নিজস্ব প্রতিবেদক: ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এইডিস মশা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে না পারলে সামনের বছরগুলোয় রোগটি আরও ব্যাপক আকারে দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। ঢাকার নিপসম মিলনায়তনে গতকাল শনিবার এপিডেমিওলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে এমন আশঙ্কার কথা প্রকাশ পেয়েছে। ডেঙ্গু রোগের বাহক এইডিস মশা ঢাকার বাইরে পাওয়া যাচ্ছে, যার ফলে সামনে এই রোগটি আরও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়তে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকার চেয়ে বাইরের হাসপাতালগুলোয় ডেঙ্গু রোগী ভর্তির সংখ্যা কয়েকগুণ।
বৈঠকে এপিডেমিওলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘গ্রাম পর্যায়ে কী হবে, এটা চিন্তার বিষয়। সিটি করপোরেশন এলাকায় অনেক সচেতনতামূলক কাজ করা হয়েছে। এইডিস ইজিপ্টি নিয়ে অনেক আলোচনা থাকলেও এইডিস অ্যালবোপিকটাস নিয়ে কেউ ভাবছেই না। অথচ ধানগাছ, কলাগাছের পাতা, গাছের কোটর, এমনকি কচুগাছের পাতায়ও এইডিস অ্যালবোপিকটাসের লার্ভা হয়।’
রোগতত্ত্ববিদ সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘সংখ্যা (আক্রান্ত ও মৃত্যু) কিন্তু অনেক কিছু বলে না। আগে মশা ও আক্রান্ত রোগী শহরের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, সন্দেহজনক রোগীর সংখ্যাও কম ছিল, এখন সারা বাংলাদেশে ১৭ কোটি মানুষই সন্দেহজনক। সুতরাং যদি তখন এক শতাংশ হয়ে থাকে, আর এখন যদি এক শতাংশ হয়Ñসেটার ফলাফল কী দাঁড়াতে পারে, সেটা আমরা কল্পনা করতে পারি?’
রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) সাবেক এ পরিচালক বলেন, ‘বেইজলাইনে যে সংখ্যাটা আসবে, সেটাও কিন্তু অনেক বেশি হওয়ার আশঙ্কা আছে। আমি কথাটা আবার জোর দিয়ে বলতে চাই, আশঙ্কা রয়েছে। সুতরাং সতর্কবাণী হিসেবে রোগতত্ত্বের মানুষ হিসেবে এই ফোরাম বলতে চায় এটা (ডেঙ্গুর প্রকোপ) বড় আকারে আসার আশঙ্কা রয়েছে, যদি না আমরা এখনই শক্তিশালী ও সমন্বিত পদক্ষেপ নিই।’
কভিড মহামারির সময় করা জাতীয় পরামর্শক কমিটি সরকারকে নানা পরামর্শ দিয়েছে। এখন কভিড আক্রান্ত রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা নেই বললেই চলে। অন্যদিকে আগে সারাবছরে ডেঙ্গুতে ৫০০ রোগী হতো না, এখন সেখানে প্রতিদিনই ৫০০-র বেশি রোগী পাওয়া যাচ্ছে। অথচ ডেঙ্গু প্রতিরোধের জন্য কোনো পরামর্শক কমিটি গঠন করা হয়নি। সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, মহামারিবিদদের সংগঠন সরকারকে যেকোনো প্রয়োজনে সহায়তা করতে তৈরি। ডেঙ্গুর জন্য আমরা একটা পরামর্শক কমিটি দেখিনি, আমি জানি না সেখানে আমরা অবদান রাখতে পারতাম কি না। আমরা আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে আহ্বান জানাচ্ছি, এপিওডেমিলজি অ্যাসোসিয়েশন তৈরি, জনস্বাস্থ্যের দৃষ্টিতে বৈজ্ঞানিক তথ্য, তত্ত্ব, বিশ্লেষণÑযেকোনো ধরনের তথ্য দিতে আমরা তৈরি আছি।’
আইসিডিডিআরবি’র গবেষক ডা. শফিউল আলম বলেন, ডেঙ্গুর প্রকোপ কমাতে হলে এই রোগের জীবাণুবাহী মশা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা প্রয়োগ করতে হবে। মশা নিধনে লার্ভিসাইডিং ভালো কাজে আসবে। তবে দীর্ঘদিন একই কীটনাশক ব্যবহারের ফলে মশা এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরি করে ফেলে। ফলে জৈব প্রযুক্তি ব্যবহার করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে বিটিআই ভালো সমাধান।’
বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ডা. মো. আখতারুজ্জামান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শক ডা. এএসএম আলমগীর, এপিডেমিওলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক সোহেল রেজা চৌধুরী প্রমুখ সভায় অংশ নেন।