। আর চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে তা আট দশমিক শূন্য ছয় শতাংশ বাড়ানো হয়। এতে বাল্ক বিদ্যুতের দাম দাঁড়াচ্ছে ছয় টাকা ৭০ পয়সা।

এদিকে চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাসে পাঁচ শতাংশ হারে মোট ১৫ দশমিক ৭১ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম। এতে ইউনিটপ্রতি বিদ্যুতের দাম বেড়ে মার্চে হয় ৮.২৫ টাকা, ডিসেম্বরে যা ছিল ৭.১৩ টাকা। এরপরও বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো লোকসানে রয়েছে।

এর আগে গত রোববার আইএমএফের প্রতিনিধিদলটি জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিবের সঙ্গে এবং গত বুধবার পেট্রোবাংলা ও বিপিসির চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক করে জ্বালানি খাতের সামগ্রিক বিষয় সম্পর্কে জানতে চায়। এসব বৈঠকে উপস্থিত কর্মকর্তারা বলেন, জ্বালানি খাতে ভর্তুকি কমানোর বিষয়েই মূলত তাগিদ দিচ্ছে আইএমএফ। ভর্তুকি কমাতে গেলে দাম বাড়াতে হবে। তারা মূলত আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করে জ্বালানি তেলের মূল্য নির্ধারণের শর্ত বাস্তবায়নের কথা বলে। তবে এটি করা হলে ডিজেলের দাম অনেক বেড়ে যায়। আর কিছুটা কমবে অকটেনের দাম। কিন্তু নির্বাচনের আগে ডিজেলের দাম বৃদ্ধি করা হলে পরিবহন ভাড়া বৃদ্ধি, মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধিসহ জনমনে বিরূপ প্রভাব পড়বে। জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাবে ভেবে আপাতত দাম বাড়ানোর পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছে সরকার।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০