নিজস্ব প্রতিবেদক: চলতি অর্থবছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ না পাওয়ায় বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ নেয়ার প্রবণতা বেড়েছে। প্রথম পাঁচ মাসে (১ জুলাই থেকে ২৯ নভেম্বর) ৩১ হাজার ২৭৪ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছে সরকার। একই সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে কোনো ঋণ নেয়নি সরকার। উল্টো আগের নেয়া ঋণের ২৭ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। এতে এই পাঁচ মাসে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকারের নিট ঋণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩ হাজার ৬৩৯ কোটি টাকায়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে গত তিন মাস ধরে টাকা ছাপিয়ে সরকারকে ঋণ দেয়া পুরোপুরি বন্ধ রেখেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে সরকারের ঋণ এবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকনির্ভর হয়ে পড়েছে। তবে তারল্য সংকটের কারণে সরকারকে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। ফলে স্বল্পমেয়াদি ট্রেজারি বিল অকশন করেই ঋণ নিতে বাধ্য হচ্ছে সরকার।
জানা যায়, চলতি অর্থবছরে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ৩২ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ নেয়া হবে ৮৬ হাজার ৫৮০ কোটি টাকার। আর স্বল্পমেয়াদি ঋণ নেয়া হবে ৪৫ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলছে, গত ২৯ নভেম্বর শেষে সরকারের ব্যাংকঋণের মোট স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৯৭ হাজার ৪১৭ কোটি টাকায়। গত ৩০ জুন শেষে যা ছিল ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৭৭৪ কোটি টাকা। এই হিসাবে অর্থবছরের প্রথম ৪ মাস ২৯ দিনে সরকারের নিট ব্যাংকঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৬৩৯ কোটি টাকায়। অথচ গত ১ জুলাই থেকে ২৬ অক্টোবর পর্যন্ত ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকারের নেয়া ঋণের স্থিতি ঋণাত্মক ধারায় ছিল।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ সময়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে নেয়া ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৬৭ হাজার ৪১২ কোটি টাকায়, যা গত ৩০ জুন শেষে ছিল ২ লাখ ৩৬ হাজার ১৩৮ কোটি টাকা। ফলে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে সরকারের ঋণ বেড়েছে ৩১ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা। অন্যদিকে এ সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নেয়া ব্যাংকঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩০ হাজার ৪ কোটি টাকায়, যা গত ৩০ জুন শেষে ছিল ১ লাখ ৫৭ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ কমেছে ২৭ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকা। এই ঋণের পুরোটাই পরিশোধ করা হয়েছে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরের শুরুতেও সরকারকে টাকা ছাপিয়ে ঋণ দেয়া হলেও সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরÑটানা দুই মাস টাকা ছাপিয়ে কোনো ঋণ দেয়নি সরকার। অর্থাৎ জুলাই ও আগস্ট ট্রেজারি বিল ও বন্ডের ডেভেলভমেন্ট হলেও সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বরে কোনো ডেভেলভমেন্ট করা হয়নি। উল্টো এ সময়ে ট্রেজারি বিলের মেয়াদপূর্তিতে ৩২ হাজার ১৪৮ কোটি টাকার ঋণ পরিশোধ হয়েছে। এতে নিট ডেভেলভমেন্টের স্থিতিও কমে আসছে। গত ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত নিট ডেভেলভমেন্টের স্থিতি কমেছে প্রায় ২২ হাজার ৩৯৯ কোটি টাকা। অথচ গত অর্থবছরের একই সময় পর্যন্ত নিট ডেভেলভমেন্টের স্থিতি ২২ হাজার ৪১৩ কোটি টাকা বেড়েছিল।
গত অর্থবছরও ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকার রেকর্ড ১ লাখ ২২ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছিল। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরাসরি সরবরাহ করে ৯৭ হাজার ৬৮৪ কোটি টাকা, যা নতুন টাকা ছাপিয়ে দেয়া হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, গত অর্থবছরে সরকারের ঋণ কেন্দ্রীয় ব্যাংকমুখী ছিল। অনেকটাই নতুন টাকা সৃষ্টি করে দেয়া হয়েছে, যা মূল্যস্ফীতিতে কিছুটা হিট করেছে। এটা ইতোমধ্যে আমরা বন্ধ করেছি। তিনি বলেন, হার্ড পাওয়ার মানি সৃষ্টি করলে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে। এজন্য সর্বশেষ কোনো অকশনে ডেভেলভমেন্ট করে সরকারকে কোনো ঋণ দেয়া হয়নি। এ প্রক্রিয়াটা সরকারকেও জানিয়ে দেয়া হয়েছে। সরকারকে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হবে। ব্যাংকগুলো যতটুকু পারে ততটুকুই দেবে।