রাজধানীর বায়ুদূষণ রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিন

বায়ুদূষণে রাজধানী অনেক দিন ধরেই প্রথম সারিতে আছে। প্রতিকারমূলক নানা ব্যবস্থা নিলেও অবস্থানের হেরফের হয়নি বরং সাম্প্রতিক সময়ে শীর্ষে আসীন হয়েছে। বায়ুদূষণে ঢাকা শীর্ষেÑগণমাধ্যমে প্রকাশিত এ সংবাদ নজরে আনলে উচ্চ আদালত মন্তব্য করেন, ‘সন্তানরা বিদেশে থাকে, তাই দেশের বায়ুদূষণ নিয়ে মাথাব্যথা নেই পরিবেশ অধিদপ্তর ও ঢাকা সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের।’ সোমবার বায়ুদূষণ নিয়ে জারি করা রুলে ঢাকার বায়ুদূষণ রোধে আদালতের ৯ দফা নির্দেশনা বাস্তবায়নে সময়সীমা বেঁধে দেন হাইকোর্ট। এসব নির্দেশনা বাস্তবায়ন করে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্টদের অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

নগরবিদরা অনেক দিন ধরেই বলে আসছেন, রাজধানীর বায়ুদূষণের বড় কারণ ধুলাবালি। রাজধানীসহ দেশের বায়ুদূষণের অবস্থা ক্রমেই খারাপ হচ্ছে, এটি নতুন নয়। তবু বায়ুদূষণের উৎস দিন দিন বাড়ছে। দুঃখজনক হলো, বায়ুদূষণ প্রতিরোধে দীর্ঘমেয়াদি উদ্যোগ নেই। কে না জানে, বায়ুদূষণে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হয়। বিশেষ করে শিশুদের স্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাস বিঘ্নিত হওয়ার পাশাপাশি নানা শারীরিক জটিলতা দেখা দেয়। গবেষকরা বলেন, বাতাসে ভারী ধাতু ও সূক্ষ্ম বস্তুকণা বেড়ে গেলে ক্যানসার, শ্বাসকষ্ট ও স্নায়ুজনিত সমস্যা বেড়ে যায় এবং বুদ্ধিমত্তা কমে।

বায়ুদূষণ রোধের মূল দায়িত্ব রাষ্ট্রীয় সংস্থা পরিবেশ অধিদপ্তরের। দূষণ ঠেকাতে সংস্থাটি বিভিন্ন এলাকায় ইটভাটার বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করেছে। অনুমোদিত ইটভাটা চলছেই। পরিবেশবান্ধব পদ্ধতিতে ইট তৈরিতে সহায়তা করতে হবে। যানবাহনের দূষণ নিয়ন্ত্রণে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। আর দূষণের অন্যতম উৎস নির্মাণকাজের ধুলা নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগও তেমন নেই।

দুই বছর আগে বায়ুদূষণ ঠেকাতে রাজধানীর গাবতলী, যাত্রাবাড়ী, পূর্বাচল, কেরানীগঞ্জ, টঙ্গীসহ বিভিন্ন পয়েন্টে পানি ছিটাতে নির্দেশ দিয়েছেন উচ্চ আদালত। এর আগে বায়ুদূষণ রোধে ৯ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন আদালত। ওই নির্দেশনায় ছিলÑঢাকা শহরে মাটি, বালি ও বর্জ্য পরিবহনকৃত ট্রাক ও অন্যান্য গাড়িতে মালামাল ঢেকে রাখা; কালো ধোঁয়া নিঃসরণকৃত গাড়ি জব্দ করাসহ সড়ক পরিবহন আইন অনুসারে গাড়ির চলাচল ও সময়সীমা নির্ধারণ; পরিবেশ লাইসেন্স ব্যতীত চলমান সব টায়ার কারখানা বন্ধ করা প্রভৃতি। যদিও এর খুবই বাস্তবায়িত হয়েছে। ফলে দূষণের মাত্রা না কমে উল্টো বেড়েছে।

দূষিত বায়ুর শহরের তালিকায় বারবার ঢাকার নাম উঠে আসায় নগরবাসী শঙ্কিত। শুধু ঢাকা নয়, দেশের সব বড় শহরে বায়ুদূষণের চিত্র প্রায় একই। এ থেকে উত্তরণে পরিবেশ দূষণকারী ইটভাটা, কলকারখানা ও অধিক পুরোনো যানবাহন বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। পরিবেশ অধিদপ্তর ও ঢাকা সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের সন্তানরা বিদেশে থাকে বলে তারা এ বিষয়ে উদাসীন; উপমা হিসেবে বললেও আদালতের পর্যবেক্ষণ অমূলক নয়। আদালতের মন্তব্যে সাধারণ মানুষের বক্তব্যই প্রতিধ্বনিত হয়েছে। উচ্চ আদালত দুই সপ্তাহের মধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্টদের অগ্রগতি প্রতিবেদন দিতে বলেছেন। আমরা আশা করি, সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো

সমন্বিতভাবে কাজ করবে। আত্মকেন্দ্রিক মনোভাব পোষণ না করে আমাদের কর্তাব্যক্তিরা নিজ দায়িত্বপালনে যত্নশীল হলে দূষণমুক্ত দেশ গড়া সম্ভব।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০