স্মার্ট কার্ডের দাম বাড়ছে সাড়ে ৩৬ টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক : বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব এসে পড়েছে উন্নতমানের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বা স্মার্টকার্ডের ওপরও। ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় নাগরিক এই পরিচয়পত্রের ক্রয়মূল্য বাড়ছে সাড়ে ৩৬ টাকা। নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত জাতীয় পরিচয়পত্র, ভোটার তালিকা এবং নির্বাচন ব্যবস্থাপনায় তথ্য প্রযুক্তির প্রয়োগ কমিটির সভায় এমন তথ্য জানানো হয়েছে। কমিটির সভাপতি নির্বাচন কমিশনার মো. আহসান হাবিব খান বিষয়টি বাস্তবায়নে পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণের নির্দেশনা দিয়েছেন বলেও বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে জানা গেছে।

ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ) থেকে ৪০৬ কোটি ৫০ লাখ টাকায় ব্যয়ে তিন কোটি ব্ল্যাক স্মার্টকার্ড সরবরাহ করার কথা ছিল। এ ক্ষেত্রে কার্ডপ্রতি মূল্য ধরা হয়েছিল ১৩৫ টাকা ৫০ পয়সা। কিন্তু ডলারের দাম ৮৪ টাকা থেকে বাড়তে বাড়তে ১১০ টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ায় আগের দামে কার্ড সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই তারা কার্ডপ্রতি ৩৬ টাকা ৫০ পয়সা বাড়িয়ে ১৭২ টাকা দেয়ার জন্য বলেছিল। এ ক্ষেত্রে তিন কোটি স্মার্টকার্ডের জন্য বাড়তি প্রয়োজন হবে ১০৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

স্মার্টকার্ডের জন্য ‘আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর অ্যানহেন্সিং অ্যাকসেস টু সার্ভিসেস (আইডিইএ) দ্বিতীয় পর্যায় প্রকল্পটি ২০২০ সালের ২৪ নভেম্বর একনেক সভায় অনুমোদিত হয়। এতে তিন কোটি ব্ল্যাংক স্মার্টকার্ড ক্রয়, স্ক্যানিং, প্যাকেজিং উপজেলা, থানায় পাঠানোর জন্য ৪৮০ কোটি টাকা সংস্থান রাখা হয়। এ জন্য কার্ডপ্রতি মোট ব্যয় ধরা হয় ১৬০ টাকা।

ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ায় যে প্রস্তাব এসেছে, তা প্রকল্প নির্ধারিত বরাদ্দের চেয়ে ১২ টাকা বেশি। সেটিও কেবল ব্ল্যাংক কার্ড কেনার জন্য। এর সঙ্গে আরও যোগ হবে পার্সোনালাইজেশন, স্ক্যানিং, প্যাকেজিং এবং উপজেলা ও থানায় পাঠানোর খরচ। তাই কমিটি কার্ডের বাড়তি দর অনুমোদনের সিদ্ধান্ত দিলেও কমিয়েছে মোট কার্ডের সংখ্যা। অর্থাৎ তিন কোটি কার্ডের পরিবর্তে দুই কোটি ৩৬ লাখ ৩৩ হাজার ৭২০টি কার্ড সংগ্রহের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। অবশিষ্ট কার্ডগুলো প্রকল্পের মেয়াদ শেষে রাজস্ব খাতের বরাদ্দ থেকে ক্রয়ের ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে। এখন কমিশনে অনুমোদন হলেই বিষয়টি বাস্তবায়ন হয়ে যাবে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।

২০১১ সালে এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন উন্নতমানের জাতীয় পরিচয়পত্র দিতে বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় একটি প্রকল্প হাতে নেয়। যার নাম দেয়া হয় আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর অ্যানহেন্সিং অ্যাকসেস টু সার্ভিস বা আইডিইএ। যার অধীনেই নাগরিকদের এই কার্ড দেয়া শুরু হয় ২০১৫ সালে।

সে সময় ফরাসি প্রতিষ্ঠান অবার্থার টেকনোলজিসের সঙ্গে ৯ কোটি কার্ড

 সরবারের চুক্তি করে ইসি। কিন্তু প্রকল্পের মেয়াদ কয়েক দফা বাড়ালেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কার্ড সরবরাহ করতে ব্যর্থ হয় প্রতিষ্ঠানটি। ফলে ঝুলে যায় নাগরিকদের স্মার্টকার্ড প্রাপ্তি। এরপর ২০১৮ সালে এসে দেশীয় প্রতিষ্ঠান বিএমটিএফের কাছ থেকে উন্নতমানের এই কার্ড সংগ্রহ করার সিদ্ধান্ত হয়। বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠান থেকেই সহায়তা নিচ্ছে ইসি।

নাগরিকদের স্মার্টকার্ড সরবরাহের ক্ষেত্রে আট বছর পেরিয়ে গেলেও এখনও সেই ৯ কোটি কার্ড বিতরণ করতে পারেনি ইসি। বর্তমানে দেশের ভোটার সংখ্যা ১১ কোটি ৯০ লাখ ৬১ হাজার ১৫৮ জন। এছাড়া ১৮ বছরের নিচের বয়সীদেরও জাতীয় পরিচয়পত্র দিচ্ছে ইসি। এক্ষেত্রে আরও প্রায় তিন কোটি নাগরিককে স্মার্টকার্ড দিতে হবে সহসাই। এজন্যই আইডিইএ দ্বিতীয় প্রকল্পটি (চলমান) নেয়া হয়েছিল।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০