হামিদুর রহমান: ফিচার ফোনের চাহিদা থাকলেও ডলার সংকটে উচ্চমূল্য, এলসি খুলতে না পারার পাশাপাশি শিপমেন্টে বাড়তি ব্যয়সহ নানা সংকটে উৎপাদনে জোগান দিতে পারছে না মোবাইল ফোন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর। এর প্রভাবে দেশে ১০ মাসে ফিচার ফোনের উৎপাদন কমেছে প্রায় ৩৭ লাখ ৬৫ হাজার।
বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) তথ্যমতে, ২০২২ সালের মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১০ মাসে ফিচার ফোন উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ৬৭ লাখ ৭১ হাজার। বিপরীতে ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে ফিচার ফোন উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ৩০ লাখ ৪ হাজার ৭০০। অর্থাৎ ২০২২ সালের ১০ মাসের তুলনায় ২০২৩ সালে ১০ মাসে ফিচার ফোনের উৎপাদন কমেছে প্রায় ৩৭ লাখ ৬৫ হাজার।
বিটিআরসি’র তথ্যমতে, ২০২২ সালের মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১০ মাসে ফিচার ফোন উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ৬৭ লাখ ৭১ হাজার। এর মধ্যে-২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসে ফিচার ফোন উৎপাদন হয়েছিল ১৪ লাখ ৩২ হাজার ২০১, নভেম্বরে ১ লাখ ২৪ হাজার ৫০১, অক্টোবরে ১৪ লাখ ৩২৩, সেপ্টেম্বরে ১৬ লাখ ৩৯ হাজার ৫১৭, আগস্টে ২১ লাখ ৪৩ হাজার ৪৪৯, জুলাইয়ে ১৪ লাখ ৪৬ হাজার ৭৮১, জুনে ২০ লাখ ১৪ হাজার ৯২০, মে মাসে ১৬ লাখ ৬৯ হাজার ৫১০, এপ্রিল ২০ লাখ ৬৫ হাজার ৭৯১, মার্চ মাসে উৎপাদন হয়েছিল ১৮ লাখ ৩৪ হাজার।
এদিকে ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে ফিচার ফোন উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ৩০ লাখ ৪ হাজার ৭০০। এর মধ্যে-২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে ফিচার ফোন উৎপাদন হয়েছে ১৬ লাখ ৯৬ হাজার ৪৯৭, সেপ্টেম্বরে ১৬ লাখ ৮৬ হাজার ৭৯২, আগস্টে ১৪ লাখ ১ হাজার ৬৬৬, জুলাইয়ে ১৭ লাখ ২৮ হাজার ৬৮০, জুন মাসে ৮ লাখ ৪৮ হাজার, মে মাসে ৪ লাখ ৯২ হাজার ৮৫৪, এপ্রিলে ৮ লাখ ৮ হাজার ২২, মার্চে ১১ লাখ ৭৭ হাজার ৪০০, ফেব্রুয়ারিতে ১৬ লাখ ৬৮ হাজার ৩৫৯ আর জানুয়ারিতে ফিচার ফোন উৎপাদন হয়েছে ১৪ লাখ ৯৫ হাজার ৮২৪।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান কাউন্টার পয়েন্ট রিসার্চে প্রতিবেদনে দেখা গেছে, বিশ্বব্যাপী স্মার্টফোন সরবরাহ কমলেও স্বল্প মূল্যের ফিচার ফোন বিক্রি আগামী বছরগুলোয় ব্যাপক বাড়বে বলে মনে করছেন। ফিচার ফোনের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় বাজার বলে মনে করা হচ্ছে ভারতকে। এরপরই আছে বাংলাদেশ ও নাইজেরিয়া।
জানতে চাইলে সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার শেয়ার বিজকে বলেন, ‘মানুষের একটা পরিবর্তন ঘটেছে। চার্জিং বেকআপের ফলে অনেক স্মার্টফোন ব্যবহারকারী গ্রাহকও এখন ফিচার ফোন ব্যবহার করছে। আরও একটি বড় বিষয় হচ্ছে এটি সব শ্রেণির মানুষের কাছে সহজলভ্য। বাজারে এক হাজার টাকায়ও ফিচার ফোন কিনতে পাওয়া যায়।
মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার দরপতনের কারণে একদিকে কাঁচামাল আমদানি ব্যয় বেড়েছে অন্যদিকে ডলার ঘাটতি থাকায় এলসি খোলা কঠিন হয়েছে। পাশাপাশি হ্যান্ডসেট উৎপাদনেও ভ্যাট বেড়েছে। অর্থাৎ সব দিক থেকেই এই শিল্পে প্রভাব পড়েছে বলে জানিয়েছে ব্যবসায়ীরা।
তারা আরও জানায়, একদিকে দেশের দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি অন্যদিকে হ্যান্ডসেট সাশ্রয়ী না হয়ে প্রাইস বেড়েছে। মানুষ এখন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যর চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। খুব প্রয়োজন ছাড়া কেউ ফোন কিনছে না, এক্সচেঞ্জ করছে না। ফলে হ্যান্ডসেটের বাজারেও বড় রকম প্রভাব পড়েছে। সবদিক বিবেচনায় মানুষের এখন ফোন ক্রয়ের আগ্রহ কমেছে। তবে ফিচার ফোনের চাহিদা আগের তুলনায় বাড়তে শুরু করেছে। এর কারণ হিসেবে অনেক স্মার্টফোন গ্রাহকও এখন চার্জিং বিকল্প হিসেবে ফিচার ফোন ব্যবহার করছে। আবার সব শ্রেণির মানুষের কাছে ফিচার ফোন সহজলভ্য হওয়াই এর ব্যবহার বাড়ছে।
মোবাইল ফোন ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের জয়েন্ট সেক্রেটারি ও এডিসন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকারিয়া শাহিদ শেয়ার বিজকে বলেন, ‘মোবাইল ফোনের বাজারের অবস্থা খুবই নাজুক। প্রতিনিয়ত বাজারে ক্রেতা কমছে। বাজারে ভালো মডেলের ফোন এনেও ক্রেতাদের সাড়া মিলছে না। তবে ফিচার ফোনের বাজার স্মার্ট ফোনের তুলনায় কিছুটা ভালো। ডলার সংকট, বাড়তি শিপমেন্ট চার্জসহ এলসি খুলতে না পারাই নানামুখী চাপে সাপ্লাই চেইন টা অনেক গ্যাপটা অনেক বড় হয়ে যাচ্ছে। ফলে গত বছরের তুলনায় এবছরের ওভারওল ৩০ শতাংশ ও ফিচার ফোন ১৫ শতাংশের মতো গ্রোথ আছে।’