ই-সিগারেট আমদানি বন্ধে পদক্ষেপ নিন

মানুষের সিগারেট গ্রহণ বা ধূমপানের প্রধান কারণ হচ্ছে নিকোটিনের প্রতি আসক্তি। এ আসক্তি থেকেই মানুষ ধূমপানে আসক্ত হন। একসময় আমাদের দেশে বিড়ির প্রচলন ছিল বেশি। ধূমপায়ীদের আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ধূমপানের ধরনেও পরিবর্তন এসেছে। একসময়কার হুকা ও গড়গড়ার পর আসে সিগারেট। সেই সিগারেটেরও রয়েছে নানা প্রকারভেদ। ধূমপায়ীদের আকৃষ্ট করতে কোম্পানিগুলো নানা সময়ে নানা ফ্লেভারের সিগারেট বাজারে ছাড়তে থাকে। এই প্রক্রিয়ার সর্বশেষ সংস্করণ হচ্ছে ই-সিগারেট বা ভেপ। বিশ্বের সবচেয়ে বড় সিগারেট কোম্পানিগুলোর একটি ফিলিপ মরিচ বিপুলভাবে এটির প্রচলন ঘটিয়েছে। বাংলাদেশের সিগারেট বাজারের বড় অংশের দখল রয়েছে ব্রিটিশ আমেরিকান ট্যোবাকো বাংলাদেশের (বিএটিবি) হাতে। এ কোম্পানিটিও কৌশলে ই-সিগারেট বাজারে আনতে চাচ্ছে বলে গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে। জনস্বার্থে তাদের এ ধরনের অপতৎপরতা বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়া আবশ্যক।

দৈনিক শেয়ার বিজে গতকাল ‘কৌশলে ই-সিগারেট বাজারে আনতে চায় বিএটি?’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনের তথ্যমতে, সম্প্রতি নতুন ধরনের পণ্য আমদানির অনুমতি চেয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে বিএটি। তবে সেই নতুন পণ্যটি, তার নাম উল্লেখ করা হয়নি। আবেদনে এমন ধোঁয়াশা রাখায় দেশে তামাক নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে যুক্ত বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, এভাবে কৌশলে তারা দেশের বাজারে ই-সিগারেট বা ভেপ বাজারজাত করতে চাই। তারা আধুনিক পণ্যের দোহাই দিয়ে তরুণ তামাকসেবীদের টার্গেট করে এ পণ্যের প্রচলন ঘটাতে চাচ্ছে বলে ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। কোম্পানিটিকে এসব পণ্য আমদানি ও বাজারজাত করার সুযোগ দেয়া হলে জনস্বাস্থ্য রক্ষায় জাতিসংঘের কাছে সরকার যে অঙ্গীকার করেছে, তা অর্জন সম্ভব হবে না।

২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন। এরও অনেক আগে ২০০৪ সালে বাংলাদেশ জাতিসংঘের ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন ট্যোবাকো কন্ট্রোল শীর্ষক সনদে সাক্ষর করে তামাক নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে উদ্যোগ নেয়ার অঙ্গীকার করে। সেই অঙ্গীকার বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ২০০৫ সালে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন করে, যা পরে ২০১৩ সালে সংশোধন করা হয়। যুগের চাহিদা অনুযায়ী, নতুন করে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সংশোধনীর খসড়ায় ই-সিগারেট বা ভেপ নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে কৌশলে ছাড়পত্র নিয়ে ধূমপানের এসব আধুনিক উপকরণ দেশে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

এমন পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত বিষয়টি ভালোভাবে খতিয়ে দেখা। প্রকৃত অর্থেই যদি বিএটি এসব পণ্য আমদানি করতে চায়, তাহলে সরকারের উচিৎ হবে সে উদ্যোগ থামিয়ে দেওয়া এবং আমদানির অনুমোতি না দেওয়া। সরকার জনস্বাস্থ্য রক্ষায় তার অঙ্গীকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবে বলেই আমাদের প্রত্যাশা।

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০