চীনের সঙ্গে ঋণপুন র্গঠন চুক্তি শ্রীলঙ্কার

শেয়ার বিজ ডেস্ক: অর্থনৈতিক সংকটে থাকা শ্রীলঙ্কা ৪২০ কোটি ডলারের ঋণ পুনর্গঠনে চীনের সঙ্গে চুক্তিতে পৌঁছেছে। খবর: বিবিসি।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বেলআউট প্যাকেজের পরবর্তী কিস্তি ছাড় করতে অন্য দাতাদের সঙ্গেও একই ধরনের চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে দ্বীপ দেশটি।

কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ আর্থিক সংকটে রয়েছে শ্রীলঙ্কা। কভিড-১৯ মহামারির প্রভাব, সরকারি তহবিল পরিচালনায় অদক্ষতা, শুল্ক কমানোয় ও তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ঘাটতি দ্বীপদেশটিতে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকট নিয়ে এসেছে। এই পরিস্থিতিতে ২০২২ সালের মে মাসে নিজেদের ঋণখেলাপি ঘোষণা করে দেশটির সরকার। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের ঘাটতি আর দ্রব্যমূলের ঊর্ধ্বগতির কারণে দেশজুড়ে বিক্ষোভে সরকারের পতন হয়। অবস্থার উত্তরণে তখন থেকে আইএমএফের ঋণ পাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। ১৯৪৮ সালে স্বাধীনতার পর গত দুই বছরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ করে ৭০ শতাংশ। এতে জ্বালানি, খাবার ও ওষুধের দাম নাগালের বাইরে চলে যায়। তাই বাধ্য হয়ে রাজপথে সহিংস বিক্ষোভে নামে হাজারো মানুষ।

এক বিবৃতিতে শ্রীলঙ্কার অর্থ মন্ত্রণালয় বলছে, আমাদের দেশের ঋণ পরিস্থিতির সমাধানে সহায়তার জন্য চীনের এক্সিম ব্যাংককে ধন্যবাদ জানাই। শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে চলমান চেষ্টায় এই চুক্তি মূল ভূমিকা রাখবে।

চুক্তির শর্তের ব্যাপারে আর বিস্তারিত প্রকাশ করেনি মন্ত্রণালয়।

শ্রীলঙ্কার মোট বৈদেশিক ঋণের পরিমাণ চার হাজার ৬৯০ কোটি ডলার, যার ৫২ শতাংশ চীনের কাছ থেকে নেয়া। আইএমএফ থেকে ৩০০ কোটি ডলারের ঋণ প্যাকেজ পাওয়ার শর্ত হিসেবে এসব দাতার সঙ্গে ঋণ পুনর্গঠনের চুক্তিতে পৌঁছাতে হবে শ্রীলঙ্কার সরকারকে। আর দেশটির সবচেয়ে বড় ঋণদাতা দেশ চীনের সঙ্গে সেই চুক্তিতে পৌঁছানো সম্ভব হলো।

আইএমএফের এ ঋণ প্যাকেজের পরবর্তী কিস্তির ৩৩ কোটি ডলার আটকে রয়েছে গত মাস থেকে। আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থাটির সঙ্গে সেসময় ঋণের শর্তাবলি নিয়ে সমঝোতায় পৌঁছাতে ব্যর্থ হয় শ্রীলঙ্কার সরকার।

চলতি সপ্তাহে মরক্কোর মারাকেশ শহরে আইএমএফ ও বিশ্বব্যাংকের বার্ষিক বৈঠক হবে। তখন অন্য ঋণদাতাদের সঙ্গে শ্রীলঙ্কা একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে পারবে বলে আশা করছে দেশটির সরকার। তবে ঋণদাতাদের সঙ্গে সেই সমঝোতায় আসার ক্ষেত্রে জটিলতার খবরও পাওয়া যাচ্ছে। এ বছরের শুরুতে আইএমএফ থেকে ৩০০ কোটি ডলারের ঋণের বিষয়টি নিশ্চিত করে কলম্বো।

গত বছর ৬০ কোটি ডলার ঋণ দিতে রাজি হয় বিশ্বব্যাংক। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি ব্যয় মেটাতে আর্থিক সহায়তা হিসেবে শ্রীলঙ্কাকে এই অর্থ দিতে রাজি হয়েছে বিশ্বব্যাংক।

কলম্বোভিত্তিক থিংক ট্যাংক অ্যাডভোকাটার ধননাথ ফার্নান্দোর মতে, চীন ঋণের বিশেষ শর্তাবলি নিয়ে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে সমঝোতায় গেছে। চীন অগ্রাধিকারমূলক এই সুবিধা পেলে অন্য পাওনাদারের ঋণের বোঝা বহন করতে হতে পারে।

ভারত, জাপান ও ফ্রান্স বলছে, এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার চুক্তির বিষয়টি তারা জানে না। আর ঋণ পুনর্গঠনে চীনের মতো একই শর্তের কথা তারাও বলেছে।

বিস্তারিত না জানিয়ে চীন এই ধরনের গোপন চুক্তি করে। তবে শ্রীলঙ্কা বলছে, সব দাতাদের সমানভাবে মূল্যায়ন করা হবে। দাতাদের বকেয়া ঋণ ৩০ শতাংশ কমানোর অনুরোধ জানিয়েছে সরকার।

চলতি বছরের মাঝামাঝি থেকে আর্থিক সংকট কাটিয়ে ক্রমেই ঘুরে দাঁড়াচ্ছে দ্বীপ দেশটি। বৈদেশিক মুদ্রার ভাণ্ডারও স্ফীত হচ্ছে। শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ গত মে মাসে ২৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ১৭ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ সাড়ে তিন বিলিয়ন বা ৩৫০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। শক্তিশালী রেমিট্যান্স আর পর্যটন খাতের আয় দেশটির অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড়াতে সহায়তা করছে। এছাড়া চলতি বছর শ্রীলঙ্কার রুপির মান প্রায় ২৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০