অনিয়মিত প্রান্তিক হিসাব প্রকাশে শঙ্কায় বিনিয়োগকারীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম: প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত হয়েছিল একমি পেস্টিসাইডস লিমিটেড। প্রথম দিকে নিয়মিত প্রান্তিক হিসাব প্রকাশ করলেও ৯ মাস ধরে নিয়মিতভাবে প্রান্তিক হিসাব প্রকাশ করছে না। ফলে গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশিত না হওয়ায় বিনিয়োগকারীরা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাচ্ছে না। এমনকি প্রতিষ্ঠানটি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে নেয়া ৩০ কোটি টাকার হিসাবও দিচ্ছে না। এছাড়া লভ্যাশ ঘোষণা ও এজিএম আয়োজন না হওয়ায় শেয়ার ধারণ ও প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে।

বিএসইসি সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) ২০২১ সালে আইপিওর মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে ৩০ কোটি টাকা উত্তোলনের অনুমোদন দেয় একমি পেস্টিসাইডস লিমিটেড। আর উত্তোলিত টাকা দিয়ে ফ্যাক্টরি বিল্ডিং ও অন্যান্য নির্মাণ, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি স্থাপন, নতুন যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম ক্রয়, আইপিওর ব্যয় প্রভৃতি কাজে অর্থ ব্যয় করার জন্য ২৪ মাস সময় নির্ধারণ করে দিয়েছিল। কিন্তু কোম্পানিটি গত ৩১ জুলাই পর্যন্ত আট কোটি ৭১ লাখ ৪৭ হাজার ৫৬১ টাকা ব্যবহার করেছে। অপরদিকে আইপিও ফান্ডের টাকা ১০ কোটি ১৪ লাখ টাকায় ভবন নির্মাণ, দুই কোটি টাকায় বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি স্থাপন, নতুন যন্ত্রপাতি ও সরঞ্জাম ক্রয় ও অধিগ্রহণে ১০ কোটি ৫০ লাখ এবং সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা ন্যাশনাল ফিন্যান্সের লোন পরিশোধের কথা ছিল। অথচ এসব কার্যক্রম সম্পূর্ণ করেনি। উল্টো কোম্পানিটি গত জুলাই মাসের পর থেকে আইপিও তহবিল ব্যবহারের তথ্য কোম্পানিটি এখনও তাদের ওয়েবসাইটে হালনাগাদ করেনি।

সর্বশেষ অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, সদ্যসমাপ্ত হিসাববছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে (জুলাই-মার্চ) একমি পেস্টিসাইডসের শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৮৬ পয়সা, আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল এক টাকা ২৯ পয়সা। আর সর্বশেষ তৃতীয় প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) কোম্পানিটির ইপিএস হয়েছে ১৭ পয়সা এবং আগের হিসাববছরের একই সময়ে যা ছিল ৩১ পয়সা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে শেয়ারপ্রতি আয় কমেছে ৪৫ শতাংশেরও বেশি। গত ৩১ মার্চ শেষে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ১৮ টাকা ৩৫ পয়সায়। এছাড়া ৩০ জুন সমাপ্ত ২০২১-২২ হিসাববছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের পাঁচ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিয়েছে একমি পেস্টিসাইডস। তখন কোম্পানিটির ইপিএস ছিল এক টাকা ৫১ পয়সা এবং আগের হিসাববছরে যা ছিল দুই টাকা ১২ পয়সা। অপরদিকে ২০২১ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত অর্থবছরের জন্য কোনো লভ্যাংশ দেয়নি। অথচ পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত হওয়ার আগে ৩০ জুন ২০২০ সালে প্রতিষ্ঠানটির নিট মুনাফা ছিল ১৯ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। একই সময়ে শেয়ারপ্রতি আয় ছিল দুই টাকা এবং পুঞ্জীভূত মুনাফার পরিমাণ ছিল ৬৬ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।

একমি পেস্টিসাইডসের একাধিক বিনিয়োগকারী এ প্রতিবেদককে বলেন, গত জুলাই পর্যন্ত আইপিও ফান্ড থেকে আইপিও ইস্যু বাবদ এক কোটি ৪৪ লাখ ২২ হাজার ৫৬১ টাকা ব্যয় করছে। ভবন নির্মাণে অগ্রিম সাত কোটি ২৭ লাখ অগ্রিম দেয়। অর্থাৎ ২৪ মাসে আইপিও তহবিলের টাকার ৭১ শতাংশেরও বেশি ব্যবহার করতে পারেনি। এছাড়া আইপিও টাকা ডিপোজিটের ভুল তথ্য উপস্থাপন, গত দুই বছরের ব্যবসা সম্প্রসারণের পরিবর্তে সংকোচন হয়েছে। ফলে প্রতিষ্ঠানের আয় ও মুনাফা কমেছে। এতে বিনিয়োগকারীদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে, তা কমিশনের উচিত তদন্ত করা।

এ বিষয়ে জানার জন্য একমি পেস্টিসাইডস লিমিটেডের এমডি রেজাউর রহমান সিনহার মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পরে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান অর্থ কর্মকর্তা সেলিম রেজার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমাদের অডিট কার্যক্রম শেষ না হওয়ায় প্রান্ত্রিক ও বার্ষিক হিসাব প্রকাশে দেরি হচ্ছে। ব্যস্ততা দেখিয়ে প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে দিয়ে শ্যামলী অফিসে চায়ের দাওয়াত ও ডিনারের দাওয়াত দেন।

বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক রেজাউল করিম শেয়ার বিজকে বলেন, আইপিওতে আসার সময় প্রোসপেক্টাসে ডিসক্লোজারের উল্লেখ থাকে। যদি আইপিওর টাকা ব্যবহারের ভিন্ন খাতে ব্যবহার করে তা আগে এজিএমের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের কাছে অনুমোদন নিতে হয়, অথবা সময়ের মধ্যে কাজ শেষ না হলে সময় বাড়ানোর আবেদন করতে পারে। আর আইপিওর তহবিল ব্যবহারের বিষয়গুলো আমাদের সংশ্লিষ্ট বিভাগ আছে, তারা এগুলো দেখাশোনা করে। তখন হয়তো তারা বিষয়গুলো ভালোভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে। এছাড়া অডিটর ভুল তথ্য দিলে তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশন দেয়া হবে।

উল্লেখ্য, ২০২১ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত একমি পেস্টিসাইডসের অনুমোদিত মূলধন ১৫০ কোটি ও পরিশোধিত মূলধন ১৩৫ কোটি টাকা। বি ক্যাটেগরি কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের ৩১ শতাংশ ৮০ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগাকারীদের ২৫ দশমিক ১০ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৪৩ দশমিক ১০ শতাংশ শেয়ার মালিকানা রয়েছে। আর শেয়ারটি ফ্লোর প্রাইসে আটকে আছে। তবে বøক মার্কেটে ব্যাপকহারে প্রতিদিন শেয়ার লেনদেন হচ্ছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০