নদী রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুসৃত হোক

 

প্রাচীন বাংলার সমৃদ্ধির পেছনে রয়েছে এ অঞ্চলের নদীগুলোর অবদান। নদী এখানে ছড়িয়ে আছে জালের মতো। তাই বলা চলে, নদী দখল করে নদীমাতৃক বাংলার প্রাণসূত্রকেই হত্যা করা হচ্ছে। খাল দখল করে কী ফল পাচ্ছি আমরা, তা সবার জানা। একটু ভারী বৃষ্টি হলেই রাজধানী ও মহানগরীগুলো জলাবদ্ধতায় নাকাল হয়। দেশে নদীগুলোর ভূমিকা অনেকটা সেরকম। দখল করে, বর্জ্য ফেলে নদীগুলো সরু করে ফেলায় আগের মতো পানি ধারণ করতে পারে না সেগুলো। সময়-অসময়ে ধ্বংসাত্মক বন্যার এটি বড় কারণ। স্থানীয় বৃষ্টি বা উজান থেকে আসা পানি নদী উপচে ভাসিয়ে দিচ্ছে বিস্তীর্ণ জনপদ, ফসলিজমি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অব্যাহত দখলেরই অনিবার্য পরিণতি নদীর এ বিধ্বংসী রূপ। এ ধরনের বন্যাকে তাই ‘মনুষ্যসৃষ্ট’ বলেন তারা।

একসময় নৌযোগাযোগকে গুরুত্ব দেয়া হতো। নদীবন্দরগুলো ছিল ব্যস্ত। নদীপথে পণ্যপরিবহন এখনও সাশ্রয়ী। কিন্তু নাব্য রক্ষায় নেয়া ব্যবস্থা পর্যাপ্ত নয়। নদী ও নৌপথ যথাযথ গুরুত্ব পেলে নদী রক্ষা ও এর সংস্কার গুরুত্ব পেত। দখলকেও প্রশ্রয় দেয়া হতো না।

দেশ রক্ষায় নদী বাঁচানোর আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সোমবার তার কার্যালয়ের মন্ত্রিসভাকক্ষে ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর নাব্য রক্ষা ও দূষণ রোধে প্রণীত মহাপরিকল্পনার আলোকে সমীক্ষা প্রতিবেদন উপস্থাপন এবং সংশ্লিষ্ট প্রকল্প গ্রহণের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে এক সভায় এ কথা বলেন। সভায় প্রধানমন্ত্রী কয়েকটি নির্দেশনা দেন। তিনি বলেন, নদীর ধারে যেসব শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠে, সেগুলোর বর্জ্য সাধারণত নদীতে যায়। আমরা যা-ই করি না কেন প্রথমেই বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কথা আমাদের মনে রাখতে হবে।

আমাদের প্রকৃতি, পরিবেশ, জলবায়ু, কৃষি, যোগাযোগব্যবস্থায় নদ-নদীর অবদান বলে শেষ করার নয়। মুক্তিযুদ্ধের সেøাগানেও ছিল নদীÑ তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা মেঘনা যমুনা। নদীতে মাছ ধরা, নৌকায় নদী পারাপার, জেলে-মাঝিদের জীবনধারা এখন বাস্তব থেকে চিত্রশিল্প হয়ে দেয়ালে শোভা পাচ্ছে।

নদীভাঙন ও প্লাবন প্রাকৃতিক হলেও এতে মানুষের ভূমিকাও রয়েছে। সেসব বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। নদীনালায় ইঞ্জিনচালিত যানের পোড়া তেল, গৃহবর্জ্য, প্লাস্টিক বোতল, পলিথিনসহ অপচনশীল বর্জ্য ফেলা বন্ধ করতে হবে। অবৈধ দখল থেকে নদীকে রক্ষা করতে হবে। নদীবন্দর সংস্কার এবং পরিকল্পিতভাবে নদীনালায় ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ করা জরুরি। শিল্পবর্জ্যরে দূষণ থেকে নদী রক্ষায় শিল্পকারখানায় ২৪ ঘণ্টা ইটিপি (ইফ্লুয়েন্ট ট্রিমেন্ট প্লান্ট) চালু রাখা, হাওর-বাঁওড়-বিল ও পতিত নদীগুলোর উৎসমুখের বাধা সরিয়ে নিভূমিতে জলের প্রবাহ সচল রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাগুলো যথাযথভাবে অনুসৃত হলে দেশ রক্ষা সম্ভব বলে আমরা বিশ্বাস করি।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০