জাহাজ মালিকদের একক সংগঠনই প্রত্যাশা

সংগঠন করার অধিকার নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার। অবশ্য এখন সংগঠনগুলো নৈতিক ও মৌলিক অধিকার রক্ষায় কাজ করে কি না, তা নিয়ে সাধারণ মানুষের প্রশ্ন রয়েছে। আমাদের সংবিধানের ‘মৌলিক অধিকার’ শীর্ষক অনুচ্ছেদে সংগঠনের স্বাধীনতা স্পষ্ট বলা হয়েছে। ৩৮ নম্বর অনুচ্ছেদের ভাষ্য: জনশৃঙ্খলা ও নৈতিকতার স্বার্থে আইনের দ্বারা আরোপিত যুক্তিসঙ্গত বাধা-নিষেধ সাপেক্ষে সমিতি বা সংঘ গঠন করিবার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের থাকিবে। তবে শর্ত থাকে যে, কোন ব্যক্তির উক্তরূপ সমিতি বা সংঘ গঠন করিবার কিংবা উহার সদস্য হইবার অধিকার থাকিবে না, যদি (ক) উহা নাগরিকদের মধ্যে ধর্মীয়, সামাজিক এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করিবার উদ্দেশ্যে গঠিত হয়; (খ) উহা ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষ, জš§স্থান বা ভাষার ক্ষেত্রে নাগরিকদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করিবার উদ্দেশ্যে গঠিত হয়; (গ) উহা রাষ্ট্র বা নাগরিকদের বিরুদ্ধে কিংবা অন্য কোন দেশের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী বা জঙ্গী কার্য পরিচালনার উদ্দেশ্যে গঠিত হয়; বা (ঘ) উহার গঠন ও উদ্দেশ্য এই সংবিধানের পরিপন্থী হয়। দুঃখের বিষয়, আমাদের সংগঠনগুলোর কর্মকাণ্ড প্রশ্নবিদ্ধ। আমাদের প্রধানমন্ত্রী ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের অভিভাবক পদ থেকে একাধিকবার নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন সংগঠনের কর্মীরা সংগঠনবিরোধী কাজে জড়িত থাকার কারণে।

এখন সংগঠনগুলো কার স্বার্থে কাজ করে, তা আর কারও অজানা নয়। দেখা যায়, এক ব্যক্তির পকেটে কয়েকটি সংগঠন। আমর কারও সাংবিধানিক অধিকারকে অস্বীকার করছি না। সংগঠন জনগণের ভোগান্তির কারণ যেন না হয়, সে ব্যাপারে গুরুত্ব দেয়ার কথা বলি।

চট্টগ্রামে লাইটার জাহাজ মালিকদের নতুন সংগঠনের আত্মপ্রকাশ করেছে। মাদার ভেসেলে করে আমদানিকৃত পণ্য ছোট জাহাজ বা লাইটার ভেসেলে করে দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিবহন করা হয়। এ ধরনের জাহাজের সংখ্যা প্রায় দেড় হাজার। অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন রুটে চলাচলকারী লাইটারেজ জাহাজ মালিকদের সংগঠন ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল (ডব্লিউটিসি)। সংগঠনটির কার্যক্রমের সমালোচনা করে জাহাজ মালিকরা ইনল্যান্ড ভেসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব চিটাগং নামে নতুন সংগঠন গঠন করেছেন। এই সংগঠনের মাধ্যমে জাহাজ বরাদ্দ নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে পণ্য পরিবহন করা হবে।

দেশের অভ্যন্তরে গম, চিনি, সার, সিমেন্ট ক্লিংকারসহ বিভিন্ন শিল্প-কারখানার কাঁচামালসহ অন্তত দশ কোটি টন পণ্য হ্যান্ডলিং হয়ে থাকে। ফলে এসব জাহাজের স্বাভাবিক চলাচলের ওপর দেশের পণ্য পরিবহন নেটওয়ার্ক পুরোপুরি নির্ভরশীল।

লাইটারজে জাহাজ মালিকদের নতুন সংগঠন নৌপথে স্বাভাবিক যান চলাচল অব্যাহত রাখতে সহায়তা করবে, এটি নিশ্চিত করে বলা যায় না।  নতুন সংগঠন না করে জাহাজ মালিক এবং আমদানিকারকদের বিভিন্ন সময়ের বিরোধ, জাহাজের কৃত্রিম সংকট এবং বসে থাকা জাহাজের সারি দীর্ঘ হলেও পছন্দের জাহাজকে একাধিক ট্রিপ দেয়া প্রভৃতি অনিয়ম বন্ধে কাজ করা সম্ভব। অনিয়ম চাঁদাবাজি চললে আয়ের মতোই নতুন সংগঠন ভাগাভাগি বিরোধই বাড়াবে। নতুন সংগঠন গঠন না করে লাইটারেজ জাহাজ মালিকদের সংগঠন ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলকে (ডব্লিউটিসি)  শক্তিশালী করা এবং নিয়ম মেনে সেটিকে পরিচালনা করা গেলে সেবাগ্রহীতাদেরস্বার্থ রক্ষিত হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০