বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান (১৯৪১-১৯৭১) বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবপ্রাপ্ত সাতজন মুক্তিযোদ্ধার একজন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান ঢাকার আগা সাদেক রোডের পৈতৃক বাসভবনে ১৯৪১ সালের ২৯ নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। ঢাকা কলেজিয়েট স্কুলে তিনি প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন।
এরপর তিনি পশ্চিম পাকিস্তানে সারগোদার পাকিস্তান বিমানবাহিনী পাবলিক স্কুলে ভর্তি হন। এ স্কুলে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করে পাকিস্তান বিমানবাহিনী একাডেমিতে যোগ দেন। তিনি ১৯৬৩ সালের জুন মাসে কমিশন লাভ করেন। কর্মস্থল ছিল পশ্চিম পাকিস্তানের রিসালপুর। পরের বছর পেশোয়ারে জেট পাইলট নিযুক্ত হওয়ার আগে করাচিতে জেট কনভার্সন কোর্স সাফল্যের সঙ্গে সম্পন্ন করেন।
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ছুটিতে এসে মতিউর রহমান স্থানীয়ভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করেন। ভৈরবে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে তিনি অংশ নিয়েছিলেন। পরে পারিবারিক চাপে মে মাসে তিনি পাকিস্তান চলে যান। সেখানে তিনি বিমান ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করেন। তার লক্ষ্য ছিল বিমান ছিনতাই করে সেটি নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেবেন।
২০ আগস্ট সকালে করাচির মশরুর বিমানঘাঁটি থেকে পাইলট অফিসার মিনহাজ রশীদের টি-৩৩ বিমান নিয়ে? উড?বার শিডিউল ছিল। মতিউর ছিলেন তার প্রশিক্ষক। টি-৩৩ বিমানের সাংকেতিক নাম ছিল ব্লু বার্ড। প্রশিক্ষণকালে মতিউর বিমানটির নিয়?ন্ত্রণ নিজ হাতে নিতে চেয়ে?ছিলেন, কিন্তু পারেননি। বিমানটি বিধ্বস্ত হয় ভারতীয় সীমান্তের কাছে থাট্টায়?। মতিউরের মৃতদেহ ঘটনাস্থলের কাছাকাছি পাওয়?া গেলেও মিনহাজের লাশের কোনো হদিস মেলেনি। মতিউর রহমানকে দাফন করা হয়? মশরুর বিমানঘাঁটির চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের কবরস্থানে। মতিউর রহমানের দেশপ্রেম ও আত্মদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয়? বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবে ভূষিত করা হয়। বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের পরিবারের সদস্যরা মাত্র একবার পাকিস্তানে তার কবর দেখতে যাওয়ার অনুমতি পেয়েছিলেন। ২০০৬ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পাকিস্তান সফরের উদ্দেশ্য ছিল এই বীরশ্রেষ্ঠের কবর বাংলাদেশে নিয়ে আসা এবং তা স্বাধীনতার ৩৫ বছর পর তা সম্ভব হয়। ২০০৬ সালের ২৪ জুন মতিউর রহমানের দেহাবশেষ পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনা হয়। প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া বিমানবন্দরে শহিদের দেহাবশেষ গ্রহণ করেন। পরদিন বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমানের দেহাবশেষ পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের পাশে রাজধানীর মিরপুরে শহিদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হয়। [সংগৃহীত]