সংকোচনমূলক মুদ্রানীতিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ হবে নাঃ মুস্তফা কে মুজেরী

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঊর্ধ্বমুখী মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে দিশাহারা সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক। নানা পদক্ষেপ নিয়েও নিয়ন্ত্রণ আসছে না। তাই মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কী করণীয় তা জানতে সরকারের পরামর্শে অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে বসা শুরু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তারই ধারাবাহিকতায় গতকাল বুধবার আলোচনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে যান বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা সংস্থার (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মুস্তফা কে মুজেরী ও বিআইডিএ’র বর্তমান পরিচালক বিনায়ক সেন।

তারা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে শুধু সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি প্রণয়ন করলে হবে না। এর সঙ্গে বাজারের সিন্ডিকেট বন্ধ করা এবং রাজস্ব নীতিতেও পরিবর্তন আনার পরামর্শ দেন সরকারকে।

মুস্তফা কে মুজেরী বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এরই মধ্যে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে, যার কারণে আগস্টে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে। তাই স্বল্পকালীন সময়ে এটা ধরে রাখতে হবে। তবে দীর্ঘমেয়াদি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে হলে শুধু সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি যথাযথ নয়। এর সঙ্গে সঙ্গে বাজারের সিন্ডিকেট বন্ধ করতে হবে। রাজস্বনীতির পরিবর্তনও আনতে হবে। রাজস্ব ব্যয় কমিয়ে আনতে হবে। একইসঙ্গে রাজস্ব আহরণ বাড়ানোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

তিনি বলেন, দেশের নির্বাচনকালীন আগামী তিন মাস অর্থনৈতিক অস্থিরতা আরও বাড়বে। সেক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তিন মাসের জন্য শট টার্ম প্ল্যান করতে হবে। একইসঙ্গে লং টার্ম প্ল্যান করতে হবে। তিনি (গভর্নর) আমাদের পরামর্শে একমত হয়েছে। ক্রমান্বয়ে পদক্ষেপ নেবেন বলে জানিয়েছেন।

ডলার দর বাজারভিত্তিক নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন এই অর্থনীতিবিদ। তিনি বলেন, গত এক বছর দেশের রিজার্ভ ধারাবাহিকভাবে কমছে। বর্তমানে দেশের রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় না বাড়ার কারণে ডলার সংকট রয়েছে। এক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ডলার রেট বাজার করার পরামর্শ দিয়েছি। কারণ রিয়েল ইফেকটিভ এক্সচেঞ্জ রেট বর্তমানে আমাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারণ করা রেটের চেয়েও বেশি। এক্ষেত্রে ডলারের দাম একসঙ্গে অ্যাডজাস্ট না করতে পারলেও দ্রুততার সঙ্গে করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ব্যাংক খাতে তিন ধরনের সমস্যা রয়েছেÑখেলাপি ঋণ, ব্যাংক খাতের ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ ও ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ। খেলাপি ঋণের ক্ষেত্রে স্ট্রং পলিটিকাল কমিটমেন্ট করতে হবে। একইসঙ্গে আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, বর্তমানে ব্যাংক খাতের মোট ঋণের ২৫ শতাংশ ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ রয়েছে। সেক্ষেত্রে এসব ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদ কীভাবে আদায় করা যায়, ব্যাংকগুলোকে টাইম বেসজড অ্যাকশন প্ল্যান দিতে হবে। বাস্তবায়ন করতে না পারলে এমন দুর্বল কয়েকটি ব্যাংকে একত্রে করে দেয়া যেতে পারে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের (জানুয়ারি-জুন) সময়ে মুদ্রানীতির পূর্বে পরামর্শ নিতে একাধিক অর্থনীতিবিদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক আপাতত অর্থনীতিবিদদের বক্তব্য শুনছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আগামী মুদ্রানীতি প্রয়োগে অর্থনীতিবিদদের পরামর্শ কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০