গাংনীর প্রত্বাতাত্তিক নিদর্শন সংরক্ষণে উদ্যোগ নেই

মজনুর রহমান আকাশ, গাংনী (মেহেরপুর): ব্রিটিশ বেনিয়াদের অত্যাচার-নিপীড়ন ও নির্যাতনের স্মৃতিচিহ্ন মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার বামুন্দি কাচারিবাড়ি ধ্বংস হতে চলেছে। সংস্কারের অভাবে একদিকে যেমন কাচারিবাড়িটির সৌন্দর্যহানি ঘটেছে তেমনি অন্যদিকে মাদকাসক্ত ও চোরেরা গুপ্তধনের আশায় বাড়ির মেঝে খুড়ে নিয়ে গেছে মূল্যবান মার্বেল পাথর ও ইট। অপরদিকে প্রভাবশালীরা বেশ কিছু সম্পত্তি দখল করে নিয়েছে। সংরক্ষণ ও সংস্কার করলে এটিও হতে পারে পর্যটককেন্দ্র হতে পারে বলে মতামত ব্যক্ত করেছেন এলাকাবাসী।

জানা যায়, দেশ বিভাগের আগে কুখ্যাত নীলকর জেম্স হীলের পতনের পর কলকাতার বিখ্যাত জমিদার বটকৃষ্ণ রায় চৌধুরী অত্র এলাকার ইজারা গ্রহণ করেন। চলতে থাকে তার জমিদারি কার্যক্রম। এসব কার্যক্রমের জন্য বামন্দী কাচারিবাড়িটিকে বেছে নেয় জমিদার বটকৃষ্ণ রায় চৌধুরী।

এখানে রয়েছে সুরক্ষিত শয়নকক্ষ, নাচঘর, কয়েদখানা এবং উঠানে রয়েছে মৃত্যুক‚প। প্রচলিত আছে জমিদারের খাজনা বা কর দিতে অপারগতা প্রকাশ

করলে কিংবা খাজনা দিতে দেরি হলে চাষিদের নির্মম নির্যাতন শেষে মৃত্যুক‚পে নিক্ষেপ করা হতো।

জমিদারের নায়েব গোমস্তাদের কুদৃষ্টি থেকে রেহায় পায়নি এলাকার সুন্দরী রমণীরাও। তাদের ধরে এনে আমোদ-প্রমোদ শেষে হত্যা করা হতো।

আবার অনেক রমণীকে বাইজি বা রক্ষীতা হিসেবে রাখা হতো। কেউ যদি এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করত তাহলে তাকেও হত্যা করে মৃতুক‚পে নিক্ষেপ করা হতো। কাচারিবাড়ির মূল ফটকের পশ্চিম পাশে রয়েছে ঘোড়ার ঘর।

পরে জমিদার বটকৃঞ্চ রায় চৌধুরীর কাছ থেকে ক্রয়সূত্রে জমিদারির মালিক হন কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার খেমেরদিয়াড়ের বিনোদ বিহারী বাবু। দেশ স্বাধীন পর্যন্ত তারা জমিদারি পরিচালনা করেন। দেশ বিভাগের আগ থেকেই কাচারিবাড়িটির দু’টি কক্ষে কাচারিকার্যক্রম পরিচালিত হতো। সে নিয়মেই স্বাধীনতা-পরবর্তী সময় থেকেই বামুন্দি ইউপি ভ‚মি অফিসের কার্যক্রম চলছে ওই কাচারিবাড়িতে।

গাংনী সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) নাজমুল আলম জানান, কাচারিবাড়ির আওতায় ১৬ একর জমিতে ৩.১৫ একর আমবাগান, ধানি জমি ০.৮৪ একর, পুকুর ২.২১ একর, বাড়ি ০.৫৩ একর ও ০.৩০ একর জমিতে তহসিল অফিস অবস্থিত। আমবাগান ও আমবাগান-সংলগ্ন কিছু জমিতে রাজস্ব বিভাগ ইজারা প্রদান করেছে। হাটের পাশে ১ একর ৩০ শতক জমি স্থানীয় প্রভাবশালীরা দবরদখল করে নিয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর অনেকেই গুপ্তধনের সন্ধানে কাচারিবাড়ির বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর করা হয়। সংস্কার আর সংরক্ষণের অভাবে বাড়িটির স্থাপনাগুলো দিন দিন ধ্বংসের দিকে যাচ্ছে। স্থানীয় প্রভাবশালীদের ইন্ধনে মাদকাসক্তরা

ভবনের ইট কাঠ খুলে নিয়ে যায়। ইতিহাস ঐতিহ্য সমৃদ্ধ কাচারিবাড়িটি দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে এখনও অনেক পর্যটক আসেন। স্কুল-কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আসেন শিক্ষা সফরে। আবার বিশেষ দিনগুলোতে অনেকেই এখানে আসেন সময় কাটাতে এলাকার মানুষের প্রাণের দাবি ইতিহাসের সাক্ষী কাচারিবাড়িটি সংস্কার আর সংরক্ষণ করে এখানেও পর্যটনকেন্দ্র ঘোষণা করা হোক।

বিষয় ➧

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০