প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন পরিদর্শন করেছেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। দোহাজারী স্টেশন থেকে মোটর ট্রলিতে করে নতুন এই রেললাইন দিয়ে কক্সবাজার যান তিনি। গতকাল সোমবার সকাল ১০টায় দোহাজারী স্টেশন থেকে মোটর ট্রলিতে করে কক্সবাজারের উদ্দেশে রওনা দেন মন্ত্রী। এর আগে তিনি কালুরঘাট সেতুর মেরামতের কাজ পরিদর্শন করেন।
মন্ত্রী বলেন, ১২ নভেম্বর কক্সবাজার রুটের ট্রেন চলাচলের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর আগে ২ নভেম্বর এই রুটে পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন চালিয়ে দেখা হবে।
এ সময় মন্ত্রীর সঙ্গে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলীয় মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেন, দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ প্রকল্পের পরিচালক মোহাম্মদ মফিজুর রহমান, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী আবু
জাফর মিঞা, সেতু প্রকৌশলী জিসান দত্তসহ রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
দোহাজারীতে রেললাইন পরিদর্শনকালে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের কাজের সর্বশেষ অগ্রগতি ঘুরে দেখছি। প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। অল্প কিছু কাজ অবশিষ্ট রয়েছে। চলতি মাসের মধ্যে এসব কাজ শেষ হয়ে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘রেললাইনের কাজ শেষ হলেও কয়েকটি স্টেশনের কিছু কাজ বাকি থাকবে। এগুলোও দ্রুত শেষ করতে কাজ চলছে।’
ভাড়া নির্ধারণের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পর ভাড়া নির্ধারণ করা হবে। তবে আমরা উন্নত যাত্রীবাহী কোচ দেয়ার বিষয়টি যাচাই-বাছাই করছি। এছাড়া যাত্রীবাহী ট্রেন কতটি, মালবাহী ট্রেন কতটি, তা নিয়ে পরে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। ভাড়ার বিষয়টিও পরে জানানো হবে।’
প্রসঙ্গক্রমে রেলমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা ট্রেনে করে কক্সবাজার যাবে। তাই সারাদেশের মানুষ এই রেলপথ নিয়ে মুখিয়ে আছেন, কারণ ট্রেন যোগাযোগ সাশ্রয়ী, নিরাপদ ও আরামদায়ক। আশা করি যাত্রীরা এ যাত্রা উপভোগ করবেন। এই রেলপথটি ধরে মাতারবাড়ীতে যে ডিপ সি পোর্ট করছি, তার সঙ্গেও ভবিষ্যতে যুক্ত করব। কাজেই নানা ধরনের ব্যবহারে লাগবে এই রেললাইন।’
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলীয় মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘রেললাইনটি এখন ট্রেন চলাচলের উপযোগী অবস্থায় রয়েছে।’
আর কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ মফিজুর রহমান বলেন, ‘ট্রেন চলাচলের জন্য রেলপথ প্রস্তুত হলেও কিছু স্টেশন নির্মাণের কাজ চলছে। বর্তমানে প্রকল্পের অগ্রগতি ৯২ শতাংশ। উদ্বোধনের আগে কয়েকবার পরীক্ষামূলক ট্রেন চালিয়ে দেখব, কোথাও ত্রুটি আছে কি না। স্টেশন ও সড়কের যে কাজ বাকি আছে, সেগুলো দ্রুত শেষ করার চেষ্টা করছি।’
১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার রেললাইন প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার পর্যন্ত মিটারগেজ রেলপথ নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্যে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু পর্যন্ত ৮৮ কিলোমিটার এবং রামু থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার। এতে অর্থায়ন করেছে এশিয়ান ব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকার।
আগামী বছর শুরু হবে কালুরঘাট নতুন ব্রিজের কাজ
এদিকে কক্সবাজার রেললাইন পরিদর্শনের আগে কালুরঘাট সেতুর সংস্কার কাজের পরিদর্শন করার সময় সেখানে আগামী বছর নতুন সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। এ সময় তিনি বলেন, এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি কালুঘাটে নতুন একটি ব্রিজ নির্মাণ করা। শুধু তা-ই নয়, দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সঙ্গে সরাসরি রেল যোগাযোগে কালুরঘাট ব্রিজটি অপরিহার্য। আমরা আশা করছি, সেটির কাজ আগামী বছর শুরু করতে পারব। ব্রিজে ডাবল লাইন ও ডুয়েল গেজ রেলপথ এবং ফোর লেনের সড়ক থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘নতুন ব্রিজ না হওয়া পর্যন্ত কালুরঘাট ব্রিজটি যাতে ব্যবহার করতে পারি, সেভাবে সংস্কার করা হচ্ছে। আমাদের যে ওয়েটের ইঞ্জিন বা লোকোমোটিভ ছিল, তা ১২ টনের। অনেক ঝুঁকিপূর্ণ ছিল ব্রিজটি। এ কারণে ব্রিজটির ধারণক্ষমতা যাতে বাড়ানো যায়, সেজন্য আমরা প্রকল্প গ্রহণ করেছি। এরই মধ্যে কাজ চলমান আছে।’
সকাল সাড়ে ৮টায় মন্ত্রী কালুরঘাট ব্রিজের পশ্চিম প্রান্ত থেকে পায়ে হেঁটে সংস্কার কাজ পরিদর্শন করেন। এরপর ব্রিজের পূর্ব প্রান্তে এসে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘ব্রডগেজ ট্রেন এখন চালাতে পারব না। ঢাকাকে মূল ফোকাসে রেখে দেশের আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত ডুয়েল গেজ রেলপথ করেছি। দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত ডুয়েল গেজ রেলপথ নির্মাণ করা হয়েছে। ভবিষ্যতে দোহাজারী থেকে চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম থেকে লাকসাম এবং আখাউড়া থেকে টঙ্গী পর্যন্ত ডুয়েল গেজ রেলপথ করা হবে। এটি ধীরে ধীরে হবে। ব্রডগেজ ট্রেন খুব শিগগিরই চালাতে পারব না। এই সময়ের মধ্যে আশা করছি কালুরঘাটে যে নতুন ব্রিজ করতে যাচ্ছি, তা হয়ে যাবে।’
রেলওয়ে জানায়, বুয়েট প্রকৌশলীদের পরামর্শে কালুরঘাট ব্রিজ সংস্কার করছে রেলওয়ে। এ সংস্কারকাজে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ৫৫ কোটি টাকা।