শ্রমিক অধিকার হরণ হলে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা দেবে যুক্তরাষ্ট্র এমন খবর প্রকাশিত হয়েছে শেয়ার বিজসহ দেশের গণমাধ্যমে। সংবাদের ভাষ্য: বিশ্বজুড়ে শ্রমিক সংগঠনের নেতা, শ্রমিক অধিকারের পক্ষের কর্মী, শ্রমিক সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে যে বা যারা হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করবে, তাদের জবাবদিহির আওতায় আনবে যুক্তরাষ্ট্র। এ জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে বাণিজ্য, ভিসা নিষেধাজ্ঞাসহ যুক্তরাষ্ট্রের কাছে যত ধরনের ব্যবস্থা রয়েছে, প্রয়োগ করা হবে। বৃহস্পতিবার দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ ঘোষণা দেন।
বিশ্বব্যাপী শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করার প্রত্যয় নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বৃহস্পতিবার প্রথমবারের মতো একটি মেমোরেন্ডামে সই করেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ-সংক্রান্ত বক্তব্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ এবং প্রবৃদ্ধি নিয়ে আলোচনায় এসব শ্রমিকের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। দুর্ভাগ্য হচ্ছে, বিশ্বের অনেক স্থানে শ্রমিকদের এ সুযোগ দেয়া হয় না। শুধু তা-ই নয়, কিছু স্থানে শ্রমিকদের মানসম্পন্ন জীবনযাপনকেও অস্বীকার করা হয়, তাদের হয়রানি করা হয় এবং ক্ষতি করা হয়। এমনকি তাদের অধিকার চাইতে গেলে হত্যার শিকার হতে হয়। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কয়েকটি দেশের নাম উল্লেখ করে বলেছেন, ওই দেশগুলোয় অসংখ্য সাহসী মানুষ সংগঠিত হওয়ার জন্য লড়াই করে যাচ্ছে, যেন শ্রমিকরা নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাজ করতে পারেন। আমাদের দেশের নাম উল্লেখ না করলেও আমাদের দেশের একজন শ্রমিককে নিয়ে কথা বলেছেন তিনিÑআমরা বাংলাদেশি গার্মেন্ট ও অধিকারকর্মী কল্পনা আক্তারের মতো মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাই। কল্পনা আক্তার জানিয়েছেন, শুধু যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের কারণে তিনি জীবিত আছেন। কারণ যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস তার পক্ষে দাঁড়িয়েছে।
বৈদেশিক মুদ্রা আহরণে আমাদের বড় ক্রেতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। রানা প্লাজা ধস ও তাজরীন ফ্যাশনস অগ্নিকাণ্ডসহ কয়েকটি ঘটনার পর বিদেশি ক্রেতাদের জোট পোশাক শ্রমিকদের নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতে কাজ করেছে। তারা আমাদের পোশাক খাতে অনেক কিছুই জেনে সম্প্রতি মজুরি নির্ধারণ নিয়ে শ্রমিক অসন্তোষ ও শ্রমিকের প্রাণহানি ক্রেতাদের উদ্বেগ বাড়িয়েছে। পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র শ্রমিকদের স্বার্থ সুরক্ষা এবং শ্রমমান উন্নয়নে কাজ করলে উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই। সংগঠনটি কেন এমন দাবি করেছে, আমাদের বোধগম্য নয়। যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের মিত্ররা আমাদের তৈরি পোশাক খাতের বড় ক্রেতা। আমরা মনে করি, শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণে বৈশ্বিক উদ্বেগ বিবেচনায় নিতে হবে। এটি নিয়ে যেন ক্রেতাদের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি না হয়। ২০১৮ সালে সর্বশেষ নি¤œতম মজুরি ধরা হয় ৮ হাজার টাকা, ২০২৩ সালে নি¤œতম মজুরি সাড়ে ১২ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ওই সময় এবং বর্তমান সময়ে ডলারের বিনিময় মূল্য তুলনা করে দেখা গেছে, শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নতুন বেতন কাঠামোয় ১ ডলার কমে গেছে। যেহেতু পোশাকের মূল্য নির্ধারণ করা হয় ডলারে; তাই এ তুলনা খুবই প্রাসঙ্গিক। যুক্তরাষ্ট্র লিঙ্গ বৈষম্য, মজুরি বৈষম্যসহ শ্রমিকদের উৎপাদনশীলতা ও স্বার্থরক্ষায় কাজ করে। শ্রমিক স্বার্থ অন্যের অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়, এটি আমাদের তাদের জাতীয় নিরাপত্তা এবং পররাষ্ট্রনীতির বিষয়। এর মাধ্যমে দেশটি সতর্কবার্তা দিয়েছে। আমাদের ব্যবসায়ী, সরকার শ্রমিকের ন্যায্য পাওনা নিশ্চিত কাজ করবে বলে আমরা আশাবাদী।
মজুরি নির্ধারণে বৈশ্বিক উদ্বেগ বিবেচনায় নিন
