শ্রমিকদের অপরাধী তকমা দেওয়া নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ

শেয়ার বিজ ডেস্ক: বাংলাদেশ সরকার পোশাকশ্রমিক ও ট্রেড ইউনিয়নের আন্দোলন এবং সার্বিক তৎপরতাকে অপরাধী কর্মকাণ্ড বলে তকমা দিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র এটা নিয়ে উদ্বিগ্ন। একই সঙ্গে আগামী জাতীয় নির্বাচন যথাসময়ে শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হবে বলেও আশা করে দেশটি।

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র বিভাগের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার সোমবার (২০ নভেম্বর) নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিক যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শ্রম অধিকার নীতি ও বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট নিয়ে মিলারকে প্রশ্ন করেন। ওই সাংবাদিক জানতে চান, যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শ্রম অধিকার নীতিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন সম্প্রতি উল্লেখ করেছেন, যারা শ্রমিকের অধিকার লঙ্ঘন করবে, হুমকি দেবে বা শ্রমিকদের ভীতি প্রদর্শন করবে তারা প্রয়োজনে নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হতে পারে। তিনি বাংলাদেশের গার্মেন্ট কর্মী নেত্রী কল্পনা আক্তারের সংগ্রামের কথাও উল্লেখ করেন। বাংলাদেশে মজুরি বৃদ্ধি আন্দোলনে সাম্প্রতিক দিনগুলোয় পাঁচজন গার্মেন্ট শ্রমিক নিহত হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র কি কোনো ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে?

উত্তরে মিলার বলেন, গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দেওয়া বক্তৃতা থেকে বোঝা যায়, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত শ্রম অধিকারের সুরক্ষা এবং প্রসারে যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে বিশ্বজুড়ে সরকার, শ্রমিক, শ্রমিক সংগঠন, ট্রেড ইউনিয়ন, সুশীলসমাজ এবং প্রাইভেট সেক্টরের সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত রেখেছে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য জায়গায় যুক্তরাষ্ট্র তার এ তৎপরতা অব্যাহত রাখবে। আপনার প্রশ্নের জবাবে আমি আবারও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পুরো বিবৃতির বিষয়েই আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করব।

বাংলাদেশে শ্রমিকদের বিক্ষোভে প্রাণহানি এবং সহিংসতার ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে এই মুখপাত্র আরও বলেন, বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভে সহিসংতা, শ্রমিক এবং ট্রেড ইউনিয়নের বৈধ কার্যক্রমকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করার মতো বিষয়গুলোয় আমরা নিন্দা জানাচ্ছি। শ্রমিক ও ট্রেড ইউনিয়নগুলোর বিরুদ্ধে চলমান দমনপীড়ন নিয়েও আমরা উদ্বিগ্ন।

মিলার বলেন, এ ক্ষেত্রে আমাদের মূলনীতি হলো—কোনো ধরনের সহিসংতা, প্রতিশোধপরায়ণতা ও ভীতি প্রদর্শন ছাড়াই শ্রমিকরা যাতে স্বাধীনভাবে সাংগঠনিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ এবং মালিকপক্ষের কাছে নিজেদের দাবি তুলে ধরতে পারে সেই অধিকার সরকারকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব জায়গায় এ মৌলিক মানবাধিকারগুলো নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলেও উল্লেখ করেন মিলার।

বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলাদা আরেকটি প্রশ্নের উত্তরে মিলার বলেন, আপনি ঠিকই বলেছেন। আমরা এক দলের ওপর অন্য দলকে প্রাধান্য দিই না। বাংলাদেশিরা নিজেরাই যা চায়, আমরাও তাই চাই। আর তা হচ্ছে, শান্তিপূর্ণভাবে পরিচালিত অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। সরকার, বিরোধী দল, সুশীলসমাজ এবং অন্য অংশীদারদের সঙ্গে আমাদের সম্পৃক্ততা অব্যাহত থাকবে। আমরা সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য তাদের আহ্বান জানাব সেখানে তারা যেন বাংলাদেশের জনগণের প্রত্যাশা পূরণে একসঙ্গে কাজ করে, যাতে বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণভাবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।

বাংলাদেশের তিনটি প্রধান রাজনৈতিক দলের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লুর সাম্প্রতিক চিঠির বিষয়ে আরেকজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি নির্বাচন হওয়ার কথা। ৩০টির বেশি রাজনৈতিক দল ঘোষণা করেছে তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। শুধু বিরোধী দল বিএনপিই বয়কটের ডাক দিয়েছে। ৩০টির বেশি রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে হতে যাওয়া এ নির্বাচনকে কি যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধিত্বশীল এবং অংশগ্রহণমূলক বলে বিবেচনা করবে, নাকি বিএনপির নির্বাচন বয়কটের সিদ্ধান্ত নির্বাচন প্রক্রিয়ার অন্তর্ভুক্তি এবং বৈধতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ বাড়াবে?

উত্তরে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র বিভাগের মুখপাত্র বলেন, আমি আপনার প্রশ্নের প্রশংসা করি। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয়ে আমাকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করা সত্ত্বেও তেমন কিছু করা থেকে আমি বিরত থাকব। আমি আগেও বলেছি, বাংলাদেশে আমাদের লক্ষ্য বরাবরের মতো একই রয়েছে। আর তা হচ্ছে, অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করা যা শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০