প্রতিনিধি, নীলফামারী: কৃষি অর্থনীতিনির্ভর জেলা নীলফামারী। জেলার অধিকাংশ মানুষের জীবিকা নির্বাহের প্রধান অবলম্বন কৃষি। এ জেলার উর্বর দোআঁশ ও বেলে দোআঁশ মাটিতে বিভিন্ন রকম ফসল আবাদ হয়ে থাকে। তবে অল্প পুঁজিতে লাভজনক হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে দিন দিন আখ চাষে আগ্রহ বাড়ছে এ অঞ্চলের কৃষকদের। এবার আখের বাম্পার ফলন হয়েছে নীলফামারীতে। ভালো দাম পাওয়ায় হাসি ফুটেছে চাষিদের মুখে।
জানা গেছে, বেলে ও দোআঁশ মাটি আখ চাষের জন্য বেশ উপযোগী। ৭ থেকে ৮ মাসের মধ্যে আখের ফলন পাওয়া যায়। আখ উঁচু ও নিচু জমিতেও চাষ করা যায়। আবহাওয়া ও মাটির গুণাগুণের কারণে আশানুরূপ ফলন ও বাজারে বেশ চাহিদা থাকায় দিন দিন আখ চাষের প্রতি কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় এ বছর ১৭৫ হেক্টর জমিতে আখ চাষ হয়েছে। গত বছরের চেয়ে ১৫ একর জমিতে চাষ বেড়েছে। যারা আখ চাষ করেছেন, তাদের সাথী ফসল হিসেবে অন্য ফসল রোপণের পরামর্শ দিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এতে আখচাষিরা লাভবান হচ্ছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, আখ কাটতে কৃষকেরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। সারি সারি ভ্যান দাঁড়িয়ে আছে আখ নিয়ে যাওয়ার জন্য। এখান থে?কে আখ স্থানীয় বাজারসহ বিভিন্ন জেলার পাইকাররা এসে নিয়ে যান।
নীলফামারী সদর উপজেলার লক্ষ্মীচাপ ইউনিয়নের মেম্বারপাড়ার বাসিন্দা শ্রী মাধব চন্দ্র রায়। প্রায় পাঁচ বছর আগে প্রথমবারের মতো তার এলাকায় আখ চাষ শুরু করেন। কৃষক মাধব চন্দ্র রায়ের দাবিÑতার হাত ধরেই ওই এলাকায় প্রায় ২০ থেকে ৩০ জন কৃষক আখ চাষ শুরু করেছেন।
তিনি বলেন, গত ৫ বছর ধরে নিয়মিত আখ চাষ করছি। এ বছর ২২ শতাংশ জমিতে চাষ করেছি। ফলনও ভালো হয়েছে। এ বছর খরচ হয়েছে ২০ হাজার টাকা। বাজারে অন্তত ৫০-৬০ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারব। এবার দাম বেশি হওয়ায় আখ চাষ বাড়ছে।
একই এলাকার কৃষক সুশীল চন্দ্র রায় বলেন, চলতি বছর ১৫ শতাংশ জমিতে আখ চাষ করেছি। ফলন ভালো হয়েছে। আখ চাষের উপযোগী বেলে দোআঁশ ও পলি দোআঁশ মাটি। প্রতি ৩০ শতাংশ জমিতে খরচ প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। আখ চাষে খরচ কম কিন্তু পরিশ্রম একটু বেশি।
কৃষক শিখনাথ রায় বলেন, ১৫ শতাংশ জমিতে আখ চাষ করছি। লাভ ভালো হওয়ায় আগামীতে বেশি করে চাষ করব। সময়মতো ওষুধ দিতে না পারলে পচন রোগ বাড়ে। তবে কম খরচে বেশি লাভ হয়। এ জন্য ঠিকমতো পরিচর্যা করতে হয়।
জলঢাকার কৈমারী ইউনিয়নের কৃষক যাদু মিয়া বলেন, এ বছর ৩২ শতাংশ জমিতে আখ চাষ করেছি। কীটনাশক ও শ্রমিকসহ ৩৫ হাজার টাকার মতো ব্যয় হয়েছে। ফলন ভালো হয়েছে। এ বছর অন্তত দেড় লাখ টাকার আখ বিক্রি করতে পারব।
কিশোরগঞ্জের পুটিমারী কালিকাপুর এলাকার আখচাষি সুজন আলী বলেন, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সার্বিক সহযোগিতায় প্রথমবার অল্প পরিসরে আখের চারা রোপণ করি। তাতে আমার বাম্পার ফলন হয়েছে।
একই এলাকার কৃষক আব্দুর রহিম বলেন, গত কয়েক বছর আখ চাষ করে আসছি এ বছরে কৃষি অফিসের কর্মকর্তার পরামর্শ অনুযায়ী ৭ বিঘা জমিতে ঈশ্বরদী ও ফিলিপাইন জাতের আখের চারা রোপণ করি। আখের চারা রোপণের কয়েক মাস পর তা বিক্রির উপযোগী হয়। এছাড়া আখ চাষের মধ্যেই সাথী ফসল হিসেবে আলু-৭ ও স্কোয়াস চাষ করেছিলাম। বর্তমানে এ দুই ফসলে আমার খরচের সব টাকা উঠে এসেছে। বর্তমানে আখ আমার বোনাস ফসল। আখের বাম্পার ফলন হয়েছে। ৭ বিঘা জমিতে ১০ লাখ টাকার আখ বিক্রি করার স্বপ্ন দেখছি।
আখ ব্যবসায়ী মমিনুল হক বলেন, গত ৫ থেকে ৬ বছরেরও বেশি সময় আখ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত আছি। প্রতি বছর এখান থেকে আখ কিনে পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতে পাইকারি হিসেবে বিক্রি করে থাকি। প্রতি দিন ৮ থেকে ১০ হাজার পিস আখ কিনে থাকি। এখানকার আখ খুব মিষ্টি ও সুস্বাদু। এখানকার আখ বিক্রি করতে আমাদের কোনো সমস্যায় পড়তে হয় না।
নীলফামারী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. এসএম আবু বকর সাইফুল ইসলাম বলেন, নীলফামারীর মাটি আখ চাষের জন্য উপযোগী। এবার জেলায় ১৭৫ হেক্টর জমিতে ঈশ্বরদী ৪১, ৩৭, ১৬ ও ৮ জাতের আখ চাষ হয়েছে।