পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ উৎপাদন ও দেশে বিদ্যুতের চাহিদা পূরণের উদ্দেশ্যে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে জোর দিচ্ছে সরকার। এর আওতায় দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যক্তি উদ্যোগের পাশাপাশি বাণিজ্যিক ভিত্তিতেও সোলার প্রকল্প গড়ে তোলা হচ্ছে। সমস্যা হলো, এসব প্রকল্পে উৎপাদন ব্যয়ের লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না কোনোভাবেই। গতকালের শেয়ার বিজে প্রকাশিত ‘সৌরবিদ্যুতের দাম নিয়ে অস্বস্তিতে সরকার’ শিরোনামের রিপোর্টটি এমন তথ্যই প্রকাশ করেছে। দেশে সৌরবিদ্যুতের জনপ্রিয়তা বেড়ে চলেছে। এর সম্ভাবনাও ইতোমধ্যে উম্মোচিত আমাদের সামনে। এটাও সহজে অনুধাবনযোগ্য, নবায়নযোগ্য এ বিদ্যুতসেবাকে সাশ্রয়ী করা না গেলে বিপুলসংখ্যক মানুষের কাছে তা পৌঁছে দেওয়া কঠিন।
বিদ্যুৎ বিভাগের হিসাবমতে, বর্তমানে সরকারি ও বেসরকারি মিলে মোট উৎপাদিত বিদ্যুতের মাত্র ২ শতাংশ আসে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে, যার মধ্যে সৌরবিদ্যুৎ থেকে আসে মাত্র ১৯৫ মেগাওয়াট। দেশে এখনও এ খাতে সৌরবিদ্যুতের অবদান কম থাকলেও এর সম্ভাবনা কোনোমতে কম নয়। তাছাড়া নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহার ও পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎব্যবস্থা গড়ে তুলতে সৌরবিদ্যুতই সবচেয়ে কার্যকর উপায়। এ কারণে সমগ্র বিশ্বেই সৌরবিদ্যুতে আগ্রহ বাড়ছে।
বাংলাদেশ সরকারও সৌরবিদ্যুতের গুরুত্ব অনুধাবন করছে। সরকারি ও বেসরকারি খাতে গড়ে ওঠা সোলার পার্কগুলো এরই প্রমাণ বহন করে। বিদ্যুৎ খাতের মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২১ সালের মধ্যে এক হাজার ৪০৩ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এটি অর্জনের জন্য এ খাতে সরকার প্রদত্ত সুযোগ-সুবিধা আরও বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে আমরা ভারতকে অনুসরণ করতে পারি। সৌরবিদ্যুতের উন্নয়নে ব্যাপক গবেষণা অব্যাহত রাখায় কম ব্যয়ে বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদনে সক্ষম হয়েছে দেশটি।
ভারতের মতো বাংলাদেশে পতিত জমির পরিমাণ অবশ্য খুব বেশি নয়। সোলার প্যানেল স্থাপনে পর্যাপ্ত জমির অভাব আমাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সেক্ষেত্রে সোলার প্যানেলের কাজে ব্যবহৃত জমির বহুমুখী ব্যবহার নিয়ে ভাবতে হবে। নদী ও সাগরের চরাঞ্চলকেও সোলার প্রকল্পের কাজে লাগানো যায়। এসব সত্তে¡ও সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পে সরকারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এর উৎপাদন ব্যয়। এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশে এ ব্যয় সর্বাধিক বলে জানা যাচ্ছে। সেবাটি পেতে এদেশের গ্রাহকদের স্বভাবতই জোগাতে হচ্ছে সবচেয়ে উচ্চমূল্য। এর মধ্যেও প্রতিবছর উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার। এখন সরকারের উচিত হবে সোলার প্যানেলের ব্যয় হ্রাসে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া।
দেশে সোলার প্যানেল সরঞ্জামের প্রায় পুরোটাই আমদানিনির্ভর। এর মধ্যে কিছু উপকরণ যদি দেশেই তৈরি করা যেত, তাহলে এর উৎপাদন ব্যয় হ্রাসে তা ভ‚মিকা রাখতে পারতো। এ খাতের উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে ঋণদানের ব্যবস্থাও সুফল দেবে। নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে আরও সহজলভ্য করতে সোলার প্যানেল ও মডিউল আমদানিকে শুল্কমুক্ত রাখার পাশাপাশি সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পে ভর্তুকি জোগানোর বিষয়টি বিবেচনা করা প্রয়োজন।
Add Comment